চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ কোন অবস্থাতেই বাগিচা শ্রমিকদের লুট হতে দেবে না। যে কোন মূল্যে জয়েন্ট ফোরামের নেতৃত্বে চা শ্রমিকদের স্বার্থে রাজ্য সরকার ও মালিক পক্ষের যৌথ প্রতারনা রুখবেই। দাবি না মিটলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। চা বাগান শ্রমিকদের ভূমি অধিকার এবং কর্পোরেটের হাতে চা বাগানের জমি হস্তান্তরের প্রতিবাদ জানিয়ে চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের আহ্বানে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়িতে মিত্র সম্মিলনী সভাগৃহে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক সমাজের নাগরিক কনভেনশন আওয়াজ উঠেছে ‘আমাদের জল, জমি, জঙ্গল, কাজের মজুরি নিয়ে খেলা বন্ধ করুন, অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি ও ন্যায্য জমির অধিকার সুনিশ্চিত করুন’।
চা বাগিচা শ্রমিকদের জমির পাট্টা, ন্যূনতম মজুরি সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে পাহাড়, ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা শ্রমিকরা ফের ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে চলেছেন বলেই কনভেনশন থেকে জয়েন্ট ফোরাম নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। আগামী ১৪মার্চ উত্তরবঙ্গের সর্বত্র চা বাগানগুলিতে বাগিচা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবার আগে বাগানের গেটে এক ঘন্টার গেট সভায় যোগদান করবেন এবং পরবর্তীতে আগামী ১৪এপ্রিল সব জায়গার বিএলআরও দপ্তরগুলিতে বিপুল চা শ্রমিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত করার কর্মসূচী কনভেনশন থেকে ঘোষনা করেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। উদ্দেশ্যে সমাজের সর্বাংশে বাগিচা শ্রমিকদের আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। যা চা শ্রমিকদের লড়াই আন্দেলনের ক্ষেত্রে একটা নতুন দিশা দেখাতে চলেছে। এদিন পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার চা বাগান সহ তরাই ও ডুয়ার্স থেকেও শ্রমিক প্রতিনিধিরা কনভেনশনে যোগ দিতে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। এদিনের কনভেনশনে বাগিচা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে সরব হন নেতৃবৃন্দ। জোরালো আলোচনা হয়েছে জমির পাট্টার বিষয়টি নিয়ে।
রাজ্য সরকারের চা বাগানের জমি পূঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার শ্রমিক বিরোধী নোটিফিকেশন, বিলের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের বাস্তু জমির পাট্টার আইনসঙ্গত দাবিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ফাটকাবাজ পুঁজিপতিদের হাতে চা বাগানের প্রায় ৬০০ একর জমি তুলে দেবার সরকারি সিদ্ধান্তের সর্বাত্মক বিরোধীতা করে জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আমল বলেন, জমির পাট্টার দাবিতে যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে রাস্তায় রয়েছে চা বাগিচা শ্রমিকেরা। জমির পাট্টার অধিকার না দেওয়া হলে চা শ্রমিকদের জীবনের কোন উন্নতি হতে পারে না। চা শ্রমিকদের জমির পাট্টার দাবি দীর্ঘদিনের। সেই পাট্টাকে নিয়ে সরকারের যে নোংরা রাজনীতি তার বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। চা বাগানের জমির পাট্টার কাগজ বিলিবন্টনের নামে আদপে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সরকারের আরো এক নতুন ভাঁওতাবাজি। মুখে একরকম বলছেন কার্যক্ষেত্রে অন্যরকম হচ্ছে। সবটাই অস্পষ্ট। বিলি করা পাট্টার কাগজে কোন খতিয়ান নম্বর নেই। যাকে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্টভাবে কতটুকু জমি, কোথায় জমি সেবিষয়ে পাট্টাতে কোনই উল্লেখ নেই। পাট্টা দেবার প্রসিডিওর সরকারকেই সুনির্দিষ্ট করতে হবে। জমি চিহ্নিত করে পাট্টা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে চা সুন্দরী প্রকল্পের বিরোধীতা করেন তিনি।
সরকারের লিজ হোল্ড ল্যান্ডগুলিকে ফ্রি হোল্ড করার বিলের তীব্র বিরোধীতা করে তিনি বলেন, বাংলায় চা শিল্পকে ধ্বংস করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এক কথায় সব দিক থেকেই লুট করা হচ্ছে বাগিচা শ্রমিকদের। সরকারের জমি আইন বদলে গেছে। নতুন আইনে সরকার চাইছে সব চা জমি বিক্রি করে দাও। আবাস যোজনা, ১০০দিনের কাজের মতো, চা বাগানের জমি লুট করার চক্রান্ত চলছে। দার্জিলিঙ পার্বত্য অঞ্চল থেকে শুরু করে চা এলাকার বিধাননগর থেকে কুমারগ্রাম, আসাম পর্যন্ত কোন জায়গায় রাজ্য সরকারের নতুন আইন অনুযায়ী চা বাগানের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। এই জমি চা বাগান এলাকায় বসবাসকারী মানুষের। ৭৫বছর স্বাধীনতার পরেও চা বাগিচা এলাকায় বসবাসকারী সাধারন মানুষ জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২৩২টাকা দৈনিক হাজিরায় মাসে ৭হাজার টাকায় শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, রুটিরুজি, চিকিৎসার খরচ বহন করে জীবিকা নির্বাহ করা যাচ্ছে না। এক দেশে এক নীতি কার্যকরী করতে হবে। লড়াই সংগ্রামের পথে যদি কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্নাটকে বাগিচা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বাগিচা শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি চালু করতে হবে। ২০১৪সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো রাজ্য সরকার। কিন্তু আট বছর পরে ২০২৩সালেও ন্যূনতম মজুরি উপেক্ষিত। রাজ্য সরকার ও মালিকপক্ষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রাপ্য মজুরি না দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেবার চেষ্টা চলছে। যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
সমন পাঠক, তেজকুমার টোপ্পো, সুনীল রাই, বীনা সামাদ, বিকাশ সেন রায়, সুখমইত ওঁরাও —কে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী কনভেনশনের কাজ পরিচালনা করেন। গৌতম ঘোষ, ডি কে গুরুঙ, ফিলিপ খালকো, গোপাল প্রধান, বিশ্বজিৎ গুহ সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন।
Comments :0