2023 ODI World Cup

বিরাট-রাহুলের ব্যাটে জয় শুরু ভারতের

খেলা

2023 ODI World Cup


ইতিহাস ঘূরে ফিরে আসে! রবিবারও এল এম চিদম্বরম স্টেডিয়ামে। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ রানে তিন উইকেট হারিয়েছিল ভারত। শেষ অবধি আর ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি। অল্প কয়েক রানের জন্য ফাইনালে উঠতে না পেরে বিশ্বজয় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। সেদিনের ছবি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের ‘আজও’ দুঃস্বপ্ন। ভাবলেই তাঁরা আঁতকে ওঠেন! একই পরিস্থতির সম্মুখীন হয়েছিল এদিনও। মাত্র ২০০ তাড়া করতে দু’রানে তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। সুইংয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করে শূন্য রানে প্যাভিলয়নে ফিরে গিয়েছেন রোহিত শর্মা, ঈশান কিষান ও শ্রেয়স আইয়ার। আফটার শকে উদ্ভাসিত চেন্নাইয়ের গ্যালারি স্তদ্ধ হয়ে গিয়েছিল মুহূর্তে। পিন পড়লেও সেই শব্দ শোনা যেত! ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হারের ভ্রুকুটি নাচছিল টিম ইন্ডিয়ার ঘাড়ে।
তখনও ক্রিজে ছিলেন চাপের ম্যাচে বড় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভরসার নাম বিরাট কোহলি। সঙ্গে ছিলেন ‘পরিণত’ কেএল রাহুল। তাই, মাঠ ছেড়ে বের হননি কোনও ক্রিকেট অনুরাগী। এরপর যা হলো, তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলেন তাঁরা। স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে এনে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়, ভারতীয় ডাগআউটকে শিক্ষিত করলেন বিরাট-কোহলি জুটি। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের ১৬৪ রানের জুটিতে ভারতের জয়ের পথ মসৃণ হয়। রাহুলের সঙ্গে হার্দিক (১১) বৈতরণী পার করতেই জয়ের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্যালারি জুড়ে। স্বস্তির হাসি ফোটে রোহিত শর্মা ও ভারতীয় কোচ রাহুলের দ্রাবিড়ের মুখে। 
৫২ বল বাকি থাকতে ছ’উইকেটে জিতে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করল মেন ইন ব্লু।  ভারতীয় দল শেষ মুহূর্ত অবধি কেন রাহুলের জন্য অপেক্ষা করেছিল? বুঝলেন তাঁর সমালোচকরা। এখনও কঠিন পরিস্থিতিতে বিরাটই যে ভারতের পরিত্রাতা। আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনি।  ১৫ রানের জন্য শতরানটা মাঠে ফেলে আসলেন বিরাট। ৯৭ অপরাজিত থাকলেন কেএল। যত চিন্তা ছিল ভারতের মিডল অর্ডার নিয়ে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরীক্ষার সামনে পড়ে, একদিক থেকে ভালোই হলো! এ যাত্রায় উতরে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করলেন রাহুলরা। আগামী ম্যাচগুলিতেও এরকম পরিস্থিতি আসলে,  তখন না ঘাবড়েই সামাল দিতে পারবেন তাঁরা। তবে ঈশান, শ্রেয়স দু’জনের আউট হওয়ার ধরন নিয়ে প্রশ্ন থাকছে? যদিও তাঁরা অভিজ্ঞতার অভাব থেকেই ভুল শট নির্বাচন করে ফেলেছেন। এখান থেকে শিক্ষা না নিলে বিপদ রয়েছে। কারণ, ঈশান টপ অর্ডার ব্যাটার। শ্রেয়স নির্ভরযোগ্য চার। রোহিত ফেরার পর তাঁরাও দ্রুত ফিরতেই  ম্যাচে ফিরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। হ্যাজেলউড ও স্টার্কের সৌজন্যে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে খেলা নিয়ন্ত্রণে ছিল অজিদের। সেখানে তাঁদের একটা ভুলে সবশেষ! বলা ভালো মিচেল মার্শের জন্য। ভারতের রান ছিল ২০। হ্যাজেলউডের শর্ট বল। বিরাট পুল করলেন। ব্যাট-বলে সংযোগ হয়নি ঠিকমতো। শর্ট স্কোয়ার লেগে দাঁড়ানো মার্শ, বলের পৌঁছে গিয়েও ক্যাচ ফস্কালেন।  তাঁর থেকে পাঁচ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যালেক্স কেরি দর্শক হয়ে দেখলেন সেটা। তিনি এগিয়ে এসে ক্যাচটি নিতেই পারতেন, বলের কাছে যাননি, শুধুমাত্র মার্শের প্রচেষ্টার জন্য। কোহলি বড় খেলোয়াড়। আর কোনও সুযোগ দেননি। ঠান্ডা মাথায় অজিদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন অজিদের। ওই মুহূর্তে বিরাট নিশ্চিত মনে মনে মার্শের উদ্দেশ্য বলছিলেন, ‘হায়রে ম্যাচটাই তুমি ফেলে দিলে!’ বিরাট-রাহুলের ইনিংসটার জন্য চাপা পড়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের স্পেল। অজিদের মিডল অর্ডার একাই ভেঙে দেন জাদেজা। আর সেট হওয়া ওয়ার্নার ও ভয়ঙ্কর ম্যাড ম্যাক্সকে (১৫) ফিরিয়ে বোর্ডে অজিদের লড়ার মতো রান তোলার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান কুলদীপ। 
ভারতে বিশ্বকাপ হচ্ছে, সত্যিই বোঝা গেল এদিন। দর্শক ঠাসা গ্যালারি। ভারতীয় দলের উদ্দেশ্য প্রাণখোলা সমর্থন যেন টস হারা ভারতীয় দলকে তাতিয়ে দিয়েছিল। শুরুতে বুমরার বলে স্লিপে মার্শের দুরন্ত ক্যাচ ধরেন কোহলি। সেই ধাক্কা কাটিয়ে দেন স্মিথ-ওয়ার্নার জুটি। পেস-স্পেন দুইয়ের বিরুদ্ধে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন তাঁরা। ব্রেক থ্রু দেন কুলদীপ। ওয়ার্নারকে ফেরানোটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে জাদু দেখানো শুরু জাদেজার। স্মিথ (৪১), লাবুশেন (২৭) ও কেরিকে (০) আউট করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ১১০/২ এই অবস্থা থেকে মুহূর্তে ১৪০/৭।  ওখানেই দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে যায়। অজিরা বড় রান তুলতে পারবে না। শেষ তিন উইকেটে মিচেল স্টার্ক (২৮) ও কামিন্সের (১৫) সুবাদে ১৯৯ অবধি পৌঁছায় অজিরা। 
সর্বোপরি, একটা কথা বলা যায়, এদিনের খেলায় ভারতকে বাঁচালো মিডল অর্ডার। অজিদের ভোগালো মিডল অর্ডার।  
সংক্ষিপ্ত স্কোর— অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ অলআউট (স্মিথ ৪৬, ওয়ার্নার ৪১  জাদেজা ৩/২৮, বুমরা ২/৩৫)
ভারত ২০০/৪ (কোহলি ৮৫, রাহুল অপরাঃ ৯৭ হ্যাজেলউড ৩/৩৮)
ছয় উইকেটে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা- কেএল রাহুল 

Comments :0

Login to leave a comment