TEESTA SEETALWAD IN KOLKATA

বিদ্বেষের রাজনীতি আড়াল করছে তীব্র বৈষম্যকে, আহ্বান প্রতিরোধের

রাজ্য

TEESTA SEETALWAD COMMUNALISM BJP RSS

সাংবিধানিক গণতন্ত্র বড় বিপদের মুখে। আর্থিক বৈষম্য চরমে পৌঁছেছে। জীবিকার দাবি আড়াল করতে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতিকে ছড়ানো হচ্ছে। একেবারে পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে আটকাতে হবে এই শক্তিকে। শনিবার কলকাতায় এই মর্মে আহ্বান জানিয়েছেন সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামের অন্যতম মুখ শেতলবাদকে কিছুদিন আগেই জেলে ভরেছিল গুজরাট সরকার। মুক্তির পর এদিনই প্রথম কলকাতায় বক্তব্য রেখেছেন তিনি। গুজরাট গণহত্যার বিচারের দাবিতে লড়াইয়ের কারণেই জেলে ভরা হয়েছিল তাঁকে। 

শনিবার ইরান সোসাইটির উদ্যোগে ভারতীয় সংবিধান ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন শেতলবাদ। বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি, অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ, শভিনেতা বাদশা মৈত্র, সমাজকর্মী-প্রাবন্ধিক অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি। সঞ্চালনা করেন শাহিদ ইমাম।

কর্পোরেট-হিন্দুত্ব প্রসঙ্গে শেতলবাদ বলেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিডিয়া। মানুষের মগজে বিদ্বেষের মনোভাব গেঁথে দেওয়ার কাজে সহায়ক হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে পরিবর্তন করার কাজ সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অধিকার যে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তা ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুজরাট এবং উত্তর প্রদেশে কোভিডের পরিণতি মারাত্মক হয়েছে। হাসপাতালের দরজা বন্ধ ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। অক্সিজেন ছিল না। যারা এক ফোনে বেড পান তারাই চিকিৎসা পেয়েছেন। এই দুই রাজ্যের ভোটেই দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিপর্যয়ের আলোচনা নেই।

বিজেপি-আরএসএস’র অগ্রাধিকার কী, উদাহরণ দিয়ে বলেছেন শেতলবাদ। আসামের এনআরসি’র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আসামে গরিব পরিবারের কন্যা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গিয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভোট দিয়েছে। তখন পদবী বদলে গিয়েছে। আগের নামের নথি নেই কোথাও। এবার তাকেও অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়েছে আসামের এনআরসি। বিজেপি সরকারের কাজে খরচ পড়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিদ্বেষের রাজনীতির শিকার কেবল মুসলিমরা হননি। হয়েছেন হিন্দুরা, তফসিলি জাতির বহু মানুষ, বিশে করে মহিলারা। এখন আবার নতুন করে এনআরসি তৈরি করবে বলছে আসামের বিজেপি সরকার। এই রাজনীতিই সারা দেশে কায়েম করতে চাইছে। 

অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবীশ আলোচনায় বলেছেনদেশের বৈচিত্র্যময় সমাজকে বদলে দিতে স্বাধীনতার আগে হিন্দুমুসলমান নিয়ে যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই পুরানো তত্ত্ব স্বাধীনতার ৭৫বছরের পর আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতাসংবিধান রচনার মধ্যে দিয়ে বৈচিত্র্যময় ভারতের জন্ম হয়েছিলতাকে নতুন কায়দায় ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, ধান্দার ধনতন্ত্র রাজ করছে। সরাসরি রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে, টাকা ঢালছে।

অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি বলেছেনদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার থেকেও খারাপ হয়েছে। এখন পরোক্ষভাবে সংবিধান ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। বাক-স্বাধীনতাকে আটকানো হচ্ছেরাষ্ট্রের বিরোধিতা করলে সমাজকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত শনিবারই গুজরাটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র বলেন, যাঁরা গুজরাটের নিন্দা করছেন তাঁদের গুজরাটে থাকার অধিকার নেই। 

অশোক গাঙ্গুলি বলেছেনদেশের নানা ভাষার মানুষকে রক্ষা করতে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে যুক্ত করা হয়েছে। যাতে নিজের কথা বলতে পারেননিজের মতামতনিজের ভোট পছন্দের মানুষকে দিতে পারেন তার জন্য সংবিধানে গণতন্ত্রকে রাখা হয়েছে। মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করে এক ধর্ম-এক দেশ প্রচার মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়ানো হচ্ছে। অভিনেতা জয়দীপ মৈত্র ওরফে বাদশা বলেছেনরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে। মানুষের সেই ভয়কে জয় করার রক্ষাকবচ কেন সংবিধানে নেই? এই ভয়ের পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শাসকদল তার এজেন্ডা কার্যকর করতে চাইছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলকেই একত্র হয়ে লড়াই করতে হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment