বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি চুরি করে সম্পত্তি বাড়ছে বিড়ি মালিক আর তৃণমূল নেতাদের। রবিবার মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান কাঞ্চনতলা হাইস্কুলের সামনে বিড়ি শ্রমিকদের বিশাল সমাবেশে এই অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতি আর বিড়ি মালিক ও তৃণমূল নেতাদের মজুরি লুটের কোপে পড়েছেন বিড়ি শ্রমিকরা। দুই দলের বিরুদ্ধেই একজোট হয়ে লড়াই করে অধিকার আদায় করতে হবে বিড়ি শ্রমিকদের।
সেলিম সাফ বলেছেন, মজুরি চুরি চলবে না। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি চুরি করে সম্পত্তির বহর বাড়িয়েছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতারা। সেই টাকা তাঁরা এখন বিনিয়োগ করছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসায়। উপেক্ষিত থাকছে মহিলা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য। বিড়ি মালিকরাই জঙ্গিপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, বিধায়ক, সাংসদ। ফলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না। দুই দলের বিরুদ্ধে শক্তি বাড়িয়ে ন্যায্য মজুরির দাবিতে লড়াই করতে হবে।
রবিবার ধূলিয়ানে শেষ হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা বিড়ি মজদুর অ্যান্ড প্যাকার্স ইউনিয়নের একাদশতম জেলা সম্মেলন। এই উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিড়ি শ্রমিকদের যে অধিকার ও সুযোগ সুবিধা ছিল সেসবই আজ বিপন্ন। ন্যূনতম মজুরি, কাজের অধিকার, পিএফ লুট হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের অধিকার। এই তৃণমূল সরকার সহজে কথা শুনবে না। জিএসটি’র টাকা বিড়ি শ্রমিকদের কল্যাণে খরচ করতে হবে। তার জন্য লড়াই তীব্রতর করতে হবে। অধিকার, ন্যূনতম মজুরি ছিনিয়ে নিতে হবে।
সমাবেশে সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের দুরবস্থা প্রতিদিন বাড়ছে। রাজ্যের সরকার নির্বিকার। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা চুরি করতেই ব্যস্ত। গ্রামে গ্রামে চোরদের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকদের পাশে থেকে বামপন্থীরা আক্রান্ত, বামপন্থীদের পিঠে এখনও দাগ আছে। তৃণমূল নেতারা হুমকি দিতে এলে আর ছেড়ে দেওয়া হবে না।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি ও মোদাসসার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন মহম্মদ আজাদ। উপস্থিত ছিলেন সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারী, তোয়াব আলি। বক্তারা বলেছেন, বিড়ি শিল্পে শ্রমিক মালিক চুক্তি অনুযায়ী ১৭৮ টাকা মজুরিও পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। চুক্তি ভেঙেছে মালিকরাই, অথচ সরকার নীরব। সপ্তাহে সাতদিন কাজ হচ্ছে না। পাড়ায় পাড়ায় কাজের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হবেন বিড়ি শ্রমিকরা।
সমাবেশে সেলিম বলেন, স্বাধীনতার লড়াইতে দেশের সব ধর্ম, জাতির মানু্ষ এককাট্টা হয়েছিলেন। বিজেপি এখন ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করছে। বিজেপি'র পথে হাঁটছে তৃণমূলও। তাই মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আরএসএস খারাপ সেটা তিনি বিশ্বাস করেন না। আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই তিনি করবেন না।
রাজ্যের মানুষের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে তৃণমূলের নীরবতার বিরুদ্ধেও সরব হন সেলিম। তিনি বলেন, রাজ্যের বঞ্চনা নিয়ে এরাজ্য থেকে নির্বাচিত তৃণমূলী সাংসদদের ভূমিকা কী? আসলে ভাইপো আর ভাইপোর স্ত্রী’কে বাঁচাতে মোদীর পায়ে পড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা ব্যানার্জি মোদীর পায়ে পড়তে পারেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপি-আরএসএস'র কাছে মাথা নোয়াবে না। লাল ঝান্ডা হাতে তাঁরা লড়াই করছেন। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সত্য প্রকাশ করতে চাইলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার হিম্মত দেখান মুখ্যমন্ত্রী।
গ্রাম ও ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে সেলিম বলেন, ম্যাড়া লড়ে খুঁটির জোরে। তৃণমূলের নেতাদের খুঁটি কালীঘাটে। কালীঘাটই এখন নড়বড়ে। বাংলার মানুষের মেজাজ চড়ছে। বিজেপি চেষ্টা করছে এর ফায়দা নেওয়ার। মানুষের মধ্যে ভাগ করার রাজনীতি ওদের। কিন্তু ভাগাভাগির ঘৃণ্য রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে রাজ্যের মানুষ এককাট্টা হয়েই দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করবেন।
সামসেরগঞ্জে নদী ভাঙন প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের উদাসীনতা নিয়ে সরব হন সেলিম। নদী ভাঙন নিয়ে লোকসভায় ও বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ও বিধায়করা লড়ছেন না কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
সেলিম বলেন, মোদী বলছেন, নমামী গঙ্গে! আর গঙ্গা যখন জমি গ্রাস করছে দেখতে পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী? স্কুল, মন্দির, কবরস্থান তলিয়ে যাচ্ছে। সরকার কোথায়? বলা হচ্ছে দুয়ারে সরকার। কিন্তু দুয়ারে যখন নদী, তখন সরকার কোথায়? সামসেরগঞ্জের ভাঙন রোধের দাবি কলকাতা এবং দিল্লি অবধি পৌঁছে দেবে বামপন্থীরাই। দাবি আদায়ে তীব্রতর হবে সংগ্রাম।
এদিনই ধূলিয়ানের কাঞ্চনতলা জেজিজে ইনস্টিটিউশনে শেষ হয় মুর্শিদাবাদ জেলা বিড়ি মজদুর অ্যান্ড প্যাকার্স ইউনিয়নের জেলা সম্মেলন। সম্মেলন থেকে ৭৫ জনের জেলা ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মহম্মদ আজাদ। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন তাপস আচার্য। বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, ব্লকে ব্লকে বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠিত করবে সংগঠন। সেপ্টেম্বর মাসে নতুন মজুরি চুক্তির দাবিতে মালিক পক্ষ ও সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনও উত্তর আসেনি। এই বছরই নতুন মজুরি চুক্তি করতে হবে। শ্রমিকদের দাবি, সরকারি ন্যূনতম মজুরি, সব শ্রমিকের পিএফ চালু করতে হবে।
Comments :0