বামফ্রন্ট পঞ্চায়েত গড়েছিল মানুষের হাতে পঞ্চায়েত দেওয়ার জন্য, তৃণমূলের অপরাধ মানুষের ক্ষমতা কেড়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্তা ধ্বংস করে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিআই(এম) দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলকে নিশানা সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্তার হালহকিকত নিয়ে শাসকদলকে কড়া আক্রমণ করেন তিনি। তিনি বলেন, গ্রামে নব্য ধনী শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে যারা শ্রমজীবী না পরজীবী। এদের ব্যবহার করা হচ্ছে গ্রামীণ বাহুবলি হিসেবে। এরাই শাসকদলের হয়ে ভাড়া খাটে, দাঙ্গা লাগায়, লুট করে, সিন্ডিকেট চালায়। মদ, মাংস, উৎসবের নামে মহিলাদের ওপর অত্যাচার নামিয়ে আনে। গ্রামীণ অর্থনীতি, সমাজকে ভেঙে চুরমার করছে তৃণমূল। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, যা বামফ্রন্ট আমলে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই বুনিয়াদি ব্যবস্থার মাজা ভেঙে দিচ্ছে, জানান সেলিম। সেলিমের অভিযোগ, রাজ্য গোলাবারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে তৃণমূলের আমলে। ‘‘আনিস খানের খুনের পর বলা হল এক মাসের মধ্যে সিট রিপোর্ট দেওয়া হবে। তারপর কী হল? শীতলকুচির ঘটনা কী হল? এরা মানুষ মারার প্রতিযোগিতা করছে দুই দল মিলে,’’ বলেন সেলিম।
                        
                        
‘‘আমাদের স্বাস্থ্য সূচক কেরালা, তামিলনাড়ুর পরেই ছিল। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সর্বনাশ করে দিয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে অকেজো করে দিয়ে। গণতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণের বদলে পঞ্চায়েতে ভোট লুট করে, আমলা দিয়ে পঞ্চায়েত চালানো হচ্ছে, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়ে। কেন সভ্য সমাজে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন দলের পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে না? রাজ্যের প্রধান শাসক দল পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, পৌরসভা- কোথাও বিরোধীদের পরিচালনা করতে দেবে না। একই কায়দায় কেন্দ্রের শাসকদলের ‘ডবল ইঞ্জিন’ মডেল। মণিপুরে তো ডবল ইঞ্জিন, কী পরিস্থিতি এখন সেখানে? কেন্দ্রের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেগুলো বামপন্থীদের পরামর্শে চালু হয়েছিল সেগুলো লাটে তুলে দিয়েছে’’ যোগ করেন তিনি।
একই সঙ্গে এদিন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে বামপন্থীদের দৃষ্টিকোণ ফের ব্যাখ্যা করেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘মানবসম্পদের বিকাশ, স্থানীয় সম্পদের বিকাশকরতে পারে পঞ্চায়েত। কারণ গ্রামের মানুষ বোঝেন কোন প্রকল্প কিভাবে করা হলে গ্রামের ভালো হয়। তৃণমূল এই ব্যবস্থা ভেঙেছে বলেই ‘দুয়ারে সরকার’ বলে নাটক করছে।’’ 
সেলিম গণতান্ত্রিক কাঠামো ভাঙার জন্য দায়ী করেছেন বিজেপি, তৃণমূল- দু’দলকেই। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি’র সরকার দেশের সংসদকে তুলে দিয়েছে। সংসদে মতবিনিময়, সরকারের জবাবদিহি করার পদ্ধতি লোপাট করে দিয়েছে। আর রাজ্যে প্রশাসনিক, গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙেছে তৃণমূল। প্রশাসনিক মিটিং হচ্ছে টেলিভিশনে। ধমক চমক দিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে যেন কত কাজ হচ্ছে। আসলে কাজ হচ্ছে না। সে জন্য ‘দুয়ারে সরকার’ বলতে হচ্ছে।’’ 
পঞ্চায়েতের নজরদারি কাঠামো এবং মানুষের অংশগ্রহণ তুলে দেওয়ার জন্যও সেলিম দায়ী করেছেন তৃণমূলকে। বলেছেন ‘ভিআরপি’, সাংসদদের নজরদারি কমিটি, গ্রামসভার কথা।
                        
                        
‘ভিলেজ রিসোর্স পারসন’ বা ‘ভিআরপি’ তৈরি হতো গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে। পঞ্চায়েতের কাজ দেখতে পারত। সেলিম বলেন, ‘‘ভিআরপি-দের পঞ্চায়েত দপ্তরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। সাংসদদের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটি ছিল, কার্যনির্বাহী আধিকারিক হতেন জেলা শাসকরা। সেই মিটিং হয় না। সবচেয়ে বড় কথা বছরে দু’বার গ্রাম সভা বসার কথা। সেই নিয়ম পুরো তুলে দিয়েছে তৃণমূল। কারণ জবাবদিহি করতে হলেই চুরি ধরা পড়বে।’’ 
বামপন্থীরা ইশ্তেহারে স্পষ্ট বলেছেন জনতাকে নিয়েই পঞ্চায়েত চালানোর লক্ষ্যে এই লড়াই। এদিন কংগ্রেসও ইশ্তেহার প্রকাশ করেছে। দু’বার গ্রাম সভা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
 
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0