অরূপ সেন
বিধানসভায় ‘আপ’-র বিপুল জয়। কিন্তু লোকসভা ভোটে দিল্লির ৭টি আসনেই জয়ী বিজেপি।
এই ছবি গত কয়েকদফায় বারবারই দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার বিজেপি লোকসভা ছাপিয়ে ভোটের হার ধরে রাখতে পেরেছে বিধানসভায়।
শনিবার রাতে ফলাফল দাঁড়িয়েছে বিজেপি ৪৭ আসনে জয়ী। আর ৭০ আসনের বিধানসভায় ‘আপ’ জয়ী ২২ আসনে। ভোটের হারে যদিও ব্যবধান ২ শতাংশেরও কম।
রাতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে ‘আপ’-র পক্ষে ভোটপ্রাপ্তির হার ৪৩.৫৭ শতাংশ। বিজেপি’র হার ৪৫.৫৬ শতাংশ। বিজেপি যদিও ৬৮আসনে লড়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটদাতাদের কথা মাথায় রেখে জনতা দল (ইউ) এবং লোক জনশক্তি পার্টিকে ছেড়েছিল ১টি করে আসন।
দশ বছর সরকার চালানোর ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলকে। তার ওপর নির্বাচন কমিশনের কারসাজি নিয়ে অভিযোগের বহর বেড়েছে। ভোটের দিন ভোটদাতাদের বাধা দিতে দেখা গিয়েছিল দিল্লি পুলিশকে, বিশেষ বিশেষ এলাকায়। সেই সঙ্গে কর্পোরেট-হিন্দুত্ব আক্রমণ। জেলে যেতে হয়েছে কেজরিওয়াল, মনীশ সিসোদিয়াকে। এত কিছুর পরও এই সমর্থন কম নয় বলেই মত বিভিন্ন অংশের।
ওখলা এবং মুস্তাফাবাদে প্রার্থী দিয়েছিল এআইএমআইএম। ওখলা ফের জয়ী হয়েছেন ‘আপ’-র আমানুল্লা খান। ২৩ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। মুস্তাফাবাদে বিজেপি’র মোহন সিং ১৭ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।
রাতে বিজেপি দপ্তরে যান প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে বলেছেন, দিল্লি সংক্রান্ত সিএজি রিপোর্ট বিধানসভার প্রথম অধিবেশনেই পেশ করা হবে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে লক্ষ্য করে বলেছেন, দেশের মানুষ যখন কোভিডের জন্য লড়ছিলেন এরা তখন ‘শিসমহল‘ তৈরি করছিল।
মোদীর নিজের সরকারের বিরুদ্ধে সামান্য সিএজি রিপোর্ট দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বদলি করে দেয় মোদী সরকারই!
মোদী বলেছেন, ডবল ইঞ্জিন সরকার দিল্লিবাসীর ঋণ দ্বিগুন গতিতে শোধ করবে। আপ-কে ‘আপদ’ সম্বোধনেও আটকায়নি।
দিল্লির ভোটে, অন সব রাজ্যের মতো, আরএসএস’র জমাট সাংগঠনিক কাঠামো সক্রিয় রয়েছে ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকে।
দিল্লির মধ্যবিত্ত এলাকায় ‘আপ’-র ভিত্তি ভাঙতে প্রচার হয়েছে যে ‘খবরাতি’-র পিছনে টাকা ঢালার কারণে পরিকাঠামো উন্নয়ন দিল্লির হচ্ছে না। গরিব নিম্নবিত্ত এলাকায় টাকা ঢালা হচ্ছে, যারা আয়কর দেয় না।
নয়াদিল্লি কেন্দ্রে এমন উচ্চ মধ্যবিত্ত, অতি স্বচ্ছল অংশ অয়তনে কেবল বড় নয়, মতামত তৈরিতেও প্রভাব ফেলে। নয়াদিল্লিতেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দক্ষিণ দিল্লির বিত্তশালী কেন্দ্রগুলিতে আপ-র পরাজয় দেখা গিয়েছে। সেখানে শেষ কেন্দ্রীয় বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের ঘোষণা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিম্নবিত্ত, পরিযায়ী শ্রমিক, জুগ্গি-ঝোপড়ি এলাকায় জল, বিদ্যুতের মাসুলে ছাড় ‘আপ’ সরকারকে জনপ্রিয় করেছে। মহিলাদের জন্য বাস ভাড়ায় ছাড়ও চালু করেন কেজরিওয়াল। আবার মহল্লা ক্লিনিক এবং সরকারি স্কুলের মান বাড়ানো ‘আপ’ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তার প্রভাব এই ভোটেও আছে। এই অংশের ভোট পেয়েছে দল। তবে পূর্য়াঞ্চলীয় ভোটদাতাদের একটি অংশকে ভেঙে বের করা গিয়েছে বলে দাবি বিজেপি’র।
কংগ্রেস পেয়েছে ৬.৩৪ শতাংশ ভোট। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দু’দলের আলাদা লড়াইয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। কংগ্রেস ২টি আসনে জমানত রাখতে পেরেছে। কস্তুরবা নগর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেবেন্দ্র যাদব দ্বিতীয় হয়েছেন।
পর্যবেক্ষকদের অনুমান, প্রবেশ ভার্মাকে কেজরিোয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থী করার প্রভাব রয়েছে জাঠ প্রধান এলাকায়। বিজেপি নেতাদের একাংশ দাবি করছেন যে খুইয়ে ফেলা জাঠ ভোট ফিরেছে।
নতুন পরীক্ষার সামনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি এবং তাঁর দল এখন কিভাবে সে পরীক্ষা দেবে সেদিকে তাকিয়ে বিভিন্ন অংশ।
DELHI RESULT
৪৩% পেয়েও হার, নতুন পরীক্ষার মুখে ‘আপ’

×
Comments :0