MD SELIM ON STATE BUDGET

ফের ৮১ হাজার কোটি ঋণ, টাকা যচ্ছে কোথায়, প্রশ্ন সেলিমের

রাজ্য কলকাতা

এত ঋণ করে কী হচ্ছে। এ সরকার আসার সময় যা ছিল তার চারগুন। এই ঋণের অর্থ কোথায় যাচ্ছে? বাধ্যবাধকতা কী? বাজার থেকে বেশি সুদে ঋণ নেওয়া হচ্ছে শখ আহ্লাদ মেটানোর জন্য। রাজ্য বাজেটের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

সেলিম বলেন, বেকারদের কাজ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ভাবনাচিন্তাই নেই। কত কর্মসংস্থান হলো। কতো কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা আছে, তার বিন্দু বিসর্গ জানা নেই। এমনকি আবাস যোজনা নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। ওরা বললেন কেন্দ্র টাকা দেবে না রাজ্য বাজেট থেকে হবে। এখন বলছেন অর্ধেক টাকা বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। তাতে দুর্নীতি বেড়েছে। মানুষের ঘর তো শেষ হচ্ছে না। অসম্পূর্ণ ঘর পড়ে আছে। কিস্তি অসম্পূর্ণ। যাদের ঘর পাওয়ার কথা, গৃহহীন মানুষ ঝুপড়ি করে আছেন, ত্রিপল-চট লাগিয়ে আছেন। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্যের আবাস যোজনা কেন ব্যর্থ হলো তা নিয়ে কোনও কথা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। কেবল টাকার অঙ্ক দিয়ে বোঝাবেন?  

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন রাজ্যের অর্থদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও বর্তমানে অর্থদপ্তরের উপদেষ্টা অমিত মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, সরকার নতুন করে বাজার থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৮১ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। 

রাজ্যের গত বাজেট অনুযায়ী পুঞ্জীভূত ঋণের অঙ্ক ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বামফ্রন্ট সরকারের সময় পর্যন্ত মোট ঋণের অঙ্ক ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, ১৯৪৭’র পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যের মোট ঋণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকার কম। আর তৃণমূলের ১৫ বছরের কম সময়ে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছাবে এই পুঞ্জীভূত ঋণ। 

অথচ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি বামফ্রন্টের সময়ের ঋণ তাঁদের শোধ করতে হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের ঋণ আর কেন্দ্রের পাওনা মেটাতেই ৮০ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে মাত্র ১৫ বছরে রাজ্য সরকারের ঋণ প্রায় ৪ গুন বেড়ে গেছে। সংখ্যাটা বর্তমান বাজেট ধরে প্রায় ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। 

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অর্থ দপ্তরের উপদেষ্টা অমিত মিত্র সাংবাদিকদের বলার মাঝেই একাধিকবার থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সদলবলে উঠে যান মুখ্যমন্ত্রী এবং অমিত মিত্র। 

মমতা ব্যানার্জি বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করেন ‘স্মল সেভিংস’ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য। ডাকঘরের প্রান্তিক এবং সাধারণের সঞ্চয়ের অন্যতম প্রধান ভরসাই ছিল স্বল্প সঞ্চয়। সঞ্চিত অর্থ নির্দিষ্ট সুদের হারে ফেরতের নিশ্চয়তা ছিল রাজ্য সরকার এই তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ায়। মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রিত্বে চিট ফান্ডের দাপট আঘাত করেছিল ডাকঘরে নিশ্চিত সঞ্চয়ের এই বন্দোবস্তেই। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ‘বিশাল ঋণের বোঝা’ ঘাড়ে চাপিয়েচিল বামফ্রন্ট সরকার!

অমিত মিত্রের যুক্তি মোট উৎপাদনের অনুপাতে ঋণ বিবেচনায় রাখলে কেন্দ্রের থেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে রাজ্য। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ঋণের কারণে দেশে মাথাপিছু ঋণ ১ লক্ষ ৪১ হাজার ১৩ টাকা। রাজ্যে মাথাপিছু ঋণ তার অর্ধেক। তিনি বলেছেন, কেন্দ্র কোষাগারীয় ঘাটতি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৪.৪ শতাংশ করেছে। রাজ্যের বাজেটে কোষাগারীয় ঘাটতি রাজ্যের মোট উৎপাদনের ৩.৬ শতাংশ। 

এসব যুক্তিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, রাজ্যের ঋণ চারগুন হলো তৃণমূলের সময়ে। অথচ বামফ্রন্ট সরকারকে দোষ দিচ্ছে!

 

Comments :0

Login to leave a comment