3 civilians killed in Poonch

সেনার অত্যাচারে মৃত্যু তিনজনের, উত্তাল জম্মু

জাতীয়

জেরার নামে সেনা অত্যাচারে তিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ফের উত্তপ্ত জম্মু-কাশ্মীর। উত্তেজনার জেরে সীমান্ত জেলা পুঞ্চ ও রাজৌরিতে ইতিমধেই প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে। জনবিক্ষোভ ঠেকাতে তড়িঘড়ি নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না ক্ষোভ। বছর ২৭ থেকে ৪২বছর বয়সী স্থানীয় তিনজনের দেহ পাওয়ার পরই শুক্রবার প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই দেহগুলি পাওয়া গিয়েছে ‘রহস্যজনক অবস্থায়’। তবে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে বৃহস্পতিবার পুঞ্চে সেনাবাহিনীর দু’টি গাড়িতে অতর্কিতে হামলায় পাঁচ জওয়ানের মৃত্যুর পর তল্লাশি অভিযানে নেমে সেনার যে আট গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, মৃত তিনজন তাঁদের মধ্যেই ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ফের আলোচনায় উঠে এসেছে সেনার অত্যাচারের প্রসঙ্গ। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দু’টুকরো করার মোদীর সরকারের পদক্ষেপ ‘বৈধতা’ পেয়ে গেলেও উগ্রপন্থা যে উপত্যকা ছাড়েনি আর উগ্রপন্থা দমনের নামে বাহিনীর দমন-পীড়ন যে নিয়ম করেই চলছে, সাম্প্রতিক ঘটনা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। সিপিআই(এম) সহ কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি ওই তিন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের নানা জায়গায় সেনার অত্যাচারের প্রতিবাদে বেশ কিছু বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। 
গত বৃহস্পতিবার এক অভিযানে যাওবার পথে ধীরা কি গলি ও বাফলিয়াজের মাঝে ধাতিয়ার মোড়ে সেনার দু’টি গাড়িতে হামলায় পাঁচ সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। হামলার পর পরই ঘন জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকা জুড়ে ব্যাপক তল্লাশিতে নেমেছিল নিরাপত্তা। তবে তাতে পালিয়ে যাওয়া উগ্রপন্থীদের খোঁজ পায়নি তারা। শনিবার দুপুরেও ধীরা কি গলি জঙ্গলের মধ্যে থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গিয়েছে। বাহিনী যদিও জানিয়েছে, প্রাকৃতিক গুহা যাচাই করতেই বাহিনী গুলি চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার তল্লাশির সময়েই জেরার জন্য সেনাবাহিনী আটজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে শুক্রবার তাঁদেরই তিনজনকে ‘রহস্যজনকভাবে’ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাহিনী প্রথমে জেরার বিষয় চেপে যেতে চাইলেও মৃতদের আত্মীয় ও স্থানীয় মানুষ স্পষ্টভাবেই অভিযোগ তোলেন ‘হেপাজতে অত্যাচারে মৃত্যুর’। শুক্রবার সেই অত্যাচারের ভিডিও ছড়িয়েও পড়ে। সাথে সাথেই প্রশাসন সীমান্তবর্তী দুই জেলা পুঞ্চ ও রাজৌরিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়।
পরে ভারতীয় সেনার জন সংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, ‘গত ২১ তারিখের ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযান চলছে। ওই এলাকায় তিনজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তদন্তের কাজে ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ সমর্থন ও সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। 
এর আগেই শনিবার সকালে ময়না তদন্তের পর বাফলিয়াজের টোপা পীর গ্রামের সাফীর হুসেইন (৪৩), মহম্মদ শৌকত (২৭) ও শাবির আহমদ (৩২)-এর দেহ তুলে দেওয়া হয় তাঁদের পরিবারের হাতে। তারপর বাফলিয়াজের কবরস্থানেই তাঁদের শেষকৃত্য হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে মৃতদের একজনের আত্মীয় মহম্মদ সাদিক জানিয়েছেন, ‘তিনজনেই নিরীহ সাধারণ মানুষ। সেনা হেপাজতে অত্যাচারের ফলেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।’ সাদিক আরো জানিয়েছেন, ‘হামলার পরই সেনারা এসে গ্রামের আটজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ওই তিনজন তাঁদের মধ্যেই ছিলেন। অত্যাচারের ফলে ভয়ানকভাবে জখম আরো চারজনকে একটা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ পরে আধিকারিকরাও জানিয়েছেন, ‘চারজন সাধারণ মানুষ— মহম্মদ জুলফিকার, তাঁর ভাই মহম্মদ বেতাব, ফজল হুসেইন ও মহম্মদ ফারকের রাজৌরি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। সেনা হেপাজতে তাঁদের উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে। গ্রামের সরপঞ্চ সাদিকের কথায়, পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের তিনি সেনা অত্যাচারের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাতে কান দেয়নি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই সেনা ইউনিটের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। এবং নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, তাঁদের পরিবারের একজনকে চাকরিও দিতে হবে।’ তিনি জানান, পুঞ্চের ডেপুটি কমিশনার চৌধুরি মহম্মদ ইয়াসিন ও সিনিয়র পুলিশ সুপার বিনয় কুমারের আশ্বাস পাওয়ার পরই আমরা এদিন নিহতদের শেষকৃত্য করেছি। আজ সারাদিনই ওঁরা গ্রামে ছিলেন। এবং আশ্বস্ত করেছেন, ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে। 
এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেনা হেপাজতে তিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। সিপিআই(এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি, এই ঘটনায় তিন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, উগ্রপন্থী হামলায় সেনা জওয়ানদের মৃত্যু ‘খুবই দুঃখজনক’। তবে তিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুই খবুই অস্থিরতার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। একই দাবিতে এদিন ন্যাশনাল কনফারেন্স ও আপনা দল বিক্ষোভও দেখিয়েছে। 

 

Comments :0

Login to leave a comment