ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সোমবার কলকাতার রাজপথ কাঁপিয়ে দৃপ্ত মিছিল হুঁশিয়ারি দিল পুলিশকে, রাজ্য সরকারকেও। এদিন এই বিরাট মিছিলে ছিলেন বামপন্থী ছাত্র-যুব-মহিলা আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা। শুধু কলকাতা নয়, কলতান দাশগুপ্তের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জেলায় জেলায় রাস্তায় নেমে, বিভিন্ন থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। টালা থানার ওসি’র গ্রেপ্তার হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, তৃণমূলের নির্দেশে যারাই অপরাধে যুক্ত হবে, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে প্রতিবাদীদের হেনস্তা করবে, তারা কেউ রেহাই পাবে না।
এদিনই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সামনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তাতে বিশিষ্ট ডাক্তাররা অংশ নিয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্লোগানের আন্দোলন দমাতে কলতান দাশগুপ্ত সহ প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় হয়রান করা হচ্ছে।
কলতান দাশগুপ্তের মুক্তির দাবিতে এদিন উত্তর কলকাতার হেদুয়া থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কর্মী-সমর্থকরা। মিছিলে ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। মিছিলে অংশ নেন এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলার সভাপতি বিকাশ ঝা, জেলা সম্পাদক পৌলবী মজুমদার, এসএফআই’র কলকাতা জেলার সভাপতি বর্ণনা মুখার্জি ও জেলা সম্পাদক দিধীতি রায়, অধ্যাপক নন্দিনী মুখার্জি, নাট্যকার চন্দন সেন সহ ছাত্র-যুব ও মহিলা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, আর জি কর হাসপাতালে অপরাধের প্রমাণ লোপাটের জন্য গুন্ডা ঢুকিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছিল পুলিশ, তারপর বামপন্থীদের দোষারোপ করেছিল। সেভাবেই কলতান দাশগুপ্তকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা মিথ্যা অভিযোগে ধরল, আগামী দিনে তাদের হালও টালা থানার ওসি’র মতো হয়ে যেতে পারে।
‘তিলোত্তমা হারবে না, কলতান থামবে না’— এই জেদী বার্তায় এদিন চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন মিছিলকারীরা। এদিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ হেদুয়া থেকে প্রতিবাদী মিছিল রওনা হয় শ্যামবাজারের উদ্দেশে। স্লোগানে, ফেস্টুনে, প্লাকার্ড ঝুলিয়ে মিছিলকারীরা ডিওয়াইএফআই নেতার মুক্তির দাবির পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ দাবি করেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন, তিলোত্তমার ন্যায়বিচার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মিছিলের বহর ও শত শত কন্ঠের স্পর্ধা-মুখর স্লোগান নজর কেড়েছে পথচলতি মানুষের, স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দাদের। এই প্রতিবাদী মিছিলকে নিজের মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। হাত নেড়ে লড়াইয়ের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন বহু মানুষ। মিছিল শ্যামবাজারে পৌঁছলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে চারপাশের এলাকা। মিছিলের শেষে ছাত্র-যুব ও মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেন, ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজপথ থেকে অলিগলি, মহল্লায় মহল্লায় যে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে চক্রান্তের জাল বিছিয়ে তাকে দমানো যাবে না।
এদিন কলতান দাশগুপ্ত সহ চক্রান্তের শিকার হওয়া সব বামপন্থী কর্মীর মুক্তির দাবিতে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ও সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উদ্যোগে ঠাকুরপুকুর থানায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে পর্ণশ্রী, কসবা, পার্ক স্ট্রিট, ট্যাংরা, মানিকতলা, বেলেঘাটা, মুচিপাড়া, ফুলবাগান সহ বিভিন্ন থানায়। শনিবার থেকে মহানগরের প্রায় সবক’টি থানার সামনেই প্রতিবাদ দেখানো হচ্ছে।
এদিনই বিধাননগরের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় যুক্ত সব অপরাধীদের শাস্তি ও যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সভা হয় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দপ্তরের সামনে। মাত্র একদিনের ঘোষণায় এই বিক্ষোভ সভায় দলমতনির্বিশেষে বহু মানুষ সমবেত হন। নাগরিক সমাজের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হন চিকিৎসক প্রতিনিধিরাও। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন ডাঃ উৎপল ব্যানার্জি, ডাঃ পূণ্যব্রত গুন, ডাঃ শারদ্বত মুখার্জি, ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি, প্রযুক্তিবিদ অর্ণব রায়, অধ্যাপক দেবব্রত মণ্ডল, সমাজকর্মী সুতনুকা বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সংগঠক বাসব বসাক। বক্তারা রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা, দুর্নীতির অবসান এবং তিলোত্তমা হত্যার বিচারের দাবি তোলেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দোষীদের আড়াল করার যে অপচেষ্টা চলেছে তাকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানান বক্তারা।
Kaltan Dasgupta
যুবনেতাকে অন্যায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল
×
Comments :0