গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
রিয়া আর সাদু
সৌরীশ মিশ্র
রবিবারের সন্ধ্যে।
আট বছরের রিয়া ওর দাদুর সঙ্গে ফিরছে বাড়ি। ওদের পাড়াতেই একটা নামজাদা প্রকাশনা সংস্থার নতুন দোকান খুলল আজ। রিয়াদের বাড়িতে সব্বাই গল্পের বই-এর পোকা। তাই, দোকানটা কেমন করেছে আর অবশ্যই সাথে পছন্দ করে কিছু বই কিনতে রিয়ার দাদু আর রিয়া গিয়েছিল সেই দোকানে।
রিয়া দাদুর হাত ধরে হাঁটছে। অন্য হাতে ওর, দুটো ক্যারিব্যাগ। যার একটাতে আছে মিষ্টির প্যাকেট, যেটা বই-এর দোকানটা থেকে দিয়েছে। আর অন্য ক্যারিব্যাগটায় আছে ঐ দোকান থেকে ওদের কেনা বই দু'টো।
রিয়াদের বাড়িটা যে গলিতে, তাতে ঢুকে পড়েছে ওরা। সরু গলিটার দু'দিকে সাড়ি-সাড়ি বাড়ি। আর, প্রতিটা বাড়ির সামনেই রোয়াক।
ঐ রোয়াকগুলোর একটিতে বসে ছিল সাদু। এই পাড়ার কুকুর। সাদা ধবধবে গায়ের রঙ।
সাদু রিয়াকে চেনে খুব। তাই, রিয়াকে দেখেই চারপায়ে দাঁড়িয়ে উঠে, আড়মোড়া ভাঙল সে। তারপর, এক লাফে রোয়াকটা থেকে নেমে ঘন-ঘন লেজ নাড়তে-নাড়তে এগিয়ে এল রিয়ার দিকে।
রিয়া দাদুর হাত ছেড়ে সাদুর গায়ে, মাথায় কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিল। সাদুও রিয়ার হাতটা চেটে দিল একটু।
রিয়া এবার তাকায় ওর দাদু আশুতোষবাবুর দিকে। নাতনির চোখের এই চাহনির অর্থ যে কি, তা বুঝতে অসুবিধা হয়না ওনার। তিনি বলেন, "কি, মিষ্টি দেবে সাদুকে? তা, দাও না। তবে, মিষ্টির প্যাকেটটায় তুমি হাত দিও না। তোমার হাতে তো চাটল সাদু। আমি বের করে দিই মিষ্টিটা প্যাকেট থেকে। তারপর তুমি খাওয়াও। কেমন?"
আশুতোষবাবুর কথাগুলো শুনেই মুখটা খুশিতে ঝলমল করে উঠল রিয়ার। সে তার হাতে ধরা মিষ্টির ক্যারিব্যাগটা দাদুর হাতে দিতে দিতে সাদুকে বলতে থাকে, "দাঁড়া একটু সাদু। দাদু বের করে দিক মিষ্টিটা। তারপর তোকে দিচ্ছি।"
সাদু রিয়ার কথা কি বুঝল তা ঐ জানে! কিন্তু, এবার সে দু'পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সোজা হয়ে রিয়ার গা ধরে। তারপর চেটে দিল দু'বার রিয়ার ডানগালটায়।
রিয়া ছোটো, তবু ওর বুঝতে অসুবিধা হোলো না মোটে, সাদু যে ঐভাবে ওকে "থ্যাংক ইউ" বলছে।
Comments :0