Editorial

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্য চায় বিজেপি?

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে আসেননি। একবার নয়, দু’-দু’বার নরেন্দ্র মোদী তাই করেছেন। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির পর বিরোধীরা চেয়েছিলেন সংসদ অধিবেশন ডেকে পরিস্থিতি এবং দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন প্রধানমন্ত্রী। মোদী তাও করেননি। বৈঠক ডাকা হয়েছে শুধু বিজেপি এবং বিজেপি’র শরিকদের দ্বারা পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের। সেই বৈঠকে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ বিরোধীদের কোনও প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে চান না, তাঁদের কোনও আলোচনাই শুনতে চান না সরকারের প্রধান। এত অসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক পরিসর সম্পর্কে এত অবজ্ঞা নিয়ে সঙ্কটের এই সময়ে দেশের সরকারকে নেতৃত্ব দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি যে আরএসএস’র স্বয়ংসেবক, এই সরকার যে সঙ্ঘের দ্বারাই পরিচালিত, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ তা প্রমাণ করছে। অথচ সন্ত্রাসবাদ দমনের অন্যতম মানদণ্ড গণতন্ত্রের প্রসারণ। সেই প্রধানমন্ত্রীর সরকার রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলিতে সর্বদলীয় সাংসদ দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সর্বদলীয় দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দেশে নিজের দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে কেন ভারতের সামরিকবাহিনী পাকিস্তানে সীমান্ত অতিক্রম না করেই উগ্রপন্থীদের ঘাঁটিগুলি ভাঙতে অভিযান চালিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের অবস্থান কী, ভারত কেন পাকিস্তানে অভিযান চালিয়েছে, এমন নানা প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা করবেন সেই সর্বদলীয় সাংসদ দলের সদস্যরা। তাঁরা মুখোমুখি হবেন নানা প্রশ্নের। সেই সব প্রশ্নের জবাব তাঁদেরই দিতে হবে। অথচ এখনও তাঁরা জানেন না এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান, বক্তব্য ঠিক কী? তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিতে সভায় হাজির হন না তাঁদেরই প্রধানমন্ত্রী। বিস্ময়ের কী এখানেই শেষ? না। এই সর্বদলীয় টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ্‌র নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেননি। এই ক্ষেত্রে একটি সর্বদলীয় সভা ডাকা সংসদীয় রীতির মধ্যে পড়ে। কেন সরকার এমন একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাতে চাইছে তা ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল। এই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলির নিশ্চিতভাবেই কিছু মতামত থাকতো। তা শোনা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। আরএসএস নির্দেশিত সরকার তেমন কোনও উদ্যোগের ধারেকাছ দিয়ে যায়নি। মোদী সরকার একতরফা ভাবে প্রতিনিধি দলের সদস্য নির্বাচন করেছে। আলাদা করে শুধু সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অথচ সরকারের উচিত ছিল প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নাম নির্ধারণ করা। এটিই আমাদের দেশের সংসদীয় রীতি। এই ক্ষেত্রেও একতরফা নিজেদের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিজেপি। গণতান্ত্রিক যে কোনও রীতিনীতির সঙ্গেই যেন বিজেপি’র বৈরিতা। সরকারের এই ভূমিকার সমালোচনা করেছে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তবু তৃণমূল ছাড়া কোনও দলই নিজেদের সরিয়ে নেয়নি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল থেকে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি এতটাই দৃঢ় যে, তারা সরকারের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে ন্যায্য প্রশ্ন থাকা সত্বেক ও। সিপিআই(এম) ইতিমধ্যেই এই প্রশ্নে তার অবস্থান জানিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় শামিল হবে সিপিআই(এম)। সরকারের কাজকর্ম নিয়ে বিরোধিতা থাকলেও জাতীয় স্বার্থে পার্টির প্রতিনিধি অংশ নেবে প্রতিনিধি দলে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কী আদৌ মানুষকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ রাখতে? সব ধর্মনিরপেক্ষ, দেশপ্রেমিক মানুষকে দেশের পাশে চায় সরকার? চায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে জাতীয় স্বার্থে এক জায়গায় আনতে? জবাব প্রধানমন্ত্রীকেই দিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment