সুমিত ভট্টাচার্য
মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থরক্ষাকারী নীতি যখন শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে, তখন আক্রান্ত শ্রমজীবী জনগণের জোটবদ্ধ হয়ে সেই নীতিগুলির বিরুদ্ধে এই নীতি প্রণয়কারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে শামিল হওয়া কোনো নতুন বিষয় নয়। ইতিহাসের পাতায় এমন অসংখ্য যূথবদ্ধতার নজির লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুদুর অতীতের কথা বাদ দিলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে এমন দুটি যূথবদ্ধতার নিদর্শন আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। একটি হল গত শতাব্দীর নব্বই দশষের গোড়ায় নয়া উদারবাদী সংস্কার প্রক্রিয়া চালু হওয়ার অব্যবহিত পর থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং জাতীয় ফেডারেশনগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্কার নীতির ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী জনগণকে সংগঠিত করে সংগ্রাম-আন্দোলনের পথে অবতীর্ণ হয়।
এই প্রক্রিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই এখনও জারি রয়েছে এবং গত তিন দশকে ২১টি সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত হয়েছে। এই লড়াই সংস্কার প্রক্রিয়ার চাকাকে উল্টোদিকে ঘোরাতে সক্ষম না হলেও বহু ক্ষেত্রেই গতি শ্লথ করা সম্ভব হয়েছে। যূথবদ্ধতার অপর অনুপম নিদর্শনটি হল পাঁচ শতাধিক কৃষক সংগঠনের যৌথ মোর্চা। যে মোর্চার অনমনীয় দৃঢ়তা ও লৌহ কঠিন ঐক্য কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বাধ্য করেছে পিছু হটতে। কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে প্রণীত কৃষি আইন বাতিল করার যে দাবি উত্থাপিত হয়েছিল, তা অর্জন করতে সক্ষম হয় সংগ্রামী যৌথ মোর্চা।
এই ধরনের যূথবদ্ধতার অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যেও শ্রমিক, কর্মচারী ও শিক্ষকদের যুক্ত আন্দোলনের মঞ্চ ১২ই জুলাই কমিটির একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের যুক্ত আন্দোলনের এই মঞ্চটির রাজ্যের ব্লক স্তর পর্যন্ত স্তরভিত্তিক সক্রিয় স্থায়ী সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। অপরাপর যৌথ প্রক্রিয়ার মতোই গত শতাব্দীর ষাটের দশকের উত্তাল পরিস্থিতির গর্ভে এই যুক্ত মঞ্চটির আত্মপ্রকাশ ঘটলেও, পরবর্তী দশকে রাজ্য পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও এর অস্তিত্ব বিলীন হয়নি। বরং রাজ্যের অভ্যন্তরে বিরাজমান গণতান্ত্রিক বাতাবরণ ব্যবহার করে নিজ শক্তিকে সংহত করেছে এবং দেশব্যাপী নয়া উদারবাদী সংস্কার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থেকেছে।
২০১১ সালের পরবর্তী পবের রাজ্য পরিস্থিতির অভ্যন্তরে পুনরায় ‘নেতি’র সমাহার ঘটতে শুরু করে। স্বভাবতই কেন্দ্র থেকে ব্লক পর্যন্ত বিস্তৃত কাঠামোকে ব্যবহার করে ‘নেতি’র বিরোধী ব্লক পর্যন্ত বিস্তৃত কাঠামোকে ব্যবহার করে ‘নেতি’ বিরোধী সংগ্রামে শামিল হতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ করা হয়নি। পরিস্থিতি উপযোগী ভূমিকা পালনের সক্ষমতার ফলেই, শক্তি ক্ষয়ের পরিবর্তে নতুন শক্তি সংযোজিত হয়েছে এই স্থায়ী যুক্ত মঞ্চে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কর্মরত কর্মচারী সংগঠনগুলির যৌথ কমিটিও ১২ই জুলাই কমিটির মঞ্চে শামিল হয়েছে। ফলে ব্লক প্রশাসনিক কাঠামো থেকে আরও নিচে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এর সাংগঠনিক কাঠামো।
শুরুতেই বলা হয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার নিয়ন্ত্রিত মধ্যবিত্ত কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের যুক্ত আন্দোলনের এটি একটি স্থায়ী মঞ্চ। স্বভাবতই সুনির্দিষ্ট দাবি সনদ ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনার সময় উভয় অংশের গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলিকে একত্রিত করে দাবিসনদ প্রস্তুত করা হয়। তাই আন্দোলনও সর্বদাই হয় দ্বিমুখী।
১৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও বিধানসভা অভিযানের কর্মসূচিকে সামনে রেখে যে দাবি সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে, সেখানেও এই বৈশিষ্টের কোনো অন্যথা হয়নি। মোট ২৭ দফা দাবির মধ্যে রাজ্য সরকারের বিচার্য দাবির সংখ্যা ১০টি। বাকি ১৭টি দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের বিচার্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। রাজ্যপাল যেহেতু একাধারে রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক প্রধান এবং কেন্দ্রীয় সরকারেরও প্রতিনিধি, তাই দাবি সনদ সম্বলিত স্মারকলিপি তাঁর কাছেই পেশ করা হবে, যাতে তিনি দাবিগুলি সম্পর্কে উভয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। রাজ্যপালকে স্মারকলিপি প্রদানের পাশাপাশি বিধানসভা অভিযান করা হবে কারণ, এই সময়ে বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলছে। রাজ্য কোষাগার থেকে বেতন পান এমন অংশের ন্যায্য দাবিগুলি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত নেতিবাচক মনোভাব সংশ্লিষ্ট অংশের মধ্যে যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, তার উত্তাপ বিধানসভা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। রাজ্য সরকারের বিচার্য দাবিগুলির মধ্যে এক নম্বর দাবিটি হল, কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া মহার্ঘভাতা অবিলম্বে প্রদানের দাবি। যার পরিমাণ ছিল ৩৫ শতাংশ।
