মোদী সরকার ব্যাপকহারে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি (Kisan samman nidhi) প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গোটা দেশের প্রায় ৮ কোটি কৃষক। তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) মামলায় একথা জানিয়েছে স্বয়ং কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। এই মামলায় উত্তর দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক হলফ নামা দিয়ে জানিয়েছে, ২০২২ সালের মে-জুন মাসে পিএম কিষান নামে পরিচিত এই প্রকল্পের তহবিল থেকে দেওয়া ১১ তম কিস্তির অর্থ প্রাপক কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৬৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লক্ষতে। কৃষক মন্ত্রকেরই দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হওয়া এই প্রকল্পের তহবিলের থেকে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিল ১১ কোটি ৮৪ লক্ষ কৃষক পরিবার। এখনও পর্যন্ত ১১ টি কিস্তির টাকা পাওয়া কৃষকদের পরিবারের সংখ্যা জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রক। প্রথম কিস্তির টাকা যে সমস্ত কৃষক পরিবারদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছিল সেই সংখ্যার তুলনায় ১১ তম কিস্তির টাকা পাওয়া কৃষকদের পরিবারের সংখ্যা ৬৭ শতাংশ কমে গেছে। কানাইয়া কুমারের আরটিআই’র মামলার জবাবে একথাই আদালতকে হলফ নামা দিয়ে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক।
অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে কৃষকদের মন জয় করতে ঢাক ঢোল পিটিয়ে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন মোদী। সেই সময় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় প্রুতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে মোদী দাবি করেছিলেন কোভিড মহামারীতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্যই নাকি প্রকল্প চালু করছেন। অথচ ভোট মিটতেই ফের ক্ষমতায় বসে প্রতিটি কিস্তির ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ধাপে ধাপে কমিয়ে দিয়েছেন মোদীই। স্বয়ং কৃষি মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য এমন কথাই তুলে ধরছে। ষষ্ঠ কিস্তিতে এই প্রকল্পের টাকা পেয়েছিল ৯ কোটি ৮৭ লক্ষ কৃষক পরিবার। ৭ ম কিস্তিতে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষতে। ৮ ম কিস্তিতে আরও কমে হয় ৮ কোটি ৫৯ লক্ষ। নবম কিস্তিতে হয় ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ। দশম কিস্তিতে এই প্রকল্পের প্রাপকদের সংখ্যা আরও নেমে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬৪ লক্ষতে।
কৃষকদের প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনার এই তথ্য সামনে আসায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। কৃষকদের প্রতি মোদী সরকারের ধাপ্পাবাজি এবং প্রতারণার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। এদিনই সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারম ইয়েচুরি (Sitaram Yechuri) টুইট করে বলেছেন, এটাই হলো নির্বাচনের নিষ্ঠুর ‘জুমলা’। ২০১৯ সালের ভোটের আগে মোদী ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী কিষান প্রকল্পে প্রতিবছর কৃষক পরিবারকে তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। চমকের রাজনীতিতে অভ্যস্ত মোদী ভোটারদের মন জয় করতে এমনই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। একথা উল্লেখ করে ইয়েচুরি টুইটে বলেন এখনও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইন অধিকারের বিষয়ে কোনও কথা বলছে না। অবিলম্বে মোদী সরকারকে সি২+৫০ শতাংশ হারে ফসলের এমএসপি চালু করার ক্ষেত্রে আইনি অধিকার দেওয়ার বিষয়টি অবিলম্বে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ইয়েচুরি।
মোদী সরকারের কৃষকদের প্রতি ধাপ্পাবাজির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সারা ভারত কৃষকসভার (এআইকেএস) সভাপতি অশোক ধাওলে। তিনি বলেন, কৃষকদের প্রতি সরকারের এই আচরণ অত্যন্ত হতাশজনক। ধাওলে বলেন, ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী দুই তৃতীয়াংশ কৃষক পরিবারই এই প্রকল্পের টাকা পায়নি। এই প্রকল্পের সুবিবাধ প্রাপ্ত পরিবারগুলির সংখ্যা কেনও কমে গেল তার পিছনে যুক্তিযুক্ত কারণও দেখাতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। একথা উল্লেখ করে ধাওলে আরও বলেন, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ধীরে ধীরে এই প্রকল্পটি তুলে দেওয়ার মতলবে আছে মোদী সরকার। এই প্রকল্প কখনই এমএসপি আইনি অধিকারের বিকল্প নয়। আসলে কৃষকদের আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই প্রকল্প এনেছিল মোদী সরকার। কিন্তু তা আরও একটি জুমলা ছাড়া আর কিছুই না।
২০১৯ সালে ভোটের আগে এই প্রকল্প চালু কারার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে মোদী জানিয়েছিলেন, গোটা দেশে প্রকৃত কৃষকদের এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বছরে ৩ টি কিস্তিতে ৬০০০ হাজার টাকা দেওয়া হবে কৃষক পরিবারগুলিকে। অর্থাৎ প্রতিটি কিস্তিতে দেওয়া হবে ২ হাজার টাকা। অথচ ভোট মেটার ৩ বছরের মধ্য এই সমান্য টাকা দেওয়া থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চলেছে মোদী সরকার।
Comments :0