আর জি করের মামলায় কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই কেবল অন্ধভাবে অনুসরণ করে গেছে সিবিআই। আর জি কর মামলা রায়ে এমনই কথা লেখা হয়েছে। অর্থাৎ কলকাতা পুলিশ যা চেয়েছে, যেভাবে তদন্ত করেছিল ঠিক সেই পথে সেইভাবেই তদন্ত করেছে সিবিআই!
আর জি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্তের অভিমুখ নিয়ে বারেবারে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছে নির্যাতিতার বাবা-মা’ও। ‘সিবিআই তদন্ত নষ্ট করেছে, সিবিআই তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি’ –এমন অভিযোগও করেছেন সন্তানহারা জননী। নিম্ন আদালতের একের পর এক শুনানিতে সিবিআই এজলাসে যা দাবি করেছে মৌখিক ভাবে অথবা রিমান্ড পিটিশনে লিখিত ভাবে তার প্রভাব দেখা যায়নি চার্জশিটে! সিবিআই মুখে যা বলছে তদন্তে তা ধরা পড়ছে না! এমনকি কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএফএসএলে রিপোর্টের কোন প্রতিফলনও দেখা যায়নি সিবিআইয়ের তদন্তে। কেন?অপদার্থতা নাকি অন্য কোন চাপ বা প্রভাব? কোথাকার চাপ, কাদের চাপ? জনমানসেই উঠেছে সেই প্রশ্ন।
এবার আর জি কর মামলার রায়েও সামনে এলো সিবিআইয়ের চূড়ান্ত অপদার্থতা। তা কি পরিকল্পিত? প্রশ্ন এখন সেটাই।
রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে আদালতে ৫০ নম্বর সাক্ষী হিসাবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক সীমা পাহাজা জেরার মুখে তদন্তের উপসংহার টেনে জানিয়েছিলেন যে সঞ্জয় রায়ই একমাত্র অভিযুক্ত ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়। এমনকি চারতলার সেমিনার রুম ঘটনাস্থল নয় বলে যে প্রচার চলছে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে তিনি জোরালো ভাবে বিচারকের সামনে তা নিয়ে আপত্তি জানান।
গোটা আর জি কর তদন্তের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় ঘটনাস্থল কি চারতলার সেমিনার রুম এবং গোটা ঘটনায় কি কেবল একজনই যুক্ত? এই দুটি বিষয়ই নির্দিষ্টভাবে আলোকপাত করেছিল সিএফএসএলের রিপোর্ট। যদিও সিবিআইয়ের চার্জশিটে বা তদন্তের গতিপথে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি যা নিয়ে সঙ্গত কারণেই সিবিআই’র তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সিএফএসএল রিপোর্ট স্পষ্ট ভাবে গত সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল— সেমিনার রুমে এবং পোডিয়ামে সেদিন আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের সঙ্গে ধর্ষকের ধস্তাধস্তির কোনও প্রমাণ মেলেনি। ‘সামনেই নার্সিং স্টেশন রয়েছে যেখানে ২৪ x ৭ নার্স কিংবা হাসপাতালের স্টাফরা থাকেন, তা পেরিয়েই সেমিনার রুমে ঢুকে এত বড় অপরাধ সংগঠিত করল সকলের অগোচরে তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে’- তাও বলেছিল সিএফএসএল।
যদিও সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে সীমা পাহাজা জোরের সঙ্গেই আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, চার তলার সেমিনার রুমই প্লেস অব অকুরেন্স!সেমিনার রুমেই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন। তা উল্লেখ করেই এরপর রায়ে লেখা হয়েছে- যদিও তিনি আদৌ প্রকৃত ঘটনাস্থল খোঁজা বা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে ‘অভিযুক্ত’ কে মিথ্যা ভাবে ফাঁসানো হয়েছে- এমন কিছু
প্রমাণ করতেও কোনও উদ্যোগ বা তাৎপরতা তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে তিনিন দেখাননি।
তারপরেই রায়ে বলা হয়েছে- কার্যত কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করেছেন তিনি।
অর্থাৎ সিবিআইয়ের প্রধান তদন্তকারী আধিকারিক গোটা দেশে প্রতিক্রিয়া তৈরি করা অন্যতম সংবেদনশীল ঘটনাতে কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই অন্ধভাবে অনুকরণ করেছে! আবার এই সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাট লোপাটের অভিযোগ এনেছিল। অথচ গোটা তদন্তে কলকাতা পুলিশ যা তথ্য দিয়েছে, যা বলেছে তাই অন্ধভাবে অনুসরণ করেছে!
শুধু তাই নয় আশ্চর্যজনক ভাবে এই সিবিআই আধিকারিক আদালতে কার্যত কলকাতা পুলিশের মেলা তথ্য, নথির ভিত্তিতই তদন্ত এগিয়েছে তা জানিয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশ তাদের হাতে যা তুলে দিয়েছিল তাকেই প্রমাণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তিনি কোনও অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ নেননি, এমনকি বাজেয়াপ্ত হওয়া জিনিসপত্র বিশেষ করে উদ্ধার হওয়া সঞ্জয় রায়ের ছেঁড়া ব্লুটুথ হেডফোনেও আঙুল ছাপ মিলিয়ে দেখেননি। শুধু তাই তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে তিনি নিজে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোনও নার্সিং স্টাফ,গ্রুপ ডি স্টাফ, কোন আয়াকেও জেরা পর্যন্ত করেননি। যে পেন ড্রাইভে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চারতলার সেমিনার রুমে ৮ আগস্ট রাত দশটা থেকে ৯ আগস্ট সকাল দশটা পর্যন্ত সমস্ত গতিবিধি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা ছিল সেই পেন ড্রাইভ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করার বা সংগ্রহ করার কোনও তৎপরতা দেখাননি সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকর! বরং তিনি আদালতে জানিয়েছিলেন যে ডিভিআর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তাতেই সব পাওয়া গেছে তাই পেন ড্রাইভ সংগ্রহ করা হয়নি। যদিও আর জি করে সেই সময় লাগানো ৮০টি সিসিটিভি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থার কর্মী তার বয়ানে বলেছিলেন ঐ পেন ড্রাইভে ফুটেজ আছে যা সংশ্লিষ্ট একজনের কাছে রয়েছে। যদিও সিবিআই তা সংগ্রহ করার কোনও চেষ্টাই করেনি!
সিবিআই’র এমন ভূমিকায় বিস্মিত না হলেও ক্ষুব্ধ ন্যায় বিচারের আকাঙ্খায় লড়াইয়ের রাস্তায় থাকা প্রতিবাদী মানুষজন।
RG KOR case
আর জি কর মামলার রায়েই বলা হয়েছে ‘কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করে গেছে সিবিআই’
×
Comments :0