ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী দেওয়াই সার, একটিও আসনে জেতা তো দূর। বরং বহু আসনে জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বরং কিছু আসনে বিজেপি’কে সুবিধা
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তৃণমূল যথেষ্ট অঙ্ক কষেই যে সব আসনে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ে সম্ভাবনা রয়েছে সেই সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস ১ শতাংশ ভোটও পায়নি। ভোটের হার ০.৮৮ শতাংশ।
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘ভোটের বিশদ ফলাফল সামনে এলে স্পষ্ট হবে আরও যে বিজেপি’র সুবিধা করে দিতে সচেষ্ট থেকেছে তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ করতে নেমেছে। তৃণমূল সক্রিয় হয়েছে ত্রিপুরায় বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলি সমঝোতায় আসার পর।’’
সেলিম বলেছেন, আরএসএস’র পরামর্শেই চলেন মমতা ব্যানার্জি। আঁতাতের অভিযোগ তুলে তাঁর প্রশ্ন, কোন কোন আসনে প্রার্থী দিতে হবে সেই তালিকা তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়েছে কে?
গোয়া, মেঘালয়ের নির্বাচনে যে ভাবে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে মমতা ব্যানার্জি প্রার্থী দিয়েছেন ঠিক সেই ধাঁচেই ত্রিপুরায় বিজেপি বিরোধী ভোট ভাঙতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সেই সব আসনে কোথাও ৪০০ কোথাও ৬০০ ভোট পেয়েছে তারা। অথচ বিজেপিকে হারাতে গেলে সেই ভোট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
যেমন ধরা যাক চান্দিপুর বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী টিঙ্কু রায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে পরাজিত করেছেন ৫৭৭ ভোটে। সেখানে তৃণমূলের বিদ্যুৎ বিকাশ সিনহা পেয়েছেন ঠিক ৫৭৬টি ভোট। সুতরাং বিরোধীদের ৫৬৭টি ভোট কেটে বিজেপি’র জয়ের পথ সুনিশ্চিত করেছে তৃণমূল। জোলাইবাড়িতে জয়ী হয়েছেন আইপিএফটি প্রার্থী শুক্লা চরন নোয়াতিয়া। মাত্র ৩৭৫টি ভোটে পরাজিত হয়েছেন সিপিআই(এম)-কংগ্রেস প্রার্থী দেবেন্দ্র ত্রিপুরা। সেই আসনে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ১১১০টি ভোট। এখানেও বিজেপি-আইপিএফটি জোট সুবিধা হয়েছে তৃণমূলের জন্যই। এখানে বামফ্রন্ট পেয়েছে ৩৭.৭২ শতাংশ ভোট।
বিজেপি’র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা টাউন বরদোয়ালি আসন থেকে মাত্র ১২৫৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামফ্রন্ট-কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী আশিস কুমার সাহা পেয়েছেন ১৭,৫৫১টি ভোট। এখানেও তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে। ৬২৩ টি ভোট পেয়েছে তৃণমূল প্রার্থী অনন্ত ব্যানার্জী।
মোটের ওপর ত্রিপুরা নির্বাচনে তৃণমূল জয়ের জন্য লড়েনি। কিন্তু প্রার্থী দিয়েছে। প্রায় কোনও আসনেই ১ হাজার ভোট পায়নি তৃণমূল। কোথাও কোথাও ১ শতাংশের নিচেও ভোট পেয়েছে। কিন্তু বিরোধী ভোট কাটতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বা ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির প্রচারে কিছু অংশে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিজেপি তার সুযোগ নিয়েছে।
সেলিম বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরায় যখন বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, মমতা ব্যানার্জি বারবার গিয়েছেন। গত পাঁচ বছর বিজেপি’র মেয়াদে তাঁকে ওই রাজ্যে দেখা যায়নি। নির্বাচনী পর্বেও দেখা যায়নি। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি ঠেকাতে আসন সমঝোতা করে। এরপরই রাজ্যে সক্রিয় হন মমতা ব্যানার্জি। কেন এই তৎপরতা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।’’
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও তৃণমূলের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি জোটের আসন কমেছে। জনসমর্থনে ধাক্কা খাওয়ার প্রবণতা বোঝা যাচ্ছে। এই সময়েই তৃণমূল রাজ্যে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ করতে সক্রিয় হয়েছেন।’’
Comments :0