ভারতের আর কোনো অঙ্গরাজ্যের কর্মচারীদের ক্ষেত্রেই এত বিপুল পরিমাণ বকেয়া নেই। যে ৩৫ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘভাতা প্রদানের দাবি জানানো হচ্ছে, তা হল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকরী হওয়ার পর থেকে প্রাপ্য মহার্ঘভাতা বকেয়া পরিমাণ। প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ আরও বেশি। কারণ মহার্ঘভাতার বঞ্চনা শুরু হয়েছে ২০১১ সাল থেকেই। ঐ বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে পেশ করা ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেট প্রস্তাবনায় কর্মচারী ও শিক্ষকদের প্রদেয় ১০ শতাংশ মহার্ঘভাতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছিল। সেই সময় মোট বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পরে সেই ১০ শতাংশ মহার্ঘভাতা কর্মচারী ও শিক্ষকরা পাননি। বঞ্চনার শুরু সেখান থেকেই।
অথচ ঐ নির্বাচনের ঠিক আগে রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী (বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী) বিভিন্ন সভায় জোর গলায় বলতেন যে তাঁরা ক্ষমতায় এলে মহার্ঘভাতার স্থায়ী আদেশনামা প্রকাশ করবেন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার মহার্ঘভাতা ঘোষণা করলেই, একই সময় থেকে স্থায়ী আদেশনামার ভিত্তিতে এই রাজ্যের কর্মচারী ও শিক্ষকরা মহার্ঘভাতা এবং পেনশনার্সরা মহার্ঘ রিলিফ পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক বিপরীত। স্থায়ী আদেশনামা তো দূরের বিষয়, বকেয়ার পরিমাণ শুরু থেকেই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময় কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুসরণ করে সাধারণভাবে বছরে দু’কিস্তি মহার্ঘভাতা দেওয়া হত। কোনো বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দু’কিস্তি মহার্ঘভাতা দেওয়া সম্ভব না হলে, পরবর্তী বছরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া হত। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় প্রাপ্ত মহার্ঘভাতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, তা ২০১১ উত্তরপর্বের মতো ভয়াবহ চেহারা কখনও হয়নি। সর্বোপরি বামফ্রন্ট সরকারই এই দাবির স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৯ সালে এবং সর্বদাই কর্মচারী ও শিক্ষকদের এই ন্যায্য দাবিকে সম্মানজনক স্বীকৃতি দিয়ে, কখনও বিলম্ব হলে নিয়মরক্ষার সাথে তার কারণ সমস্ত শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠনের কাছে ব্যাখ্যা করা হতো।
২০১১ সালের পরে শুধু বকেয়া মহার্ঘভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেল তা নয়, এই দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিরও সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে গেল। অধিকারের অস্বীকৃতি, উপেক্ষার মনোভাব, অপমানজনক মন্তব্য— সব মিলিয়ে এক চূড়ান্ত অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হলো মহার্ঘভাতাকে কেন্দ্র করে। বছরে যে এক কিস্তি মহার্ঘভাতা শুরুতে দেওয়া হতো, তাও কেন্দ্রীয় হার অনুযায়ী না দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘোষণা করা হতো। অথচ কর্মচারী শিক্ষকদের বহু লড়াইয়ের অর্জিত ফসল হলো কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘভাতা। কারণ অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের ভিত্তিতে মহার্ঘভাতার হার নির্ধারিত হয়। যা সারা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
মহার্ঘভাতা সম্পর্কে আদালতের বহু চর্চিত রায় আসলে ২০২০ পূর্ববর্তী সময়ে যে বিপুল পরিমাণ বকেয়া ছিল তাকে কেন্দ্র করেই। এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট মহার্ঘভাতাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সরকার মানতে নারাজ। তাই সরকার ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে যা উল্লেখযোগ্য তা হলো ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে গঠিত হওয়া পঞ্চম বেতন কমিশন, তাদের সুপারিশেই মহার্ঘভাতাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল ও কলকাতা হাইকোর্টের রায়েও পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ উল্লেখিত হয়েছে। ২০২০ সালে ১ জানুয়ারি থেকে বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত যে বকেয়া পড়েছিল, তা তো রইলোই। ২০২০ সালের পর থেকে শুরু হলো বঞ্চনার নতুন অধ্যায়। যা ৩৫ শতাংশে পৌঁছে ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যত বেতনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। কারণ বেতন কমিশন চালু করার সময় বাড়ি ভাড়া ভাতার ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমিয়ে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
