মার্কিন আকাশসীমায় চীনের একটি ‘বেলুন’ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ধ্বংস করল মার্কিন সেনাবাহিনী। চীন জানাচ্ছে, এই বেলুন একটি চালকহীন অসামরিক আকাশযান, মার্কিন আকাশসীমায় হাওয়ার টানে ঢুকে পড়েছিল। মার্কিন সরকারের অভিযোগ, ওই বেলুন আসলে চরবৃত্তি করার জন্য।
গত কয়েকদিন ধরেই এই বেলুনকে মার্কিন আকাশসীমায় দেখা গেছে। বেলুনটি উড়ছিল। মার্কিন সামরিক সূত্রে জানানো হয়েছে, এমন সময়ে বেলুনটিকে ধ্বংস করা হয়েছে যখন মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার আশঙ্কা ছিল না। দক্ষিণ ক্যারোলিনায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছানোর পরে এফ-২২ বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। অবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরের ৪৭ ফুট গভীর জলে পড়েছে। মার্কিন জলসীমার মধ্যে থেকে ওই অবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পরে বেলুনটি সাদা গুঁড়ো হয়ে গেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এই অভিযানে খুশি। তিনি যুদ্ধবিমানের পাইলটদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বুধবারই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেলুনটিকে গুলি করে নামাতে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, চীন আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছিল। আমেরিকা যা করেছে তা আইন এবং সচেতনভাবেই করা হয়েছে।
এই বড় আকারের বেলুন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। এই বেলুনকে চীনের নজরদারি বেলুন বলে চিহ্নিত করেছিল পেন্টাগন। যদিও এই বেলুন থেকে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার কোনও আশঙ্কা নেই বলে পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট্রিক জানিয়েছিলেন। মার্কিন বিদেশ সচিন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবারই নির্ধারিত বেজিঙ সফর বাতিল করে দেন। আমেরিকার দক্ষিণ পূর্বের তিনটি বিমানবন্দরে সাময়িক ভাবে বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
অন্যদিকে চীন আগেই জানিয়েছিল, ওই আকাশযান চালকবিহীন, আবহাওয়া সংক্রান্ত অসামরিক বেলুন। নির্ধারিত যাত্রাপথ থেকে সরে গিয়ে তা মার্কিন আকাশসীমায় ঢুকেছে। চীন সে-কারণে দুঃখপ্রকাশও করেছিল। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে বেলুন ধ্বংসের পরে চীনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে কড়া। চীনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, একটি চালকবিহীন অসামরিক আকাশযানকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করার ঘটনায় চীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। চীন একাধিকবার মার্কিন সরকারকে জানিয়েছিল ওই বেলুন সম্পুর্ণতই অসামরিক উদ্দেশ্যের। অনিচ্ছকৃত ভাবেই তা আমেরিকার আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল। ঠান্ডা মাথায়, পেশাদারি মনোভাব নিয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে অনুরোধও করেছিল। তার বদলে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা নিশ্চিতভাবেই অতি প্রতিক্রিয়া। আন্তর্জাতিক প্রথার বিরোধী। চীন প্রয়োজনীয় উত্তর দেবে।
বেলুনটিকে মার্কিন আকাশসীমায় প্রথম দেখা যায় আলাস্কায়, ২৮ জানুয়ারি। উড়ে যায় কানাডার দিকে। আবার ভাসত ভাসতে চলে আসে মার্কিন আকাশে।
এই ঘটনায় মার্কিন-চীন উত্তেজনা ফের বৃদ্ধি পেতে পারে। স্পষ্টতই আমেরিকার তরফে বেলুনকে মাটিতে নামানোর জন্য যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছে প্রচারকে তুঙ্গে তুলতে। পেন্টাগনের নিজেদেরই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেলুনটি যখন ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় ভাসছিল তখন যুদ্ধবিমান গিয়ে ৫৮ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। আন্তর্জাতিক মহলে একে অনেকেই মশা মারতে কামান দাগার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
Comments :0