Salim on Modi's Promises

শ্রমজীবীর অধিকার কেড়ে ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মোদী, বললেন সেলিম

রাজ্য জেলা

সিআইটিইউ বাঁকুড়া জেলা দশম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে মহম্মদ সেলিম।

মধুসূদন চ্যাটার্জি: বাঁকুড়া

নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সমানে কেড়ে নেওয়া হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার। ভোটের আগে রাজ্যে এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মোদী। কিন্তু ভোটের পর আর দেখা যাবে না।
শনিবার বাঁকুড়া লালবাজার সেকেন্ড ফিডারোড এলাকায় সিআইটিইউ বাঁকুড়া জেলা দশম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।  
এদিনই মোদী নদীয়ার তাহেরপুরে জনসভায় দূরসংযোগে ভাষণ দেন। পরে তাঁর সোশাল মিডিয়ায় এসআইআর নিয়ে মতুয়াদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোস্ট করেন। তাঁদের বলেন যে সিএএ’র মাধ্যমে নাগরিকত্বের অধিকার পেয়েছেন। ভোটে জয়ী করার আবেদনও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সিএএ নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে উৎসাহের বদলে আতঙ্কই প্রবল। এসআইআর পর্বে সেই আতঙ্ক স্পষ্ট ধরাও পড়েছে। তৃণমূল এবং বিজেপি মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করে গিয়েছে, বলেছেন তাঁরাই।  
সেলিম বলেন, ‘‘মোদী এসেছেন, সামনে বিধানসভা নির্বাচন আছে। এখন উত্তরবঙ্গে গিয়ে চা শ্রমিকদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেবেন, মতুয়াদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেবেন। এখানে এলেও নানা প্রতিশ্রুতি দেবেন। কিন্তু ঘটনা হল যে ২০১৪ সালের পর থেকে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে কোনও অধিকার দেওয়া হয়নি। যে সমস্ত অধিকার ছিল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সিআইটিইউ শ্রমকোড বিরোধী আন্দোলন করছে তা শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষা করার জন্যই। তাই সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়াই চালাতে হবে তাঁদের অধিকারের দাবিতে।’’ 
এদিন কয়েক হাজার শ্রমিক সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল বেশি। 
সেলিম এই সমাবেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি অন্য কোথাও এত মহিলার উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে দেখিনি।’’ সমাবেশে বিড়ি, মুটিয়া, বাস, লৌহ ইস্পাত সহ বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বাঁকুড়া শহরের বহু মানুষ। শনিবার সম্মেলন শুরু হয়েছে বাঁকুড়া শহরের ধর্মশালায় কমরেড বাসুদেব আচারিয়া নগর ও কমরেড কিঙ্কর পোষাক মঞ্চে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। 
এদিন সমাবেশে সেলিম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সরকারি টাকা খরচ করে প্লেনে এসে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। সামনে ভোট তাই আসা যাওয়া। ভোট পেরিয়ে গেলে আর দেখা যাবে না। শোষণ তীব্র আকার নিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়েনি।  ২০২২ সালে সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যে বিড়ি শ্রমিকরা এক হাজার বিড়ি বাঁধলে ২৭৮ টাকা মজুরি পাবেন। এখন এই বাঁকুড়া জেলায় হাজার প্রতি বিড়ির মজুরি ২০০ টাকা। কেন বাড়ল না শ্রমিকদের মজুরি? তিনি জানান, অনেক লড়াই করে বিড়ি শ্রমিকরা তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য হেলথকার্ড চালু করাতে পেরেছিলেন। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে নতুন করে কোন হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়নি।’’
রাজ্যের তৃণমূল সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে শ্রমিক কল্যাণ বাবদ যে টাকা তোলে তা শ্রমিকদের কল্যাণে খরচ হয় না। না। খেলা, মেলা, আর মন্ত্রী, অফিসারদের আমোদ প্রমোদে খরচ হয়। 
সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ সব দেখছেন। দেখছেন কয়লা, বালি লুটের টাকা এ ঘাট ও ঘাট হয়ে কালিঘাটে যাচ্ছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস’র টবে মমতা ব্যানার্জি গাছ তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে। এখানে মন্দির, মসজিদের রাজনীতি আমদানি করা হয়েছে। এতে কি গরিব, শ্রমজীবী মানুষের কোন কল্যাণ হবে? বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি পুড়িয়ে মেরে ফেলল মানুষকে। ধর্মের পোষাক পড়ে কি এভাবে খুন, পকেটমারি করা যায়? এর বিরদ্ধেই সমস্ত মানুষকে এককাট্টা হতে হতে হবে। ন্যায়, অন্যায় কে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সত্যের দৃষ্টিতে দেখতে হবে।’’  
এদিন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক দেবলীনা হেমব্রম, সিআইটিইউ’র রাজ্য নেত্রী ইন্দ্রানী মুখার্জি, জেলা সম্পাদক সৌমেন্দু মুখার্জি, অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি অভয় মুখার্জি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তি।

Comments :0

Login to leave a comment