২০২২ সালে কোনো মহার্ঘভাতা দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে বাজেট পেশ করার সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো চিরকুটের ভিত্তিতে অর্থ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী আগেরও মাত্র ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণা করলেন।
মোট বকেয়ার ১২ ভাগের একভাগ মাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আরও এক কিস্তি মহার্ঘভাতা খুব শীঘ্রই ঘোষিত হবে। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির হার অনুযায়ী তার ন্যূনতম পরিমাণ ৪ শতাংশ হবেই। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সাথে ফারাক বাড়বে, কমবে না। দ্বিতীয়ত বাজেটের সময় মহার্ঘভাতার ঘোষণা যে কোনো পূর্ব পরিকল্পনার ফসল নয়, তার প্রমাণ এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান বাজেটে রাখা হয়নি।
মূলত মহার্ঘভাতাসহ আরও কয়েকটি জরুরি দাবি নিয়ে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি, এবিটিএ, এবিপিটিএ সহ আরও অনেকগুলি সংগঠন যৌথ মঞ্চ গড়ে তুলে ধারাবাহিক অভিযান, বিকাশভবন অভিযান, বিধানসভা অভিযান, কর্মবিরতি ও ধর্মঘট প্রতিপালিত হয়েছে। রাজ্য সরকার বল প্রয়োগ করে ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দমন করতে চেয়েছে প্রতিবাদ আন্দোলন। কিন্তু পারেনি। বরং শুরুর দিকে যাঁরা ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হলেও প্রশাসনিক আক্রমণের ভয়ে গুটিয়ে ছিলেন, ধারাবাহিক আন্দোলনের উত্তাপে তাঁরাও সাহস সঞ্চয় করেছেন। আন্দোলনের পথে নেমেছেন।
খুব স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনের বৃত্তও প্রসারিত হচ্ছে, একাধিক কেন্দ্রও তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতিই এই একাধিক কেন্দ্রকে এক জায়গায় এনে বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনের বাস্তবতা তৈরি করেছে।
মহার্ঘভাতার মতোই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিলের দাবি। যা কেন্দ্রীয় সরকারের বিচার্য বিষয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিও সরকারের আমলে এই পেনশন প্রকল্প সংক্রান্ত আইন তৈরি হয়, এবং কার্যকরী হয় ২০০৪ সাল থেকে। এর ফলে অবসরকালীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পেনশন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, তার পরিবর্তে শেয়ার বাজারের ওঠা-নামার ওপর নির্ভরশীল একটি ব্যবস্থা আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৪ সালের পরে কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে যাঁরা নিযুক্ত হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্য সরকারও ঐ একই সময়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করে। পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্ট সরকার এই প্রকল্প চালু করতে অস্বীকার করে। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের কর্মচারীরা যাঁরা এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন অবসর গ্রহণ করেছেন। অবসরকালীন সময়ে পেনশন হিসেবে তাঁরা হাতে যা পাচ্ছ্নে তার পরিমাণ পুরনো ব্যবস্থায় প্রাপ্য পেনশনের ভগ্নাংশ মাত্র। এই নয়া পেনশন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে লড়াই শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই। আজ তা আরও গতিশীল হচ্ছে। এমনকি বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকারও পুরানো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাইছে।
এই দুটি মূল দাবির পাশাপাশি শূন্যপদ পূরণ, অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ প্রভৃতি দাবি রয়েছে যা উভয় সরকারের কাছেই উত্থাপন করা হচ্ছে। রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও বেসরকারিকরণ বন্ধ করার মতো সাধারণ মানুষের স্বার্থবাহী দাবিও। এক কথায় বলা যায় নয়া উদারবাদী অর্থনীতির কুফলগুলির বিরুদ্ধে মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের জোটবদ্ধ সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হতে চলেছে ১৭ ফেব্রুয়ারি। যুগপৎ হুঁশিয়ারি দেওয়া হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে।
Comments :0