কৃষকের উসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি নিশ্চয়তা এবং কৃষি ঋণ মকুব প্রধানত এই দু’টি দাবিকে সামনে রেখে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্তের খানাউরিতে গত ২৬ নভেম্বর থেকে অনশন করছেন কৃষক নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়াল। ইতিমধ্যে অনশনের ৩৫ দিন অতিক্রান্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর শারীরিত অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটেছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে সারা দেশের কোটি কোটি কৃষক উদ্বিগ্ন এবং দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাঁর এই অনশন আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে সমাজের বিভিন্ন মানুষ যেমন প্রতিদিন খানাউরিতে যাচ্ছেন তেমনি প্রতিদিনই নানা জায়গা থেকে দলে দলে কৃষকরা অনশনস্থলে হাজির হচ্ছেন। ডালেওয়ালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও এবং তাঁর জীবন সংশয় হলেও তিনি কোনোরকম সরকারি চিকিৎসা সহায়তা নিতে অস্বীকার করেছেন। বলেছেন কেন্দ্রীয় সরকার যদি কৃষকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া দাবি নিয়ে অবিলম্বে আলোচনার ব্যবস্থা না করে তাহলে তিনি অনশন প্রত্যাহার করবেন না, মৃত্যু পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সম্ভব হয়নি। ডালেওয়ালকে ঘিরে থাকা হাজার হাজার কৃষকের জমায়েত ঠেলে সরকারি লোকজন অনশন স্থলে পৌঁছাতেই পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় গোটা দেশের কৃষক জনতা এবং সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার পুরোপুরি নিরুত্তাপ, নিরুদ্বেগ। কৃষক আন্দোলনের প্রতি তাদের এতটাই অবজ্ঞা-উপেক্ষা যে অনশন নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাববার অবকাশ নেই। নীরবতার মধ্য দিয়েই মোদী সরকার বুঝিয়ে দিতে চাইছে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে, তাদের দাবি নিয়ে তারা কোনও পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়। তিন বছর আগে রাজধানীর উপান্তে বৎসরাধিক ধরে চলা সেই ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের কাছে আংশিক নতি স্বীকার করে কয়েকটি দাবি মেনে নেবার পর থেকে মোদী সরকারের কাছ থেকে উপেক্ষা আর অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই পায়নি কৃষকরা। সেইদিন কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার পর যে লিখিত প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আন্দোলন প্রত্যাহৃত হয়েছিল তার মধ্যে কৃষি ও কৃষক বিরোধী তিন কালা আইন প্রত্যাহার ছাড়া আর কোনও প্রতিশ্রুতি সরকার রক্ষা করেনি। কৃষকদের সঙ্গে বেইমানি করেছে মোদী সরকার। তাই সেই পর্বের আন্দোলন প্রত্যাহার হলেও বন্ধ হয়নি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চলছে। প্রধান দাবিই হলো এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টি। ডালেওয়ালের অনশনও সেই দাবিতেই।
ইতিমধ্যে অনশনে থাকা অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আলোচনা তো দূরের কথা কেউ টু শব্দটিও উচ্চারণ করেনি। অথচ দেখা গেল আদালত বন্ধ থাকার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অবসরকালীন আদালত খুলে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই বিষয়ে শুনানির ব্যবস্থা করে। দুই বিচারপতি দালেওয়ালের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে পাঞ্জাব সরকারের ভূমিকাকে আক্রমণ করলেও আশ্চর্যজনকভাবে যে কারণে তাঁর অনশন এবং স্বাস্থ্যের অবনতি সেটা নিয়ে বিচারপতিরা কিছুই বললেন না। উলটে পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রসঙ্গ তোলার পর বিচারপতিরা কার্যত রেগে যান।
অনশনরত কৃষক নেতার যদি চরম কিছু হয়ে যায় তাহলে দেশজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেটা যে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে মোটেই ভালো হবে না সেটা কারও অজানা নয়। সেই জন্যই কি অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য বা ডালেওয়ালকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর এত তৎপরতা। আন্দোলন দুর্বল মলে মোদী সরকারের সুবিধা হবে এটা বুঝতে কি খুব অসুবিধা হচ্ছে?
Farmers agitation Dallewal
সরকারকে আড়াল করা যাবে না
×
Comments :0