Mamata Banarjee

স্যালাইন কাণ্ডে চিকিৎসকদেরই সাসপেন্ড করলেন মমতা, ক্ষোভ

রাজ্য

স্যালাইন কাণ্ডের দায় চিকিৎসকদের ঘাড়েই চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার, একসঙ্গে সাসপেন্ড করলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ চিকিৎসককে। 
এর আগে, ১৩ জানুয়ারি, তদন্ত রিপোর্ট সামনে আসার আগেই মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ চিকিৎসকদের দায়ী করেছিলেন প্রসূতিমৃত্যু এবং অসুস্থতার জন্য।
রাজ্য সরকার গোড়া থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিটিক্যালস’ সংস্থার স্যালাইন ‘রিঙ্গার্স ল্যাক্টেট’ সরবরাহ কেলেঙ্কারি চেপে যেতে চাইছে। এই মর্মে সরব রয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই মারা যায় রেখা সাউয়ের শিশু। গত সাতদিন ভেন্টিলেশনে ছিল এই শিশু। গত বৃহস্পতিবার সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর এই হাসপাতালে ৩২ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে মামনি রুইদাসকে বাঁচানো যায়নি। আরও তিনজনকে আনতে হয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার এই স্যালাইন ঘিরে বারবার আপত্তি তুলেছেন চিকিৎসকরা। রাজ্য উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার ঘোষণা করলেও সরবরাহ বন্ধ করেনি। আরজি করের পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কাণ্ডেও সামনে চলে এসেছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি চক্র। রাজ্য প্রশাসনের মদত নিয়ে প্রশ্ন বড় হতে থাকার সময়েই চিকিৎসকদের দায়ী করে শাস্তি দিয়ে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অথচ বিষাক্ত স্যালাইনের সরবরাহ চালু ছিল কিভাবে তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা রাজ্য প্রশাসন দেয়নি এখন পর্যন্ত।
এদিন, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন এই ঘটনার জেরে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করছে তার হাতে থাকা স্বাস্থ্য দপ্তর। তিনি চিকিৎসকদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বলেন, চিকিৎসকরা যদি সঠিক ভাবে তাদের দায়িত্ব সামলাতেন তাহলে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত প্রসুতি এবং সদ্যজাতদের বাঁচানো সম্ভব হতো। 
১৩ জানুয়ারি মুখ্যসচিব চিকিৎসকদের ওপর দায় চাপানোর পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান চিকিৎসক উৎপল ব্যানার্জি এবং মানস গুমটা। চিকিৎসক গুমটা বলেন, ‘পচা স্যালাইন করবেন তারপর বলবেন কে দিয়েছে জুনিয়ার না সিনিয়ার।’ 
যে চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁরা হলেন ডা. সৌমেন দাস (আরএমও), ডা. দিলীপ পাল (বেড ইনচার্জ),
ডা. হিমাদ্রি নায়েক (সিনিয়র ডাক্তার), ডা. মহম্মদ আলাউদ্দিন (বিভাগীয় প্রধান), ডা. জয়ন্তকুমার রাউত (এমএসভিপি), ডা. পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় (সিনিয়র রেসিডেন্ট), 
ডা. মৌমিতা মণ্ডল (পিজিটি ), ডা. ভাগ্যশ্রী (পিজিটি), ডা. সুশান্ত মণ্ডল (পিজিটি), ডা. পূজা সাহা (পিজিটি), ডা. মণীশ কুমার (পিজিটি), ডা. জাগৃতি ঘোষ (পিজিটি)।
মুখ্যসচিবের বক্তব্য, সিনিয়র চিকিৎসক অপারেশনের সময় ছিলেন না। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা অপারেশন করিয়েছেন। এদিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে একতরফা চিকিৎসকদের ওপর দায় চাপাতে মমতাও বলেছেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা থাকলে হাতেনাতে ধরতাম।’’ সব হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 
আরজি করে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার বিরুদ্ধে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে তৃণমূল এবং রাজ্য প্রশাসনের মদতে ‘থ্রেট কালচার’ ঘিরে বিক্ষোভ তীব্র হয়। চরম দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন চিকিৎসকরাই। মমতা ব্যানার্জিকে দেখা গিয়েছে অভিযুক্তদের আড়াল করে প্রতিবাদীদের দায়ী করার চেষ্টা করতে। আন্দোলনরতদের জন্য পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছিল সরকারকে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঘটনাতেও একই চেহারা সরকারের, বলছে বিভিন্ন অংশ। 

Comments :0

Login to leave a comment