School Closed

তালা পড়লো রাহারহাটি জুনিয়র হাইস্কুলে

রাজ্য জেলা

School Closed

প্রবীর দাস
বসিরহাট ২নম্বর ব্লকের রাহারহাটি জুনিয়র হাইস্কুল(সহ শিক্ষামূলক) বন্ধ হয়ে গেছে। ৩ জন শিক্ষক ও ১ জন দপ্তরী নিয়ে চলতো স্কুল। গত ৬-৮মাস আগে উৎসশ্রী প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে শিক্ষকরা অন্যত্র চলে গেছেন। এমতবস্থায় ছাত্র ছাত্রীরা নিরুপায় হয়ে অনেক দূরবর্তী স্থানের স্কুলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। শনিবার সকালে রাহারহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল খাঁ খাঁ করছে স্কুল চত্বর। দোতলা বিশিষ্ট স্কুলের গেটে তালা ঝুলছিল। ঘড়িতে তখন সকাল ১০ টা ৫৯মিনিট। স্কুল ঘর এখন মৌমাছিদের নিরাপদ আশ্রয়। একমাত্র মহিলা দপ্তরী আসেন। যদিও এদিন তিনি তখনও এসে পৌঁছান নি। স্থানীয় এক মহিলা জানালেন আজ আর হয়ত আসবেন না। সোমবার দেখা পাওয়া যেতে পারে। জানালেন শিক্ষক নেই, ছাত্র ছাত্রীও নেই। উনি আসেন এবং স্কুলের ঘর বারান্দা পরিস্কার করে চলে যান। এইতো সেদিন মৌমাছির চাক ভাঙা হলো।


অন্যদিকে সন্দেশখালি-২নম্বর ব্লকের পূর্ব বৌঠাকুরানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ জন শিক্ষক আছেন। ৩১মার্চ ২জন শিক্ষক অবসর নেবেন। ১ জন শিক্ষকের ভরসায় অবিভাবকরা কী আর তাদের ঘরের ছেলে মেয়েদের পাঠাবেন? এবার এটিও বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন বাগদা ব্লকের বাগদা পূর্ব সার্কেলের বাঁশঘাটা জুনিয়র হাইস্কুল প্রায় বন্ধের পথে। এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়া তালিকায় দেখা যাচ্ছে তেমনি আশঙ্কার ছবি। যদিও গণশক্তি এই তালিকা যাচাই করে নি। তালিকায় দেখা যাচ্ছে বাঁশঘাটা জুনিয়র হাইস্কুল যেখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। এই স্কুলে গত ২০২১ সালে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪ জন। ২০২২সালে বেড়ে হয় ৭জন। বর্তমান ২০২৩ সালে ফের সংখ্যাটা ৪এ দাঁড়ায়। শিক্ষক আছেন ২জন। প্যারাটিচার অশিক্ষক কর্মচারী ০। যেমন বরানগরে কুটিঘাট মহাকালি পাঠশালায় বর্তমানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ০। যদিও শিক্ষক আছেন ২জন, ১ জন প্যারাটিচার।


পাশাপাশি বারাকপুর ১ সার্কেলের সুকাই সাউ এফ পি স্কুলে বর্তমানে ২জন ছাত্র ছাত্রী। শিক্ষক ২জন। তালিকায় আরও ভয়ঙ্কর ছবি বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকার মণ্ডলগাঁথি উর্দু প্রাইমারি(এস সি জি)স্কুলের। সেখানে খাতায় কলমে বর্তমানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৩জন থাকলেও শিক্ষক, প্যারাটিচার, অশিক্ষক কর্মচারী একজনও নেই। একই চিত্র বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ সার্কেল ১এর শিবপদ হালদার স্মৃতি বিদ্যালয়ের। সেখানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ২০২১এ ছিল ২জন। ২০২২-২৩সালে০। শিক্ষক ৪ জন,অশিক্ষক কর্মচারী ১জন।
সরকারি তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে ৮২০৭টি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হতে চলেছে। উত্তর ২৪পরগনায় যার সংখ্যা ৫৪০। তার মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়(১ম-৪র্থ) ৪০৩টি এবং উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়(৫ম-৮ম) ১৩৬টি। নবম -দশম শ্রেণির ১টি।

জানা গিয়েছে ওই সমস্ত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, সহকারি শিক্ষক, প্যারাটিচার, ডেপুশনে আছেন ১৫৭৭ জন। শিক্ষাকর্মী ৯৭জন। এহেন তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে এ বিপিটিএ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সঞ্জীব মণ্ডল প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের কঙ্কালসার চেহারার জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন। সাথে সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষা নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, উত্তর ২৪পরগনার ৫৭টি সার্কেল। বিশেষ করে বারাকপুর মহকুমা, প্রত্যন্ত সুন্দরবন,সীমান্তবর্তী এলাকার চিত্র ভয়ঙ্কর। সরকারের কোন মানসিকতা নেই। মাদ্রাসাগুলির অবস্থা তথৈবচ। মিড ডে মিল আছে বলে এখনও যা একটু টিঁকে আছে। সেই কারণে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি, গোটা দেশ সহ এই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে সঁপে দেওয়া চলবে না।

 সাধারণের যে শিক্ষা ব্যবস্থা তার প্রতি রাষ্ট্রকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাজ্যকেও সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের আরও দাবি বাজেটের ১০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে। সরকারি তদারকি বাড়াতে হবে। পরিকাঠামো আরও বেশি করে তৈরী করতে হবে। পরিদর্শন ব্যবস্থা এই সময়কালে কার্যত ভেঙে পড়েছে। যার কারণে একটি অংশের শিক্ষক শিক্ষিকা ইচ্ছামতো আসেন এবং চলে যান। তিনি বলেন, পরিদর্শন ব্যবস্থাকে আরো জোরদার এবং কার্যকরী করে তুলতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment