অনিন্দ্য হাজরা, চণ্ডীগড়
প্যালেস্তাইনে মুক্তিকামী মানুষের ওপর চলছে অবিরত আক্রমণ। সামরিক জোট ন্যাটোর দখলদারি পূর্ব ইউরোপের ভূখণ্ডে। ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকে। সমানে দুর্বল করার চেষ্টা করছে সমাজতান্ত্রিক শিবিরকে। বিশ্ব পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের মতলবে হচ্ছে সংঘাত। এই বাস্তবতাকে মনে করিয়েই চলবে শান্তির পক্ষে, জনতার পক্ষে প্রতিরোধ আন্দোলন।
সর্বভারতীয় সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে এভাবেই লক্ষ্য জানাচ্ছে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা (এআইপিএসও)। শনিবার থেকে চণ্ডীগড়ে শুরু হচ্ছে সম্মেলন। কোভিডকে কাজে লাগিয়ে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিকে এক ঘরে করা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিপদ নিয়েও সম্মেলনে প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। বিগত সর্বভারতীয় সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলি কতটা কার্যকর করা গেল, আলোচনায় উঠে আসবে সেই প্রসঙ্গও। আগের বার সর্বভারতীয় সম্মেলন হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে।
এআইপিএসও নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, নতুন করে প্যালেস্তাইনে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর পিছনেও উস্কানি রয়েছে আমেরিকার। সারা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের মূল শত্রু হলো আমেরিকা এবং তার মদতপুষ্ট জোট। আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের কুফল ভোগ করতে হয় গোটা বিশ্বকে। তাই এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এআইপিএসও সেই কাজই করে আসছে।
আইপিএসও নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ২০২০ সালের কোভিড অতিমারির সময় থেকে কিউবা কিংবা চীনের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিকে শত্রু চিহ্নিত করে পুঁজিবাদী দেশগুলি। সেই রেশ এখনো চলছে। বর্তমানে আমেরিকার মদতপুষ্ঠ গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, চীনের উহান গবেষণাগার থেকেই নাকি কোভিড ভাইরাসের জন্ম। ২০২০ সালেও একই দাবি করেছিল আমেরিকার সহ পশ্চিমের পুঁজিবাদী দেশগুলি। সেই সময় কিউবার তরফে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। সেই ভ্যাকসিন কেও আক্রমণ করতে ছাড়েনি এই শক্তিগুলি।
এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, পুঁজিবাদী দেশগুলির তুলনায় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি কোভিড নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে অনেক বেশি সফল। এবং এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ। অপরদিকে পশ্চিমের দেশগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি বাজার নির্ভর। কোভিডের সময়ে মানুষের মৃত্যু মিছিল চললেও স্বাস্থ্য কোম্পানিগুলি ফুলে ফেঁপে ওঠে। এই দিক থেকে নজর ঘোরাতেই কোভিড প্রশ্নে ফের চীনকে আক্রমণ করা শুরু হয়েছিল।
এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ আরও জানিয়েছেন, মার্কিন সামরিক জোট ন্যাটোর আধিপত্যবাদকে ঘিরে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে চলেছে আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়া। এর বিরুদ্ধে বিকল্প ভাষ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। তাই চীনকে বেকায়দায় ফেলতেও নতুন করে উহান গবেষণাগারে কোভিডের জন্ম ইত্যাদি তত্ত্বকে সামনে আনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এআইপিএসও'র সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব জানান, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সামনের সারিতে থাকে এআইপিএসও। ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে সবার প্রথমে পথে নামে এইআইপিএসও। প্যালেস্টাইন প্রশ্নে ধারাবাহিক ভাবে জনমত গঠন করে চলেছে এআইপিএসও। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িকতাও শান্তির পথে বিশাল বড় বাধা। সেই প্রশ্নেও সমান ভাবে সরব এআইপিএসও। গান্ধী হত্যার দিনে রাজ্য এবং দেশজুড়ে প্রচার চালিয়েছে সংগঠন। সম্মেলনের মাধ্যমে সেই কাজেই আরও গতি আনার চেষ্টা হবে।
এআইপিএসও জানাচ্ছে, ১৮টি রাজ্য ও দিল্লি কেন্দ্রের মোট ২২৯ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। এর মধ্যে বিহার থেকে ৩৪, কেরালা থেকে ৩০, তামিলনাড়ু থেকে ২৮, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৮ এবং তেলেঙ্গানা থেকে ৪০ জন প্রতিনিধি সর্বভারতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। দু’দিন ধরে সম্মেলনের কাজ চলবে।
Comments :0