Syria earthquake

সিরিয়ায় সাহায্য নয় আমেরিকার, উদ্ধারে আসেনি যুদ্ধের মদতদাতারা

আন্তর্জাতিক

সোমবারের ভূমিকম্পে দক্ষিণ তুরস্কের পাশাপাশি বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম সিরিয়াও। তুরস্কে উদ্ধারকাজে দেশের ব্যবস্থা ছাড়াও সহায়তা করছে বিদেশের বিভিন্ন সরকারও। কিন্তু সিরিয়ায় উদ্ধারের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক কারণে। সিরিয়ার আসাদ সরকারকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এমনকি এই মহা বিপর্যয়ের সময়েও মার্কিন প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে কাজ করার ‘কোনও প্রশ্নই ওঠে না’। সিরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া মার্কিন অবরোধ জারি রয়েছে। মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, সিরিয়ায় উদ্ধারে সহায়তার প্রশ্ন ‘জটিল’। ব্রিটিশ সরকার রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এমন এমন জায়গায় এই বিপর্যয় ঘটেছে যেখানে পৌঁছোনোই কঠিন। আন্তর্জাতিক সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। 


গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার যে এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছে তার একাংশ বিদ্রোহীদের দখলে। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা অন্তত ৭৯০। আবার, সিরিয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশে মৃত্যু হয়েছে ৮১২ জনের। এই দুই হিসাবে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। আলেপ্পো, ইদলিবের বিভিন্ন শহরে ধ্বংস্তূপের তলায় পড়ে আছেন কয়েকশো মানুষ। তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইদলিবে উদ্ধারকারী বাহিনীর তরফে বলা হয়েছে যেভাবে বাড়িঘর ভেঙেছে উদ্ধারের কাজ শেষ করতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। আশঙ্কা, প্রাণহানি বাড়বে। উদ্ধারকারীদের হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর যথেষ্ট যন্ত্রও নেই। এক এলাকা থেকে যন্ত্র নিয়ে যেতে হচ্ছে অন্য এলাকায়। এমনকি এক শহর থেকে অন্য শহরে। উদ্ধারকারী আলবাদুল্লাহ জানিয়েছেন, খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার চেষ্টা চলছে। এখনও কয়েকশো মানুষ চাপা পড়ে আছেন। তার মধ্যেই বৃষ্টি পড়ছে, প্রবল ঠান্ডা। উপরন্তু ছোটবড় ২০০ অনুকম্পন হয়েছে। হেলে যাওয়া বাড়ি একেবারেই ভেঙে পড়েছে সেই ধাক্কায়। রেড ক্রসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘মানুষ আতঙ্কে বিপর্যস্ত, তারা অসহায়’। 
উত্তর পশ্চিমের তুরস্ক সীমান্ত ঘেঁষা এই অঞ্চলগুলিতেই আসাদ-বিরোধী সশস্ত্র বাহিনীকে তৈরি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের পশ্চিমী মিত্ররা, ন্যাটো, তুরস্ক নিজেও। জাবাত-উল নুসরা এবং আইসিসের মতো বাহিনীকে বাইরে থেকে অস্ত্র জোগান দেওয়া হয়েছিল সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ে। কিন্তু সেই সংঘাতে গৃহহীন মানুষ যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সহায়সম্বলহীন তখন এই শক্তিগুলি আর পাশে নেই। বিদ্রোহী ‘প্রশাসনের’ নিয়ন্ত্রণে থাকা হোয়াইট হেলমেট উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওই অঞ্চলে আগেই ঘরছাড়া মানুষের জন্য স্বাভাবিক সময়ে সাহায্য আসত তুরস্কের গাজিয়ানটেপ থেকে। সেখানেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সহায়তার কেন্দ্র। সেই শহরই এমনভাবে বিধ্বস্ত যে সাহায্য আনাও খুব কঠিন। 


সিরিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবিক সাহায্যের সমন্বয়কারী এল-মুস্তাফা বেনলামিল বলেছেন, ‘সিরিয়ার ওই অংশে শহরগুলি এমনিতেই পুরানো শহরের অবশেষ মাত্র। এর পরে যা হয়েছে তাতে বাড়িকে আর বাড়ি বলা যায় না। কেউ আর ফিরতে চাইবে না। সঙ্কটের মধ্যে সঙ্কট।’ 
সিরিয়ার সরকারি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা, ইদলিবে সরকারি উদ্ধারকারীরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, আলজেরিয়া এই উদ্ধারকাজে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। ইজরায়েলের কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে সিরিয়া সরকার। 
আলেপ্পোর জিন্দিরিসে কর্মরত আলোকচিত্রী খলিল আশয়াই সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বলেছেন, গৃহযুদ্ধের দশ বছরেও এমন ভয়াবহ দৃশ্য তিনি দেখেননি। এই আলোকচিত্রীর মা-বাবা থাকেন সীমান্তের ওপারে তুরস্কের আন্তাকায়ায়। তাঁরা নিখোঁজ। সেখানেও ভূকম্পে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment