PRACHANDA

নেপালে নতুন সরকার

আন্তর্জাতিক সম্পাদকীয় বিভাগ

Prachanda nepal india usa china communism

অনেক টালবাহানা এবং জলঘোলার পর অবশেষে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন প্রাক্তন গেরিলা যোদ্ধা নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী কেন্দ্রের নেতা পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড। প্রধানত অপর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি ইউএমএল’র নেতা কে পি সিং ওলির সমর্থনেই তৃতীয়বারের জন্য প্রচণ্ড প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পেলেন। অবশ্য উভয় ‍‌প‍‌‍‌ক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া অনুযায়ী পুরো মেয়াদে প্রচণ্ড প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। মাঝপথে কোনও একসময় দায়িত্ব নেবেন ওলি। নেপালের রাজনীতিতে এমন ক্ষমতা ভাগাভাগির ঘটনা অতীতেও ঘটেছে।


নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর নবগঠিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নানা ভাঙাগড়া-উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে স্থিতিশীল অবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বামপন্থীরাই হয়ে উঠেছে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু বামপন্থীদের মধ্যে বহু ভাগাভাগির জেরে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। প্রচণ্ডর নেতৃত্বে একসময় মাওবাদীদের সশস্ত্র লড়াই নৈরাজ্য তৈরি করেছিল। পরে তারা গণতান্ত্রিক পথে মূল ধারায় ফিরে আসে। একাধিক বামপন্থী দল মি‍‌লে একটি দল তৈরি করে আবার ভেঙে আলাদাও হয়ে যায়। বিগত সংসদীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বামপন্থীরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়লেও নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের ফ‍‌‍‌লে ওলির সরকারের পতন হয়।

বামপন্থীদের একাংশ দক্ষিণপন্থী নেপালী কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন সরকার গঠন করে। শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন সরকারের শরিক ছিল প্রচণ্ডর দল। এবারের নির্বাচনে নেপালী কংগ্রেসের নেতৃত্বে পাঁচ দলের জোটের শরিক হিসাবে লড়াই করেছে প্রচণ্ডর দল। নির্বাচনে কোনও দল বা জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফ‍‌লে সরকার গঠনে জটিলতা তৈরি হয়।


প্রচণ্ডর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি মানেনি দেউবার নেপালী কংগ্রেস। তাই বোঝাপড়া হয় ওলির সিপিএনইউএমএল’র সঙ্গে। তার ভিত্তিতেই প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রচণ্ড। প্রচণ্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী; আশাপ্রকাশ করেছেন দু’দেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব উন্নত হবে। বাস্তবে সেটা কতটা হবে বলতে পারবে ভবিষ্যৎ।
প্রসঙ্গত, প্রচণ্ডর সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের সম্পর্ক মসৃণ হবে এমনটা ধারণা করা কঠিন। কারণ ইতিমধ্যে প্রচণ্ড বলে রেখেছেন ভারত-নেপাল শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি পুনর্বিন্যাসের কথা। 

১৯৫০ সালের এ‍‌ই চুক্তির ফলে দু’দেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রচণ্ড বলেছেন ইতিহাসে বর্জিত কিছু বিষয় নিয়ে দু’দে‍‌‍‌শের কূটনৈতিক সমাধানের সময় এসেছে। এই প্রশ্নে বিরোধের একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তেমনি ওলি অভিযোগ করেছেন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার সক্রিয়তা শুরু হয় যখন তাঁর আমলে নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র সংসদে সর্বসম্মতিতে পাশ হয় তখন থেকে। নতুন মানচিত্রে ভারতের অধীনে থাকা লিলুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা অঞ্চলকে নেপালের অংশ বলে দেখানো হয়েছে।


বস্তুত নেপালের রাজনীতিতে ভারত বিরোধী মনোভাব দানা বাঁধছে অনেকদিন ধরে। নেপাল সীমান্তে মদেশীয়দের অবরোধে ভারতের মদত ভারতের সঙ্গে নেপালের দূরত্ব অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তখন বাধ্য হয়ে নেপাল চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জোগান বাড়ায়। তাছাড়া নেপালের সংবিধান রচনার সময় ভারতে হস্তক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ আছে। বস্তুত প্রতিবেশী দেশে আধিপত্যবাদী বা দাদাগিরির মনোভাব মোদী জমানায় এতটাই বেড়েছে যে নেপাল ছাড়াও মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভূটান প্রভৃতি দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সেই ফাঁক দিয়ে সেসব দেশে প্রভাব বেড়েছে চীনের। মোদী সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও আধিপত্যবাদী মানসিকতাই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব দুর্বল করেছে। আশা করা যায় মোদী সরকার নতুন করে তেমন ভুল করবে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment