বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে সীমান্তের দু’দিকে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে দৃঢ় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
দু’দিনের বৈঠকের পর সোমবার বিবৃতি প্রকাশ করেছে পলিট ব্যুরো। বাংলাদেশের পাশাপাশি উপাসনাস্থল আইন প্রয়োগে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ, কেরালার ওয়েনাড়ে ত্রাণের দাবি জানানো হয়েছে। গ্রেটার নয়ডায় কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করা হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনকে অবশ্যই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সোমবার বিবৃতিতে ফের এই দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
এদিন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রশাসন, সম্ভবত, ইসলামি মৌলবাদী শক্তির তৎপরতা উপেক্ষা করছে। ব
পলিট ব্যুরো বলেছে, ভারতে বিজেপি-আরএসএস ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর উস্কানিমূলক ও আগুন জ্বালানোর মতো প্রচারেরও নিন্দা করা হচ্ছে। পলিট ব্যুরো বলেছে, এ ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থের জন্য সহায়ক হবে না।
পলিট ব্যুরো বলেছে, দুই দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে নামতে হবে। সব ধরণের সাম্প্রদায়িকতা সীমান্তের দু‘পারে জনতার স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর।
নিম্ন আদালতে একের পর এক মসজিদকে মন্দির বলে দাবি করে আবেদন জমার ঘটনাপ্রবাহে উদ্বেগ জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ভারতে নিম্ন আদালতে পরপর মামলা দায়ের করে কয়েক শতাব্দীর পুরনো বিভিন্ন মসজিদকে বলা হচ্ছে সেগুলি মন্দির ভেঙে তৈরি। বারাণসী ও মথুরার পর সম্ভলের একটি নিম্ন আদালত ষোড়শ শতকের একটি মসজিদ নিয়ে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে হিংসায় চার মুসলিম যুবক নিহত হয়। এরপরই আজমেঢ়ের সিভিল কোর্টে আজমেঢ় শরিফ দরগাহ নিয়ে একই ধরনের পিটিশন গ্রহণ করা হয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সুপ্রিম কোর্ট উপাসনাস্থল (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ প্রয়োগ করে এই ধরনের মামলা বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করেনি। অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের ২০১৯ সালের রায়ে আইনটির বৈধতা এবং এর প্রয়োগকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করা হয়েছিল। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে, উপাসনাস্থল আইন বিরোধী বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপ বন্ধ করতে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ করা জরুরি।
পলিট ব্যুরো ওয়ানাডে বিধ্বংসী ভূমিধস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কেরালাকে ন্যায্য সাহায্য থেকে বঞ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করেছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ‘‘জরুরি ত্রাণ হিসেবে ২১৪.৬৮ কোটি টাকা এবং পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ২,৩১৯.১ কোটি টাকা দাবি করা সত্ত্বেও কেন্দ্র চার মাস পরেও তহবিল অনুমোদন দেয়নি। ভূমিধসকে ‘‘গুরুতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়’’ হিসাবে বিবেচনা করতে অস্বীকার করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ঋণ মকুব করতে অনিচ্ছুক কেন্দ্র। এই মনোভাব অন্যায় ও অমানবিক। পলিটব্যুরো বলেছে, সঙ্কটের সময়ে এই ত্রাণ না দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নীতিগুলিকে ক্ষুণ্ণ করে। পলিট ব্যুরো কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী অর্থ অবিলম্বে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।
পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার কৃষকদের উপর পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা করছে সিপিআই(এম)। সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস) এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রায় ১৫০ জন নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ধৃত কৃষকরা কারাগারে অনশন শুরু করেছেন। বহু নেতাকর্মীকে গৃহবন্দি করা হচ্ছে। লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা নারীদের ওপর হামলার ঘটনাকেও নিন্দা করেছে পলিটব্যুরো।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২৪ তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়ার ওপরও আলোচনা করেছে পলিট ব্যুরো। জানুয়ারির ১৭-১৯ এই খসড়া পেশ হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
Comments :0