BAI SANDHYAN — PRODASHKUMAR BAGCHI / 6 SEPTEMBER

বইকথা — ঠাকুরমার ঝুলি / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

BAI SANDHYAN  PRODASHKUMAR BAGCHI  6 SEPTEMBER

বইকথা   

ঠাকুরমার ঝুলি 

প্রদোষকুমার বাগচী

আজ তোমাদের জন্য সত্যিকারের ভালোলাগা একটি বইয়ের কথা বলবো। তোমরা হয়তো ভাবছ যে আমি আবার কোন বইয়ের কথা বলবো। তবে আমি যেই সেই বইটির নাম বলবো তখন তোমরা প্রায় সকলেই হয়তো বলবে ও বইয়ের নাম জানি। কারণ ঠাকুমা বা দিদিমার মুখে ওই বইয়ের অনেক কথা অনেক গল্প শুনেছি। ওই বইটির নাম তোমাদের সকলের কমবেশি পরিচিত ‘ঠাকু’মার ঝুলি’। বইটি হাতে নিলেই তোমরা দেখতে পারবে অপূর্ব সব গল্প আর সুন্দর সুন্দর ছবি যে মন প্রসন্ন হয়, চোখ জুড়িয়ে যায়। আর গল্পগুলোর তো কথাই নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা যে আগে পড়বে সেটাও ঠিক করা ভারি মুশকিল। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’তে অনেকগুলি গল্প পাবে। তার একটি হলো কলাবতী রাজকন্যা। গল্পটা এরকম— এক রাজার সাত রাণী ছিল। বড়, মেজ, সেজ, ন-রাণী, কনে, দুয়ো আর ছোট। এত বড় রাজা তার এত বড় রাজ্য কিন্তু রাণীদের কোন ছেলে হয়নি। তার জন্য রাজার ভারী দুঃখ। একদিন রানীরা নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন। ওই সময় কোথা থেকে এক সন্ন্যাসী এসে বড় রাণীর হাতে একটা শিকড় দিয়ে বলল এটা তোমরা বেটে খেও তাহলে তোমাদের সোনার চাঁদ ছেলে হবে। ওরা বাড়ী ফিরে এল। তারপর শিকড়টা বাটার পর পাঁচজন বেশি করে  খেয়ে নিল। শেষে  ন’রাণীর ভাগ্যে ছিঁটেফোঁটা পড়ল।  আর ছোট রানীর ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। শেষ পর্যন্ত শিল-নোড়াতে যেটুকু লেগেছিল তাই ধুয়ে একটু জল ওকে খাওয়ানো হলো। তারপর একদিন ওদের পাঁচজনের সোনার চাঁদপানা ছেলে হলো। কিন্তু ন‘রাণী আর ছোট রাণীর ঘরে জন্ম নিল এক পেঁচা আর বানর।

 রাজা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ রাজকন্যাকে ঘরে তুললেন, কিন্তু ন’রাণী আর ছোটকে কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। পরে তো পাঁচ রাজপুত্র কত সুখে থাকে আর পেঁচা আর বানর থাকে একটা গাছে। তারপর কি হলো?
না আর বলবো না। তোমরা যারা জানো, মার মুখে বা ঠাকুমা দিদিমার কাছে শুনেছো তারা তাদের বন্ধুদের গল্পটা বলে দিতে পারবে। আর যারা তোমরা জানো না বা শোননি এই এত সুন্দর গল্প, তারা ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ একটা কিনে নিতে পারো। দেখবে কত মজা কত আনন্দ রয়েছে এই সব রূপকথার মধ্যে। বইটিতে কলাবতী রাজকন্যা ছাড়াও আরও আছে ঘুমন্ত পুরী, কাঁকনমালা কাঞ্চনমালা, সাত ভাই চম্পা, শীত-বসন্ত। আছে নীলকমল আর লাল কমল, ডালিম কুমার, শিয়াল পণ্ডিত, পাতাল-কন্যা মনিমাল ও আরও কত কী! এই গ্রন্থের সংকলক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার রূপকথার গল্পগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে। তারপর তাঁর লেখনীর গুণে গল্পগুলো শিশুদের জন্য হয়ে উঠেছে অসামান্য মনোরঞ্জক। অসংখ্য চিত্র সংবলিত ঠাকুরমার ঝুলির চিত্র অঙ্কন করেছেন গ্রন্থকার স্বয়ং। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ‘ভট্টাচার্য এন্ড সন্স’ প্রকাশনা সংস্থা হতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। এরপর থেকে এর অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, বাঙালির ছেলেরা রূপকথার মধ্যে বাংলা দেশের চিরন্তন স্নেহের সুরটি খুঁজে পায়। সেকারণে দক্ষিনারঞ্জন বাবুকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়ে বলেছেন রূপকথার বিশেষ ভাষা, বিশেষ রীতি, প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন। তোমাদের বলি, যদি সম্ভব হয়, বইটি কিনে বা যারা তোমরা কিনতে পারবে না, কোনওভাবে জোগার করে দেখো কেমন লাগলো, তারপর না হয় বিচার কোর। তোমাদের সঙ্গে আবার তো কথা আমাদের হবে।
 

বইটির নাম বলে দি্চ্ছি— ‘ঠাকু’মার ঝুলি : বাঙালার রূপকথা
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। ষষ্ঠচত্বারিংশৎ সং। মিত্র ও ঘোষ। ৮০ টাকা।

Comments :0

Login to leave a comment