শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার সময় চৌরাস্তার মোড়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারায় বড়িশা হাইস্কুলের ক্লাস টু’র পড়ুয়া সৌরনীল সরকার। গুরুতর জখম অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সৌরনীলের বাবা সরোজ সরকার। তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছে।
এই ঘটনার আকস্মিতকায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্কুলের অন্যান্য পড়ুয়াদের অভিভাবক এবং পথচলতি জনতা। ভাঙচুর চালিয়ে আগুণ লাগিয়ে দেওয়া হয় ঘটনাস্থলের অদূরে থাকা চৌরাস্তা ট্র্যাফিক গার্ডের অফিস। আগুণ লাগানো হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি এবং বাইকেও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ঘাতক ট্রাকটিকে আটকালেও পরে ছেড়ে দেয় উপস্থিত পুলিশকর্মীরা। সেই ট্রাকটিকে পরবর্তীকালে সাঁতরাগাছি থেকে আটক করে হাওড়া জেলা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় চালককে।
অপরদিকে ট্র্যাফিক গার্ডে ভাঙচুর এবং আগুণ লাগানোর অভিযোগে ১২জনকে গ্রেপ্তার করে ঠাকুরপুকুর থানায় রাখা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মহিলা এবং খাবার ডেলিভারি সংস্থার কর্মীরাও রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশ বড়িশা হাইস্কুলের সামনে থেকে অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করেছে। লাঠচার্জ করা হয়েছে, এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে। স্কুলের মধ্যেও কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
স্কুলের শিক্ষকমহলের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই ২টি বেসরকারী স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলদুটির পড়ুয়াদের সুরক্ষার বিষয়ে সদা তৎপর কলকাতা পুলিশ। আর্থ সামাজিক ভাবে শক্তিশালী জায়গায় থাকা পরিবারের পড়ুয়ারাই মূলত স্কুলদুটিতে পড়াশোনা করে। অপরদিকে আর্থ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের পড়ুয়ারাই মূলত বড়িশা স্কুলে লেখাপড়া করেন।
স্কুলের অভিযোগ, সেই কারণেই বড়িশা হাইস্কুল ডায়মন্ড হারবার রোডের মতো ব্যস্ত এলাকায় হলেও সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা নেই।
এদিন ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন বেহালা পশ্চিম এলাকার সিপিআই(এম) নেতা কৌস্তভ চ্যাটার্জি। সৌরনীলের মৃত্যের প্রতিবাদে পুলিশকে ধিক্কার জানিয়েছে এসএফআই জোকা ঠাকুরপুকুর লোকাল কমিটির ছাত্র কর্মীরাও।
সংগঠনের কর্মীরা এলাকায় মিছিল ও ডায়মন্ড হারবার রোডে প্রতিকী অবরোধও করেন।
এদিনের ঘটনার প্রতিবাদে পৃথক ভাবে প্রেস বিবৃতি জারি করেছে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলা কমিটি। ছাত্র যুবদের তরফে পুলিশি ধরপাকড়ে ধিক্কার জানিয়ে ধৃত প্রতিবাদীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেও ধিক্কার জানিয়েছেন ছাত্র যুবরা। ছাত্র যুবদের অভিযোগ, বেপরোয়া গাড়ির ফলে মৃত্যুমিছিল রুখতে ব্যর্থ কলকাতা পুলিশ। কিন্তু প্রতিবাদী অভিভাবকদের জেলে পুরতে তাঁদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
Comments :0