দক্ষিণপন্থা মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়। জীবিকার অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকারকে আক্রমণ করে। অধিকারের লড়াইয়ে এককাট্টা হলেই বিভাজন ছড়ায়। বিশ্বে এবং দেশে তা দেখা যাচ্ছে। এ রাজ্যে, মুর্শিদাবাদেও তা দেখা গিয়েছে। একজোটে লড়াই করেই এই শক্তিকে হারাতে হবে।
শনিবার বহরমপুরে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্মেলনে প্রকাশ্য সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সহ বক্তব্য রাখেন যুব নেতৃবৃন্দ। জনসমাবেশে এদিন ভেসে গিয়েছে বহরমপুরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়। শহীদ ভগৎ সিংয়ের স্মৃতি জড়িয়ে থাকা নওজোয়ান ভারত সভার শতবার্ষিকী মঞ্চে হয়েছে সমাবেশ। জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করে, গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করে এমন ভারত গড়ার লক্ষ্যে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন সেলিম।
পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পরিস্থিতি মনে করিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীরা চেবেছিল ভাগ করতে। আমরা বলেছিলাম একজোট হওয়ার কথা। তৃণমূল এবং বিজেপি একযোগে ‘সেকু-মাকু’ বলে আক্রমণ করেছে আমাদের। বিজেপি-আরএসএস ভাগ করতে চেয়েছিল জনতাকে। আমরা বলেছিলাম আলোচনা করতে হবে। আমাদের বলল দেশদ্রোহী। স্বাধীনতার লড়াইয়ের উত্তরাধিকার বইছি আমরা। আর ট্রাম্প যখন বলল ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি চুপসে গেল। ভগৎ সিং আর স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন লন্ডন থেকে আমাদের নীতি ঠিক হবে। আর আজ আমেরিকা থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। দেশের স্বাধীন বিদেশনীতি বিসর্জন দিচ্ছে মোদী সরকার।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘গাজায় দেড় বছর ধরে গুন্ডাবাজি দেখাচ্ছে ইজরায়েল। এখন ইরানের পাল্লায় পড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব তুলছে। আমেরিকাকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকছে।’’
রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, এখানে তৃণমূলের মদতে গুন্ডা আর পুলিশকে মনে রাখতে হবে কয়েকটা বন্দুক হাতে থাকলেই কারও ক্ষমতা অসীম হয়ে যায় না।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘নতুন প্রজন্মকে নেশায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। যারা মেহনত করে বাঁচতে চায় তাঁদের সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে লড়াই গড়তে হবে। লড়াই গড়তে হবে সমাজ বদলের লক্ষ্যে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তার জন্য আরও অনেককে জড়ো করতে হবে।’’
পরপর দাঙ্গা হয়েছে মুর্শিদাবাদে। প্রাণ গিয়েছে মানুষের। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে হিন্দু-মুসলিম মানুষ দাঙ্গা করেননি। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের মধ্যে বিভাজন সংগঠিত করিয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে থেকেছে বামপন্থীরা। সারা দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। সারা দেশে তো দাঙ্গা হয়নি। রাজ্যের অন্যত্রও দাঙ্গা হয়নি। দাঙ্গা হয়েছে মুর্শিদাবাদে। সামশেরগঞ্জ-সুতিতে হয়েছে দাঙ্গা। বিএলআরও অফিসের গাড়ি পোড়ানোর পরও পুলিশ বের হয়নি। চার ঘন্টা চুপ করে থেকেছে। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি। তৃণমূল রাজ্যে কোনও দাঙ্গার তদন্ত করেনি। আর বিজেপি-ও তদন্তের দাবি তুলছে না, তুলবেও না। এখন এই পুলিশ আসল খুনী-দাঙ্গাবাজদের না ধরে যাকে তাকে গ্রেপ্তার করছে। কে আসল দায়ী তদন্ত চাই।’’
মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গেই বলেছেন সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক এবং ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লাও। জামির বলেছেন, ‘‘বামপন্থীদের শক্তি আছে। সেজন্য দাঙ্গা করানো হচ্ছে মুর্শিদাবাদে। লোকসভা নির্বাচনে সেলিম এবং কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে হারানোর জন্য এই খেলা হয়েছে। তৃণমূলের বিধায়ক প্ররোচনা ছড়িয়েছেন আর বিজেপি পালটা প্ররোচনা দিয়েছে। অথচ পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।’’
শনিবার বহরমপুরে ডিওয়াইএফআই’র সমাবেশে নেতৃবৃন্দ।
জামির মুর্শিদাবাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্য, লড়াইয়ের ঐতিহ্যকে মনে করিয়েছেন। বামপন্থীদের, ডিওয়াইএফআই বারবার কাজের দাবিতে গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নেমেছে। জামির বলেছেন, ‘‘এই ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ভয় পায় দুই দল। তাই বিভাজন করে, দাঙ্গা বাঁধায়।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূল দাঙ্গার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের দায়ী করছে। আর বিজেপি অন্য রাজ্যে পরিযায়ীদের মারার কথা বলছে। এরা রাজ্যে রাজ্যে বাংলাভাষী এরাজ্যের মানুষকে বাংলাদেশি বলে ধরপাকড় করছে। রাজ্যের মানুষকে ধরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘সংসদে তৃণমূলের একাধিক সাংসদ ওয়াকফ আইনের বিপক্ষে ভোট দেননি, মমতা ব্যানার্জি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। আর মুর্শিদাবাদে বলছেন প্রতিবাদ করতে হলে দিল্লিতে যেতে হবে। এর আগে বামপন্থীদের, ডিওয়াইএফআই-কেও লিউকোপ্লাস্ট রাখতে বলেছিলেন। ডিওয়াইএফআই’র ধক আছে বলে হকের কথা বলতে বারবার রাস্তায় নেমেছে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বৈশিষ্ট হলো মানুষকে এককাট্টা হতে বাধা দেয়। এরাজ্যে মমতা হোক বা মোদীর বিজেপি বা আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প, এই প্রবণতা স্পষ্ট।’’
এদিন সন্ধ্যাতেই শুরু হয়েছে প্রতিনিধি অধিবেশন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন ডিওয়াইএফআই প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী।
Comments :0