Recruitment scam

স্থগিতাদেশ মেলেনি, প্রশ্নে বিদ্ধ পর্ষদ

রাজ্য

অস্বচ্ছ এবং বেআইনি নিয়োগে চাকরি বাতিলের মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর মঙ্গলবার কোনও স্থগিতাদেশ দিল না ডিভিসন বেঞ্চ। উলটে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবারের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিসন বেঞ্চ, প্রশিক্ষণ না থাকা প্রার্থীদের প্রসঙ্গে পর্ষদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে। পর্ষদকে বিচারপতিদের প্রশ্ন, নিয়োগ হলো অথচ নিয়ম মেনে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হলো না কেন? তাহলে নতুন করে ইন্টারভিউতে অসুবিধা কোথায়? এই নিয়োগের বাকি নিয়মগুলি কী কী তা আদালতকে জানাতে হবে। বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
  উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরির পরীক্ষায় বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ করে ২০১৬ সালে মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই চাকরিতে নিয়োগ হয়েছিল ৪২৫০০ জনের। তার মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে একসঙ্গে ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণবিহীন প্রার্থীর চাকরি বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট (পরে অবশ্য তা সংশোধন হয়ে সংখ্যাটা ৩২ হাজার হয়)। শুক্রবার ওই নজিরবিহীন রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। নির্দেশে বলা হয়, ওই চাকরি বাতিল হওয়া প্রার্থীদের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে যদি অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তা না হলে আগামী ৪ মাস তাঁরা পার্শ্বশিক্ষকের পদে চাকরি করতে পারবেন, ওই ৪ মাসের জন্য তাঁরা বেতন পাবেন পার্শ্বশিক্ষকের বেতনের মতোই।
   এই রায়ের বিরোধিতা করে সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মামলা দায়ের করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে। অন্যদিকে চাকরি হারানো ১ হাজার শিক্ষকও মামলা দায়ের করেছে ডিভিসন বেঞ্চে। মঙ্গলবার দুটি মামলারই একযোগে শুনানি হয়েছে সুব্রত তালুকদারের ডিভিসন বেঞ্চে।  ইতিমধ্যে অবশ্য আদালতে সংশোধন হয়েছে বাতিল হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা। ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশের পর কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলা মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীরাই। তাঁদের বক্তব্য, মুদ্রণজনিত ত্রুটি হয়েছে ওই সংখ্যার ক্ষেত্রে, এটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার ভুল সংশোধন করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, চাকরি বাতিলের সংখ্যাটি ৩২ হাজারের আশেপাশে হবে। 
  উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষার পর ২০১৬ সালে ৪২৫০০ জনকে নিয়োগ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই নিয়োগে নানা অস্বচ্ছতা ও বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে রাজ্য জুড়ে। বিশেষ করে অ্যাপটিটিউড টেস্টের নম্বরে কারচুপি এবং সংরক্ষণ নীতি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানান মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীরা। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলে। এ প্রসঙ্গে বারবারই পর্ষদের জবাবে ও ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।  গত শুক্রবার একসঙ্গে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি। বর্তমানে তা সংশোধন হয়ে ৩২ হাজার হয়েছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে জানা যায়, অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়াই হয়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অথচ নম্বর বসেছে। ইন্টারভিউয়ের নম্বরেও পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ক্ষেত্রে। এভাবেই নিয়োগ তালিকা তৈরি হয়েছে এবং চাকরির সুযোগ পেয়েছেন প্রশিক্ষণবিহীনরাও। 
   মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চও সেই একই প্রশ্ন তুলেছে পর্ষদের কাছে। আদালতের প্রশ্ন, অ্যাপটিটিউড টেস্টের জন্য যে নম্বর ধার্য আছে তার প্রায় পুরোটাই পেয়েছেন অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী। কীভাবে তা সম্ভব হলো? ডিভিসন বেঞ্চের আরও প্রশ্ন, সিঙ্গল বেঞ্চ তো নতুন করে ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিটিউড টেস্টের কথা বলেছে চাকরি বাতিলদের ক্ষেত্রে, পর্ষদের কাছে এর কিছু ব্যাখ্যা আছে কিনা। ডিভিসন বেঞ্চের বিচারপতিদের প্রশ্ন, সিঙ্গল বেঞ্চের বক্তব্য অনুযায়ী অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি শোনা যাচ্ছে, ইন্টারভিউয়ের নম্বরও ইচ্ছামতো দেওয়া হয়েছে— এরও ব্যাখ্যা দিতে হবে পর্ষদকে। নিয়োগের সমস্ত নিয়মগুলি কী কী- পর্ষদকে তা আদালতের কাছে জানাতে হবে। প্রশিক্ষণ নেই যাঁদের, তাঁদের সম্পর্কে পর্ষদ কী ভাবছে, তাও আদালতের কাছে বলতে হবে। এই মামলার শুনানিতে এদিনও পর্ষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবকিছুই নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment