Saline Death Doctors

নিষিদ্ধ ওষুধ হাসপাতালে চলছে কীভাবে, প্রশ্ন চিকিৎসক সংগঠনের

রাজ্য

  এতদিন বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে নিষিদ্ধ হওয়া পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধপত্র চললো কি করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। এর পিছনে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে? আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে প্রশাসন কি মৃত্যু বা বিপর্যয় ঘটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে?  প্রশ্ন তুলেছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস,  চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ। তারা মুখ্যমন্ত্রীর কৈফিয়ত এবং উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে।  
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নোটিস জারি করে বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল (এ ইউনিট অব ফরিস্তা বাণিজ্য প্রাইভেট লিমিটেড)- এর সমস্ত উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালগুলি ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনে কাজ চালাবে। এর চার দিন পরেও খোদ এসএসকেএম সহ কলকাতা ও  রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে শনিবার দিনভর চলেছে ওই একই সংস্থার স্যালাইন সহ বিভিন্ন ওষুধপত্র। তা জানতে পারা মাত্রই এদিন তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ভর্তি থাকা রোগীদের পরিবার পরিজনের মধ্যে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ৭ জানুয়রির নির্দেশনামায় স্টোরে মজুত ওষুধগুলি নিয়ে কী করা হবে স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, শুক্রবার একটি মেসেজে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সরিয়ে ফেলার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল না। 
এই সংস্থার স্যালাইন ব্যবহার করেই কর্নাটকে প্রসূতির মৃত্যু ঘটেছিল। তা নিষিদ্ধ হয়েছিল সে রাজ্যে। তারপরেও এ রাজ্যে চলেছে সেই ওষুধ। এমনকি শনিবারেও পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে অর্থাৎ বাঁকুড়া, ডায়মন্ডহারবার, মুর্শিদাবাদ, রায়গঞ্জ তো বটেই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল, এনআরএস, আর জি কর হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রমরমিয়ে চলতে দেখা গেছে এই একই সংস্থার স্যালাইন। বিষয়টি নিয়ে হই চই হওয়ার পর সরকারের তরফে সাফাই দিয়ে বলার চেষ্টা হয়েছে কিছু ব্যাচের ওষুধেই কেবলমাত্র সমস্যা দেখা গেছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সেক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষা কেন হয় না ওষুধপত্রের, এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সরকারকেই।   
কয়েক দিন আগে জারি করা স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশের পরেও পদক্ষেপ না হওয়ার পিছনে উত্তরবঙ্গ লবির খেলা আছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস বলেছে, এর আগেও কয়েকবার এই সংস্থার স্যালাইনে ভেজাল মেলা সত্ত্বেও কি করে তা  ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের অনুমোদন পেল? আর মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব সব জানা সত্ত্বেও চুপ রইলেন কোন রহস্যজনক কারণে, তা জানা দরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের। এভাবেই নানা প্রশ্ন তুলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত তদন্ত দাবি করে শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জেপিডি’র তরফে। 
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কর্নাটক সরকার ব্যবস্থা নিলেও, এ রাজ্যের সরকার কিছুই করেনি। আসলে দুর্নীতি চক্র স্বাস্থ্য দপ্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। জাল ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ, বিষাক্ত ওষুধের ব্যবহার ক্রমাগত হয়েই চলছে রাজ্যে। আমরা দেখছি কোথাও মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন, কোথাও শরীরে ভয়ঙ্কর অ্যালার্জি সহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, মৃত্যুও হচ্ছে মানুষের। যেমন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটল। এই নিয়ে চিকিৎসকরা ব্লক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। 
এদিকে জনবিক্ষোভের আঁচ পেয়ে শনিবার বিকেলে তড়িঘড়ি ফের একটি নির্দেশিকা জারি করে পশ্চিমববঙ্গ ফারমাসিউটিক্যালের রিঙ্গার ল্যাক্টেট সহ ১০টি তরল ওষুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজ্যের সব হাসপাতালগুলিকে এইসব ওষুধ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এমন নির্দেশিকা বারবার জারি হওয়া স্বত্ত্বেও কোনও এক রহস্যের কারণে ওষুধগুলি চলছে এবং বিপর্যয় ঘটছে রাজ্যে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।      
 

Comments :0

Login to leave a comment