চাকরি বাতিলের পর বেতনের জন্য ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা পাঠিয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন!
শুক্রবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা রাজ্যের সব জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)’দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই শিক্ষা দপ্তরের জেলা আধিকারিকদের ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের বেতন নিয়ে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছে, ‘‘এসএসসি থেকে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা জেলাভিত্তিতে ডিআই’দের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকাই চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। তাই এদিন বৈঠক থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই শীর্ষ আদালতের রায়ের যেন আবমাননা না হয়ে যায়। কোনোভাবেই কোনও অযোগ্য শিক্ষক বেতন তালিকায় ঢুকে না পড়েন। আবার একইসঙ্গে কোনও যোগ্য শিক্ষক যেন বেতন থেকে বাদ না পড়েন তার জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
‘অযোগ্য’দের নামের তালিকা এখনও করে ডিআইদের কাছে পাঠাতে পারেনি এসএসসি। কিন্তু আদালতের রায়ের পর ‘অযোগ্য’দের পাশাপাশি ২০১৬ সালের নিয়োগের ‘গ্রুপ সি’ ও ‘গ্রুপ ডি’ পদের সব শিক্ষাকর্মীদের চাকরির পাশাপাশি বেতন পাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমন সঙ্কট এরআগে কখনও আসেনি। বিদ্যালয়ে আগে থেকেও বহু শিক্ষাকর্মী আছেন। এই বাতিল শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে একজন ‘যোগ্য’ শিক্ষাকর্মীর নাম ঢুকে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে। তাই সবটা মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে।’’
অতীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের তরফে বেতনের রিকুইজিশন ফরমে ‘নো স্যালারি’ কলাম থাকতো। তার কারণ, নানা কারণে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন বন্ধ করার সুযোগ থাকে। যেমন, বেতনহীন ছুটি (লিভ উইদাউট পে), স্কুল থেকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি হলে, শিক্ষক মারা গেলে এমন বিভিন্ন কারণে ‘নো স্যালারি’ অপশন থাকতো। এবার তা প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে সরিয়ে ডিআইদের কাছে পাঠিয়ে ‘স্টপ স্যালারি’ করার ব্যবস্থা হয়েছে।
দেশের শীর্ষ আদালতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের করা মামলায় ২৬হাজার ৬৫২জনের চাকরি বাতিলের রায়কে বহাল রেখে যোগ্য শিক্ষকদের আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার রায় দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে ডিসেম্বর মাস পর্যন্তই তাঁদের বেতন চালু রাখার নির্দেশ এসেছিল। তার প্রেক্ষিতেই স্কুল সার্ভিস কমিশন, দেশের শীর্ষ আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে গত ২২ এপ্রিল ডিআই(মাধ্যমিক)’দের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠায়। একইসঙ্গে জেলাভিত্তিতে ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের ভিত্তিতে দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ের পর ১৫ হাজার ৪০৩ জন ‘যোগ্য’ শিক্ষকের তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছিল। জেলা ভিত্তিতে পাঠানো তালিকার মধ্যে যেমন বাঁকুড়া জেলায় নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ ‘যোগ্য’ শিক্ষকের সংখ্যা ৬৬১ জন। একইভাবে উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় পাঠানো তালিকায় ‘যোগ্য’ শিক্ষক হিসাবে এসএসসি’র পাঠানো তালিকায় আছেন ১২৫ জন।
কিন্তু জেলাভিত্তিতে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের বেতন প্রাপ্তির তালিকা পাঠানোর পরও আদালত অবমাননার আতঙ্ক কাটছে না শিক্ষা দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের। কারণ হিসাবে বিকাশ ভবনের এক স্কুল শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘যাদের নাম তালিকায় পাঠানো হয়েছে, তারাই যে একমাত্র ‘যোগ্য’ তার কোনও অকাট্য প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। কারণ, ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ না থাকাটা বড় সমস্যা।’’ আবার একাধিক জেলা থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, সরকার ‘যোগ্য’দের তালিকা পাঠিয়েছে। কিন্তু ‘অযোগ্য’দের কোনও তালিকা এখনও পাঠাতে পারেনি। সেই তালিকা হাতে থাকলে কাজের সুবিধা হতো। কিন্তু ‘অযোগ্য’দের তালিকা হাতে থাকলে আবার তাদের বেতন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এসএসসি থেকে এখনও সেই তালিকা ডিআইদের কাছে না পাঠানোর ফলে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এদিন ডিআইদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে গোটা দায় সরকার তাদের ওপরই চাপাতে চাইছে। বৈঠক থেকে স্পষ্ট ভাষায় এসএসসি’র আধিকারিকরা ডিআইদের জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘এমন কোনও কাজ করা ঠিক হবে না, যাতে আবার নতুন করে আদালত অবমাননার দায় চাপে। আর সেটা হলে আধিকারিকদের ছুটতে হবে আদালতে।’’
education department cautious in disbursement of sallary to untainted teachers
অযোগ্যদের তালিকা নেই, যোগ্যদের বেতনে সতর্কতার নির্দেশ শিক্ষা দপ্তরের

×
Comments :0