গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও গৃহবন্দি করছেন গরিব মানুষেরা। তাদের অধিকার বিপন্ন। সরকারি আবাস বিলিতে যোগ্যদের বাদ দিয়ে দোতলা বাড়ির মালিকদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির তদন্তে এসে আধিকারিকদের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বঞ্চিত মানুষেরা। হুমকির দিন শেষ। এখন প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জবাব চাইছে গ্রাম। হিসাব চাইছে সরকারি টাকা খরচের। ছলে-বলে-কৌশলে গণতান্ত্রিক অধিকার লুটের দিন শেষ।
গায়ের জোরে ভয় দেখিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট করেছিল তৃণমূলীরা। তারপর প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে লুটের রাজত্ব কায়েম করে তারা। একের পর এক উন্নয়নে বরাদ্দ টাকা লুট হয়েছে। মাত্র ক’বছরের মধ্যেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছেন পঞ্চায়েতের কেষ্ট-বিষ্টুরা। দেখার কেউ ছিল না। না প্রশাসন, না শাসক দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ফলে এই দশ বছরে লুটের বহর বেড়েছে। এখন পঞ্চায়েতের ভাঁড়ার শূন্য।
সহ্যেরও সীমা থাকে। ভয়ও চিরস্থায়ী নয়। মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে রাস্তায়। পঞ্চায়েত ঘেরাও হচ্ছে। প্রধান, উপপ্রধান, সদস্যদের বাড়ি গিয়ে কৈফিয়ত চাইছে গ্রামের মানুষ। এতদিন অভিযোগের পর অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসন প্রতিকার করেনি। জেগে জেগে ঘুমিয়েছে। এককথায় লুটের ‘প্যাসেজ’ দিয়েছে। লজ্জা হয়, তৃণমূলের দুর্নীতির কালিতে দাগ লেগেছে আধিকারিকদেরও। গোটা প্রশাসন ‘জগন্নাথ হয়েছিল’।
এখন অবস্থা বেগতিক। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। ঘরে ঢুকে গিয়েছেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্তারা। নেতা-কর্মীদের ওপর তাই ভরসা কমেছে। ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গ্রামবাংলা। নবান্নের অবস্থাও নড়বড়ে। সরকারের অভিসন্ধি ধরা পড়েছে। যে কোনও উপায়ে পঞ্চায়েত প্রশাসনকে কবজায় রাখতে পুলিশকে ব্যবহার করার নিদান দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। মানুষের ওপর আর ভরসা নেই। ভোট লুট করতে গেলে প্রতিরোধ তীব্র হবে। বুঝিয়ে দিয়েছে নভেম্বরের পদযাত্রা। লুটের হিসাব চাওয়ায় ফাঁপড়ে তৃণমূলীরা। গ্রামের রাস্তায় পুলিশ নামিয়ে ঘুরপথে প্রতিবাদের স্বরকেই দুর্বল করতে চায় নবান্ন। এই কৌশলও ধরে ফেলেছে গ্রামবাংলা।
আবাস যোজনায় এক সমুদ্র দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। বঞ্চিত প্রকৃত প্রাপক। ভুয়ো নামেও তোলা হয়েছে টাকা। মাত্র এক দশকেই বদলে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতকে। কিন্তু তৃণমূলের ইচ্ছা পূরণ হবে না। যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা গ্রাম সংসদের, সেই সিদ্ধান্ত কেন পুলিশ নেবে? পঞ্চায়েতের আইনকে কেন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রুটিন দায়িত্ব ছেড়ে আশাকর্মী, আইসিডিএস কর্মীরা দেখবেন ঘর! অবাক গ্রাম। এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে সিপিআই(এম)। গ্রামসভায় মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না। তাহলে গ্রাম সংসদের কাজ কি? ব্লক বা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও কাজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের কোনোরকম ভূমিকা পালনের অধিকার দেয়নি পঞ্চায়েতের আইন। জেলাগুলি থেকে খবর আসছে, আবাস যোজনার মিথ্যা তথ্য নিতে সরকারি কর্মীদের বাধ্য করা হচ্ছে।
আসলে গল্গ অন্য জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি ঘোষণা হয়েছে। এজন্য ৮হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। আটমাস স্থগিত থাকার পর আগামী ৫মাসের মধ্যে এই টাকা খরচ করতে হবে। এই ল্যাজে-গোবরে অবস্থা থেকে বেরোতে এখন পুলিশই ভরসা সরকারের। রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দেখতে বিভিন্ন রাজ্য, বিদেশ থেকেও প্রতিনিধিরা অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আসতেন। সেই সম্মানও ধুলোয় মিশিয়ে দিল তৃণমূল সরকার। বদলই একমাত্র বাঁচার পথ। গ্রামে কিন্তু সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে।
Comments :0