The condition of 3 pregnant women under treatment is critical, Meenakshira spent the whole night in the hospital with her family

চিকিৎসাধীন ৩ প্রসূতির অবস্থাই আশঙ্কাজনক, পরিবারের সঙ্গে সারা রাত হাসপাতালে মীনাক্ষীরা

রাজ্য কলকাতা

অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন প্রসূতি। সোমবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ২ জন আইসিইউ-এ এবং ১ জন আইটিইউ-এ ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে গোটা শরীরে। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা চলছে রোগীদের। তবে রোগীরা ঠিক কেমন আছেন, তা হাসপাতালের তরফে জানানো হচ্ছে না, পরিবারের সদস্যদেরও কিছু বলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ তিন প্রসূতিকে মেদিনীপুর থেকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। 
সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে পৌঁছান ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, এআইডিডব্লিউ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা। রোগীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরাও গোটা রাত কাটান এসএসকেএম চত্বরেই। নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, চিকিৎসার চূড়ান্ত গাফিলতি হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের রমরমা র্যা কেট চলছে। গোটা রাজ্যেরই এই হাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে প্রশ্ন করুন সবাই। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ ছাত্রযুব মহিলা নেতৃত্ব প্রসূতিদের পরিবারের পাশে থাকেন গোটা রাত ধরেই। জানা যায়, অত্যন্ত সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন অসুস্থ প্রসূতিরা। কিন্তু হাসপাতালের তরফে পরিবারকে কিছু জানানো হচ্ছে না। এতে পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা আরও বেড়েই চলেছে। 
রাতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, বিষাক্ত স্যালাইন তো আছেই, সঙ্গে জাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রমরমিয়ে চলছে রাজ্যজুড়ে। এভাবেই একটা বড় র্যাাকেট কাজ করছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও পাওয়া যায় না দরকারে। প্রসূতিদের ইঞ্জেকশন না দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে বলে জানতে পারছি। তাঁদের পরিবারের লোকজনে অনেক টাকা ধার করে বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন কিনে এনেছে। ওটা হাসপাতালে নেই কেন, এ প্রশ্ন তো উঠবেই। ওই দিন প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু রোগীদের সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি তাঁদের। হঠাৎ দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনে হলো রেফার করে দিতে হবে। এর থেকেই স্পষ্ট হয়, কারা চালাচ্ছে আর কীভাবে এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। 
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটি বিশেষ সংস্থার তৈরি স্যালাইনের বিষক্রিয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে অভিযোগ। এরপর তাঁদের মধ্যে মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এরপরেই রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ওই সংস্থার স্যালাইন কেন প্রয়োগ করা হলো, বলে প্রশ্ন ওঠে। এরপর পরিবার সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসারও চরম গাফিলতি হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এমনকী মৃত প্রসূতির এক দিনের শিশু সন্তানকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে না রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই শিশুও বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 
উল্লেখ্য, চলতি বছরেই জুলাই মাসে মেটিয়াবুরুজ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ছানি অপারেশনের পর কয়েক জন রোগীর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ‘চোখের আলো’ প্রকল্পে এই অপারেশন চলছিল। কোনও সংক্রমণের কারণেই এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ নিয়ে কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশ্ন ওঠে, অপারেশন থিয়েটারের পরিকাঠামো নিয়েও। জানা যায়, ২ জনের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছে শুধু নয়, অন্তত ১৮ জন গরিব মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছানি অপারেশনের পর। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবন, তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হয় উচ্চ পর্যায়ের। এরপর কলকাতার রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অব অপথালমোলোজি বিভাগে এনে রোগীদের চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র সোচ্চার হন এলাকার বাসিন্দারা। সেই একই পরিকাঠামোর বেহাল দশা বারবারই সামনে চলে আসছে রাজ্যে।
এদিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে পরপর। পশ্চিমবঙ্গ ফারমাসিউটিক্যালস-এর তৈরি ওষুধ কোন রহস্যের কারণে হাসপাতালগুলিতে রমরমিয়ে চলছে, উঠেছে প্রশ্ন। 
এ ছাড়াও প্রশ্ন, রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি, যে সংস্থা ওষুধের  গুণমান পরীক্ষা করে, সেখানে ২০১৪ সাল থেকে পূর্ণ সময়ের জন্যে কোনও আধিকারিক নেই কেন। অভিযোগ, রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ থেকে একজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হয়। জানা গেছে, ৪৭টি নিয়মিত পদের মধ্যে মাত্র ১২ জন কর্মী দিয়ে ড্রাগ ও নার্কোটিক্যাল পরীক্ষা চলছে। এই ১২ জনের মধ্যে আবার ৬ জন চুক্তি ভিত্তিক কর্মী। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ ওষুধ ও নার্কোটিক স্যাম্পেলের মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ পরীক্ষা হয়। সব মিলিয়ে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে চিত্র ফুটে উটছে তা অতি ভয়ঙ্কর। চিকিৎসক সংগঠনগুলির বক্তব্য, বারবার সরকারকে নানা বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এর আগে। কিন্তু কোনো কিছুরই সুরাহা হয়নি। কারণ, এক বৃহৎ দুর্নীতিচক্র চলছে প্রশাসন ও শাসক দলেরই মদতে, যে কারণে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।

Comments :0

Login to leave a comment