মিথ্যেকে সত্য করার প্রচার চলছে অবিরত। বিপুল অর্থ খরচ করে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমকে। গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইতিহাস, রাজ্যের-দেশেরও। প্রতিহত করতে নামতেই হবে বামপন্থীদের। রাস্তায়-মাঠে লড়াইয়ের সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে ইন্টারনেটে প্রচারেও।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই দায়িত্ব নির্দিষ্ট করেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। শনিবার নিউ টাউনের রবীন্দ্র তীর্থে পার্টির ‘ডিজিটাল সামিট’-এ বক্তব্য রেখেছেন মিশ্র। তাঁর আহ্বান, মিথ্যা-দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে লড়াই গড়ে গড়তে হবে জনগণের পঞ্চায়েত।
শনিবার নিউ টাউনের রবীন্দ্র তীর্থে হয়েছে এই বৈঠক। স্লোগান ছিল ‘হেঁটেও আছি, নেটেও আছি’। রাজ্যের সব জেলা থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন, মত বিনিময় করেছেন। বক্তব্য রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূচনা ভাষণ দেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাস। সমাপ্তি ভাষণ দেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী।
বৈঠক দায়িত্ব নির্দিষ্ট করেছে। এক, বিকল্প প্রচারে আগ্রহী, দক্ষ যাঁরা যুক্ত করতে হবে তাঁদের সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে। দুই, রাজ্য কেন্দ্র থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত দায়িত্ব ভাগ করে সমন্বয় বাড়াতে হবে কাজের। তিন, সৃজনশীলতাকে জায়গা দিতে হবে। বৃত্তের বাইরের অংশকেও যুক্ত করা সম্ভব। তা কাজে লাগাতে হবে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে মতামত দেন সান্ত্বন চ্যাটার্জি, নন্দিনী মুখার্জি, অঞ্জন বেরা, শামিম আহমেদ, ঈশিতা মুখার্জি। সঞ্চালনা করেন ‘গণশক্তি’-র সহকারী সম্পাদক অতনু সাহা।
পার্টি নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা যেমন ছিল, তেমনই চলেছে প্রতিনিধিদের বিভিন্ন ‘রাউন্ড টেবিল’, ‘ওরিয়েন্টেশন’-এ ভাগ করে মতবিনিময়। তাত্ত্বিক, সমীক্ষার সার জানানোর সঙ্গে ভিডিও তৈরি থেকে গ্রাফিক্স বা পোস্টার তৈরির হাতেকলমে চর্চা হয়েছে অধিবেশনে। উঠে এসেছে বহু গুরুত্বপূর্ণ মতামত। যান্ত্রিক, প্রযুক্তিজনিত সমস্যাই কেবল নয়। এসেছে বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় করার উদ্ভাবনী প্রস্তাব। জেলা বা স্থানীয় স্তরের সমস্যাকে প্রচারে যুক্ত করার প্রস্তাবও এসেছে।
ওয়েব পোর্টাল, নিউজ পোর্টাল, সোশাল মিডিয়ার সংযোগ এই সময়ের বাস্তবতা। নাগরিক কেবল পাঠক বা দর্শক না, দ্রুত তিনি মতও জানাতে পারেন। বিষয়বস্তু তৈরি করেন। আদানপ্রদানের দ্বিমুখী ধরন রয়েছে। ফলে বিকল্প মত জানানোর বাড়তি সুযোগ রয়েছে। আবার প্রযুক্তি বিকল্পকে নিজে হাজির করে না। বিকল্প বোধ জরুরি।
সমস্যাও রয়েছে ডিজিটাল মিডিয়ায়। যেমন ‘ফেক নিউজ’। আবার আত্মকেন্দ্রিক প্রচারের প্রবণতাও বেড়ে যায়। পোস্টের গোড়ায় তৃণমূলের দুর্নীতির নিন্দা। মাঝে রয়েছে আরএসএস-বিজেপি’র দর্শন। পুরোটা না দেখেই শেয়ার করে দেওয়া হতো পারে। সতর্কতা জরুরি। এসেছে এদিনের আলোচনায়।
সোশাল মিডিয়ার মালিকানা কিন্তু ব্যক্তির। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে ব্যবহারকারীর তথ্য। প্রতিটি সোশাল মিডিয়া চলে জটিল নির্দিষ্ট যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায়। সেই ‘অ্যালগরিদম’ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার নিজেদের, সমাজের। রাজনৈতিক, ভিন্নধর্মী, পুঁজির শাসনকে প্রশ্ন তোলে, কর্তৃত্ববাদ-স্বৈরাচারে আপত্তি জানায়, এমন পোস্ট আটকে দেওয়া হয়। এমন পেজের ‘রিচ’ কমিয়ে দেওয়া হয়। এসেছে সেই আলোচনা।
আবার, ফেসবুকে লাইকের বদলে পছন্দের পোস্টে ‘ইমোজি’ ব্যবহার করলে গুরুত্ব বাড়ে। মতামত জানালে গুরুত্ব বাড়ে। একেকজন একেক বিষয়ে বা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একই সময়ে আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু পোস্ট করলে প্রচারের গুরুত্ব কমে। কোন বিষয়, কখন- নির্দিষ্ট করে সমন্বয় রেখে প্রচার দরকার। নিরন্তর সংযোগ দরকার, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments :0