Editorial

যেন জমিদারির টাকা

সম্পাদকীয় বিভাগ

সামনে ভোট। সরকারি তহবিল থেকে জনগণের করের টাকা দু’হাতে বিলোনোয় যে মুখ্যমন্ত্রী দরজা হস্ত হবেন তাতে অবাক হবার কিছু নেই। ভোট কেনার রাজনীতিতে তিনি যে সিদ্ধহস্ত সেটাও কারও অজানা নয়। ভোট কিনেই যে তাকে ক্ষমতায় ফিরতে হবে সেটা তিনি বোঝেন সব থেকে ভালো। একটা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় সেটা বহুদিন আগেই সরকারি ভাবনা থেকে হারিয়ে গেছে। খেলা-মেলা, উৎসব আনন্দে মেতে থাকা, নানা ধরনের ভাতার মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে মানুষকে খুশি রাখা ইত্যাদি কৌশলে ভোট কেনাই তার লক্ষ্য। শিক্ষা ব্যবস্থা রসাতলে যাক, রাজ্য সরকারি-আধা সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ৬ লক্ষ পদ শূন্য থাক, স্থায়ী কর্মীর বদলে ১০-১৫ হাজার টাকার ঠিকা কর্মী দিয়ে সরকার চলুক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ুক, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকুক, আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা না বাড়ুক, টাকার অভাবে রাস্তা মেরামত না হোক, রাজ্যে শিল্পে খরার মধ্যে বিনিয়োগ না হোক, কাজ তৈরি না হোক, বেকার বাড়তেই থাকুক, রাজ্যে কাজ না পেয়ে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা পরিযায়ী হয়ে চলে যাক ভিন রাজ্যে। মমতা ব্যানার্জির তাতে কোনও আপত্তি নেই। কোন ফরমুলায় সরকারি টাকা ব্যয় করে কীভাবে ভোট কেনা যাবে এবং ক্ষমতায় ফেরা যাবে সেটাই তার প্রধান মাথাব্যথা। পুজা কমিটিকে ঢালাও টাকা বিলি আসল উদ্দেশ্য সেটাই।
পূজা উৎসব সাময়িক, ক্ষণকালীন। অল্প কয়েকদিনের জন্য কিছু মানুষের কিছু রোজগার হয় বটে তাতে কোনও স্থায়ী সম্পদ বা পরিকাঠামো তৈরি হয় না। স্থায়ী সম্পদ তৈরি হলে তাকে ব্যবহার করে স্থায়ী  কাজের সুযোগ তৈরি হয়। অর্থনীতির মৌলিক বিষয় এরাজ্যের উন্নয়নের কাজে আসে না। তাই পরিকাঠামোয় সরকারি ব্যয় কম। সরকারের লক্ষ্য শুধু অনুদান বিলিতে। ১০০ দিনের কাজে নজর নেই। অথচ সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। গোটা রাজ্যের রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থা। মেরামতের টাকা নেই। গত বাজেটে ১ লক্ষ ৭০ হাজার আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল দেবার জন্য বরাদ্দ হয় ২০০ কোটি টাকা। দেওয়া হয়নি। মিড ডে মিলের শিশুরা এই দুর্মূল্যের বাজারে পায় ৬-৭ টাকা। তাদের জন্য টাকা বাড়ে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এটা নেই সেটা নেই। কিন্তু পূজা কমিটিকে টাকা দিতে টাকার অভাব নেই। এক ধাক্কায় বরাদ্দ হয়ে গেছে ৫০০ কোটি টাকা। কার্যত মকুব বিদ্যুতের খরচ। আগে পূজা কমিটিগুলি খরচ বাঁচিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দিত। এখন সরকার টাকা দেয়। সরকারের টাকা হরিলুটের মতো বিলি করাতেই সরকারের আনন্দ। তাতে রাজ্যের ভবিষ্যৎ রসাতলে যাক আপত্তি নেই।

Comments :0

Login to leave a comment