Nirapada Sardar

তৃণমূলের অত্যাচার আড়াল করতেই জেলে নিরাপদ সর্দার

রাজ্য

সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক, খেতমজুর আন্দোলনের নেতা নিরাপদ সর্দারকে ২ দিন জেল হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার তাঁকে বসিরহাট আদালতে তোলা হয়েছিল। আগামী বুধবার তাঁকে আবার বসিরহাট আদালতে হাজির করা হবে।
আদালত থেকে বেরোনর সময় নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘আমি বিধানসভায় শাহজাহান সহ তৃণমূলীদের জমি দখল, ভেড়ি বানানো সহ যে অত্যাচারের কথা ২০১৩, ২০১৪ সালে বিধানসভায় বলেছিলাম, তা আজ সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে।’’
বিধানসভায় নিরাপদ সর্দার বিভিন্ন সময়ে সন্দেশখালি এলাকায় তৃণমূলীদের পক্ষ থেকে মহিলাদের উপর অত্যাচার, ধর্ষণ, প্রতিবাদী সিপিআই(এম) কর্মীদের ঘরছাড়া করার কথা তুলে ধরেছিলেন। বিধানসভার কার্যবিবরণীতে উনি কি বলেছিলেন তা লিপিবদ্ধ আছে। এমনকি, বিধানসভায় তৎকালীন তৃণমূলী উপাধ্যক্ষ, আজকের বিজেপি নেত্রী, সোনালি গুহ নারী নির্যাতনের অভিযোগের কথা শুনেই মাইক বন্ধের নির্দেশ যে দিয়েছিলেন, সেকথাও কার্যবিবরণীতে রয়েছে।
তৃণমূল নেতা, ধৃত শিবু হাজরার ঘনিষ্ট ভানু মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে নিরাপদ সর্দার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগে শিবু হাজরারই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমবার গ্রেপ্তার হন সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সদস্য নিরাপদ সর্দার। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করে বসিরহাট মহকুমা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বসিরহাট মহকুমা আদালতে তাঁকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশ নিরাপদ সর্দারের গ্রেপ্তারি মেমো ও কেস ডাইরি আদালতে জমা দিতে পারেনি। এই ঘটনায় আদালতের কাছে চরম ভর্ৎসিত হয়েছিল পুলিশ। পরে মামলা সাজিয়ে আদালতে জমা দিলেও নিরাপদ সর্দারের জামিন মঞ্জুর হয়েছিল। এই মামলা থেকে জামিন পেলেও ভানু মণ্ডলের অভিযোগের (মুরগির পোলট্রিতে আগুন লাগানো) ভিত্তিতে নিরাপদ সর্দারকে ফের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় তাঁর ১০ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিল বসিরহাট মহকুমা আদালত। সেই মামলায় এদিন ২ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কিন্তু নিরাপদ সর্দারকে আটকে রাখতে পারলেও সন্দেশখালিকে চুপ করিয়ে রাখতে পারেনি তৃণমূল ও দলদাস পুলিশ। সোমবারও উত্তপ্ত হলো বেড়মজুর। তৃণমূল নেতা হলধর আড়ির খড়ের গাদা আগুনে জ্বলেছে এদিন। ফুল গাছ জলের পাইপ কেটে দেওয়ার দায় ঠেলা হয়েছে গ্রামবাসীদের উপর। গ্রামবাসীদের বক্তব্য তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির আহ্বায়ক হলধর আড়ি আন্দোলন ভেঙে দিতে নিজেই খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যাতে অজিত মাইতির মতো তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ গ্রামবাসীরা চড়াও না হয়। এই নিয়ে এদিন সকালে বেড়মজুরে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অজিত মাইতি গ্রেপ্তার হয়েছে, তাই তৃণমূলের দায়িত্ব এখন হলধর আড়ি ও শক্তিপদ রাউতের উপর। অজিত মাইতির পাশেই হলধর আড়ির বাড়ি। রবিবার অজিত মাইতির বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। আদালত অজিত মাইতিকে ৫ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি শিবপ্রসাদ হাজরার ৬ দিনের পুলিশি হেপাজত, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহের ২ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখা যায় সন্দেশখালিতে। এদিনও লাঠি, বাঁশ হাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন বেড়মজুরের বাসিন্দারা। এবার নির্যাতিত গ্রামের মহিলাদের অভিযোগের কাঠগড়ায় শঙ্কর সর্দার। সন্দেশখালি দ্বীপের পর বেড়মজুরে প্রকাশ্যে এল গ্রামের মহিলাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ। অভিযোগ উঠছে, সংসারে স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলা হলে মেটানোর দায়িত্ব নিতেন শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন। আর সেখানে মহিলাদের উপর চলত শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা। এদিন এমনই অভিযোগ করলেন এক নির্যাতিতা।
তিনি জানান, ‘‘মাস ছ’য়েক আগে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা চলছিল। সিরাজউদ্দিনের কাছে গেলে সেখানে অজিত মাইতি ছিল। আমার উপরে শারীরিকভাবে অত্যাচার সহ আমার সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। সেদিন আমার পাশে শুধু এক দিদি ছিল। আর তার কোলে বাচ্চা ছিল। সেই বাচ্চাকেও ওরা মেরেছিল সে সময়ে। তখন আমার খুড়তুতো কাকা-কাকিমাও আমার চুলের মুঠি ধরে মেরেছিল। আমি সিরাজকে জানাতে গিয়েছিলাম। উলটে আমি নিগৃহীত হই।’’ সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এখন বেড়মজুরের মহিলারা লাঠি-ঝাঁটা হাতে রাস্তায় নেমেছেন। তাই ঐ নিগৃহীতাও সাহস করে মুখ খুলেছেন ক্যামেরার সামনে। সেই মহিলা এবার পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর সর্দারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলছেন। ঐ নিগৃহীতার বয়ান অনুযায়ী, শঙ্কর সর্দার সম্পর্কে তাঁর দাদা হন। তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হওয়ায় পাড়ার ‘দাদা’রা তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সিরাজউদ্দিনের কাছে। তিনি সমস্ত অভিযোগ শোনেন। তারপর ওই মহিলাকে তিনি পাঠিয়ে দেন পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর সর্দারের কাছে। কিন্তু মহিলার অভিযোগ, বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার নামে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়। 
সোমবার সকালে সেই শঙ্কর সর্দারের পরিবারের উপরেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে মহিলাদের। বাড়িতে চলে ভাঙচুর। খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসপি হোসেন মেহেদী রহমান জানান, এদিনও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি হুমকির সুরে বার্তা দেন,‘‘আপনাদের কোনও অভিযোগ থাকলে থানায় বা পুলিশ ক্যাম্পে জানান। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে নিশ্চয়ই ব্যবস্হা নেওয়া হবে। তবে আইন হাতে তুলে নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে পুলিশ।’’

Comments :0

Login to leave a comment