Editorial

দয়া নয় অধিকার

সম্পাদকীয় বিভাগ

পঞ্চায়েত, পৌরসভা, বিধানসভা লোকসভা ভোটে মমতা ব্যানার্জির বাহিনী যেভাবে জেতে সেভাবে তো আর আদালতে জেতা যায় না। তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় মমতা ব্যানার্জির সরকারের পরাজয় এখন একরকম অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।  ভোটের ময়দানে পুলিশের সহায়তায় অনুগত দুষ্কৃতী বাহিনী সাধারণ মানুষের ভোট দানের অধিকার কেড়ে নিতে পারে। নির্বিচারে  ভোট লুট করে মমতা ব্যানার্জির  প্রার্থীদের জয়ী করতে পারে। কিন্তু আদালত দখল করে গুন্ডামি করে বিচারপতির কাছ থেকে অনুকূলে রায় বার করে আনা সহজ হচ্ছে না। তাই আদালতে তাদের বার বার পরাজিত হয়ে মাথা নিচু করে ফিরতে হচ্ছে। সর্বশেষ সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা মামলার অন্তর্বর্তী রা‍‌য়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত মমতা ব্যানার্জির  মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে। সরকারের যাবতীয় ওজর-আপত্তি ও যুক্তি তক্ককে সটান প্রত্যাখ্যান করে আদালত জানিয়ে দিয়েছে বকেয়া ডিএ’র ২৫ শতাংশ চার সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। মামলার বাকি বিষয়‌গুলি নিয়ে পরে শুনানি হবে।
কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দু’বার কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ডিএ দেয়। আর এই ডিএ নির্ধারিত হয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচকের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুসরণ করে রাজ্য সরকারগুলিও  কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য কর্মচারীদের ডিএ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ রাজ্য সরকারগুলি  কেন্দ্রীয় হারেই বরাবর  ডিএ দিয়ে থাকে। তবে রাজ্যগুলির আর্থিক পরিস্থিতির  কারণে কমবেশি ডিএ বাকি  থাকে এবং ধাপে ধাপে  সেটা শোধ করে। কখনই কোন রাজ্য  কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে অস্বীকার করেনি এবং ডিএ কর্মচারীদের  অধিকার  সেটা নাকচ করেনি। একমাত্র  ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গে মমতা  ব্যানার্জির নেতৃত্বধীন  তৃণমূল সরকার। ক্ষমতায় এসেই মমতা ব্যানার্জি  কর্মচারীদের নিয়মিত ডিএ দেওয়া বন্ধ করেছেন। এমনকি প্রকাশ্যে  ঘোষণা করে দেন ডিএ কর্মচারীদের কোনও অধিকার নয়। সরকারের দয়ার দান। তাই ডিএ দেওয়ায়  সরকারের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার চাইলে দয়া করে কর্মচারীদের ডিএ দান করতে  পারে। কিন্তু কর্মচারীদের দাবি ডিএ তাদের  অধিকার। আর এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে গেছে বামফ্রন্ট সরকার তাদের ২০০৯ সালের রোপা চিঠিতে।  তাতে স্পষ্ট করা হয়েছিল  বছরে দু’বার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হবে এবং ডিএ নির্ধারিত হবে মূল্যসূচকের ভিত্তিতে। মমতা ব্যানার্জির  সরকার কর্মচারীদের  সেই অধিকার কেড়ে নেবার জন্য ২০১৯ সালের রোপা বিধি  থেকে ডিএ শব্দটাই উৎখাত করে দি‍য়েছে। তার আগেই  অবশ্য কর্মচারীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হন। প্রথমে স্যাট, পরে হাইকোর্ট, সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট  ছ’বার মমতা সরকার পরাজিত হয়। শুধুমাত্র কর্মচারীদের অধিকার কেড়ে নেবার জন্য রাজ্য কোষাগার  থেকে শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশের সব‍‌‍‌চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া উকিলদের নিয়োগ করে  সরকার।  কিন্তু তাদের কোনও সওয়ালই হালে পানি পায়নি।
ছয় ছয়বার আদালতে হারার পর মমতা সরকার মরণ কামড় দেবার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর সেখানে প্রথম শুনানির দিন ঠিক হয়। কিন্তু নানা অজানা ও অস্পষ্ট কারণে প্রায় ১৭ বার শুনানি পিছিয়ে শেষ  পর্যন্ত ১৬ মে অন্তর্বর্তী রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এই সরকার আইন কানুনকে তোয়াক্কা না করে চলছে  খামখেয়ালিভাবে। নীতি-নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে অসৎ পথে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। কার্যত চোরেদের সরকারে পরিণত ‍ হয়েছে। তাই প্রতি মা‍‌সেই প্রায় কোনও না কোনও মামলায় সরকার পরাজিত হচ্ছে। পদে পদে আদালতে ধাক্কা খেয়ে চলে যে সরকার সেই সরকারের পরিচালকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শাসনের অধিকারই হারিয়ে ফেলেছেন মমতা ব্যানা‍‌র্জিরা। এরপরও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা চরম ক্ষমতালোভীদেরই সাজে।

Comments :0

Login to leave a comment