FRANCE ELECTION

আটকে রেখেছেন ম্যাঁক্র, দেড়মাস পরেও প্রধানমন্ত্রী নেই ফ্রান্সে

আন্তর্জাতিক

FRANCE ELECTION FRENCH POLITICS BENGALI NEWS

শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে ‘সুবিধাজনক’ নয়, তাই সংসদীয় নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে জিতে আসার পরেও ফ্রান্সের বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্টকে সরকার গড়তে দিচ্ছেন না ফ্রান্সের বর্তমান ‘মধ্যপন্থী’ রাষ্ট্রপতি ইম্যানুয়েল ম্যাঁক্র। 

৭ জুলাই ফ্রান্সে অকাল সংসদীয় নির্বাচন হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ফ্রান্সে বিপুল জয় পায় উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। তারপরেই নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসেন ম্যাঁক্র। সেই নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের রুখে দেওয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় সদ্য গড়ে ওঠা বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। 

নির্বাচনের ফল বেরোলে দেখা যায়, সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোট হিসেবে উঠে এসেছে নিউ পপুলার ফ্রন্ট। এবং আসন সংখ্যার নিরিখে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এই জোট থেকে হওয়ার কথা। কিন্তু ফরাসী সংবিধানের নিয়মের বেড়াজালের আশ্রয় নিয়ে ফল প্রকাশের ৪৮ দিন পরেও ম্যাঁক্র নতুন সরকার গঠন আটকে রেখেছেন। 

মধ্যপন্থী শিবিরের দাবি, জনমত থাকলেও তারা নিউ পপুলার ফ্রন্টের সবথেকে বড় শরিক ফ্রান্স আনবোড-কে ক্ষমতায় আসতে দেবে না! কেন? এই শিবিরের দাবি, চরম বামপন্থী এই দল নাকি ফ্রান্সে নয়া উদারবাদের কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করে দেবে। 

প্রসঙ্গত, জাঁ লুক মেলেশঁর নেতৃত্বাধীন এই দল প্রবল ভাবে নয়া উদারবাদের বিরোধী। একইসঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর দাবিও তুলে ধরে তারা। ফ্রান্স আনবোড-র নির্বাচনী ইস্তাহারে ঠাঁই পেয়েছে সরকারী সম্পদের রাষ্ট্রীয়করণ, সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা, অতি বিত্তবানদের উপরে সম্পদকর চাপানোর মত মৌলিক দাবি। 

একইসঙ্গে স্বাধীন প্যালেস্তাইনের দাবিকেও সোচ্চারে সমর্থন করে ফ্রান্স আনবোড। 

এমন ‘বিপদজনক’ দলকে ক্ষমতায় আসা থেকে আটকাতে ম্যাঁক্র প্রথমে দাবি করেন, প্যারিস অলিম্পিকের আগে নতুন সরকার তৈরি হলে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। যদিও অলিম্পিকের আগে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ছিল একান্ত ভাবেই তার। অলিম্পিকের পরে ম্যাঁক্র শিবিরের দাবি, মন্ত্রীসভায় ফ্রান্স আনবোড'র কোনও সদস্যকে মেনে নেওয়া হবেনা। ম্যাঁক্র’র দলের প্রাক্তন মুখপাত্র বেঞ্জামিন হাড্ডাড বলেছেন, ‘‘ওদের আমরা মানব না, কারণ ওরা উগ্র দক্ষিণপন্থীদের থেকেও ফ্রান্সের জন্য বেশি ‘ক্ষতিকর’।’’

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই ফ্রান্স আনবোড’র নামে কুৎসা করে তাদের হেয় করার চেষ্টা শুরু করেছে মধ্যপন্থীরা। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিনকে কোনঠাসা করার কায়দায় মেলেশঁ এবং তার দলকে ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবেও দাগানোর চেষ্টা চলছে। তবে করবিন সেই লড়াই হেরে গেলেও দল হিসেবে ফ্রান্স আনবোড এই অভিযোগের পালটা লড়াই দিচ্ছে। 

এই অবস্থায় মেলেশঁ রবিবার সকালে ম্যাঁক্রকে খোলা চিঠি লিখেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, ‘‘ধরুন আমরা ফ্রান্স আনবোড'র একজন সাংসদকেও নতুন মন্ত্রীসভায় পাঠালাম না, তারপরেও কি আপনি নিউ পপুলার ফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী লুসি ক্যাস্টেটস'কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন?’’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মেলেশঁ'র এই অপ্রত্যাশিত চালের কোনও উত্তর নেই ম্যাঁক্র’র কাছে। তিনি হ্যাঁ বা না, যাই বলুন, তাতে স্পষ্ট হবে তিনি জনমতকে অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। কারণ, শাসক দলের পছন্দ অপছন্দের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে মানুষ সিদ্ধান্ত নেন না। 

ফ্রান্সের সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফউরে এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘ফ্রান্স আনবোড‘র সদস্যদের মন্ত্রীসভায় না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন ইম্যানুয়েল ম্যাঁক্র। শাসকপক্ষের এই কুযুক্তি দিনের পর দিন চলতে পারেনা।’’

Comments :0

Login to leave a comment