ট্রাম্পের প্রশাসনের দাবির কাছে মাথা নত করল না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। শর্ত না মানায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি রুখে দিল ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার মার্কিন শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে যে, হোয়াইট হাউসের দাবি না মানার কারণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিলের প্রায় ২২০ কোটি ডলারের ফান্ড রুখে দিল ট্রাম্প প্রশাসন। যার মধ্যে বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত।
আমেরিকার ফেডেরাল ফান্ডিং প্রাপ্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে একাধিক শর্ত দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশসান। ট্রাম্প প্রশাসন গত শুক্রবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দিয়ে বেশ কিছু পরিবর্তনের কথা বলে। সেই সমস্ত নীতির মধ্যে মেধা নির্ভর ভর্তি, নিয়োগ, পড়ুয়াদের, শিক্ষক শিক্ষিকাদের অডিট, এছাড়াও ক্যাম্পাসে বৈচিত্র্যের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নেতৃত্ব, এবং মুখোশ নিষিদ্ধ করা সহ একাধিক বিষয় ছিল। জানানো হয়েছিল দাবি না মানলে শাস্তির কোপ পড়তে পারে। সোমবার মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হার্ভার্ড। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হার্ভার্ডে আর্থিক সাহায্য বন্ধের নির্দেশ চলে আসে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে। টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে যে তারা হার্ভার্ডকে ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি রুখে দিয়েছে।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ইতিমধ্যে আমেরিকায় বসবাসকারী সমস্ত অভিবাসী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করায় নানা মহলের থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে গত কয়েক দিনের মধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রায় ৩০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের সবাই জেল হেপাজত ও প্রত্যর্পণের মুখোমুখি। এই ঘটনায় আপামর ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষক মহলে এক ভয়ের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে টেক্সাস-অস্টিন, মিনেসোটা ও ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিসা প্রাপ্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত প্রত্যর্পণের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে সরব হওয়া থেকে শুরু করে, ট্রাফিক আইন ভাঙা, অধ্যাপক কিংবা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত বচসায় জড়ানোর মতো বিভিন্ন অজুহাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার ঘটনা ঘটেছে। আদালতে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে লড়ছেন এমন একাধিক আইনজীবী সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে জানিয়েছেন,‘‘ট্রাম্প প্রশাসনের মতো শাস্তিস্বরূপ যখন তখন ভিসা বাতিলের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের কোনোরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্ট, আগেভাগেই নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে যেন-তেন প্রকারণে স্থায়ীভাবে ‘দেশছাড়া’ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, তাঁদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানা রকম হুজুগে অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের দোষীসাব্যস্ত করা হচ্ছে। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা ঘটে না।’’
সোমবার হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার এক প্রকাশ্য চিঠিতে লিখেছেন, যে দাবিগুলো মানা হলে ফেডারেল সরকারকে হার্ভার্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিত। এই দাবিগুলো জ্ঞানের সাধনা, উৎপাদন ও প্রচারের জন্য নিবেদিত একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে হার্ভার্ডের মূল্যবোধের জন্য হুমকিস্বরূপ। হোয়াইট হাউসের দাবিগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংশোধনী অধিকার লঙ্ঘন করে এবং পড়ুয়াদের জাতি, বর্ণ বা জাতীয় উৎপত্তির ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে। ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী পড়াতে পারবে, কাকে ভর্তি করতে পারবে এবং নিয়োগ করতে পারবে এবং অধ্যয়ন ও অনুসন্ধানের কোন ক্ষেত্রগুলি অনুসরণ করতে পারবে তা নির্ধারণ করা উচিত নয়।’’ ‘‘তিনি আরও বলেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদি-বিদ্বেষ মোকাবেলায় ব্যাপক সংস্কার গ্রহণ করেছে।
Trump Harvard
ট্রাম্পের আদেশ মানেনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধ অনুদান

×
Comments :0