অমিত কুমার দেব- কোচবিহার
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তির প্রভাবে রীতিমত সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোচবিহার জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের মানি এক্সচেঞ্জ বা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন বাড়ছে এই সংকট। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরুক প্রতিবেশী এই দেশ, চাইছেন এদেশের এই ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের ব্যবসায়ীরাও।
দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ পরিচালনার ভার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে এলেও এই অশান্তি বন্ধ হবার কোন লক্ষণ নেই। বর্তমানে প্রতিবেশী এই দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে কোন ভিসা দেওয়া হচ্ছে না ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ৮০০ জন যাতায়াত করলেও বর্তমান সময়ে এই সংখ্যাটা নেমে এসেছে ৫০এ। স্বাভাবিক ভাবেই বিপাকে পড়েছেন এই চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এর মানি এক্সচেঞ্জ কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি সকল ধরনের ব্যবসায়ীরা।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী অমলেন্দু রায় বসুনিয়া জানান, দীর্ঘ প্রায় ৬মাস যাবত এই সংকটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা। ব্যবসায় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। তিনি জানান, চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যারা ভিসা পেয়েছেন তারাই যাতায়াত করতে পারবেন, কিন্তু এরপর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে, কারণ ডিসেম্বর মাসের পর কাউকে ভিসা দেয়নি এদেশের সরকার। তিনি বলেন, সাময়িক ভাবে হয়তো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। কিন্তু তারাও চাইছেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন হওয়ার পরই আবার ভিসা দেওয়া চালু করুক দেশের সরকার।
অশান্ত বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে চলতি বছরের ৫ আগস্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে শেখ মুজিবের ছবি ছাড়া নোট। ইতিমধ্যেই এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে। সে দেশের মুদ্রার ওপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি। শেখ মুজিবের জায়গায় ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্য এবং জুলাই বিপ্লবের দেয়াললচিত্র বা গ্রাফিতি যুক্ত হবে। ইতিমাধ্যেই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্তরর্তী সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূ্ত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে খুব তারাতারি বাংলাদেশের ২০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা নতুন নোট ছাপাবে অন্তর্বর্তী সরকার। আপাতত এই নোটগুলিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে না। সব নোট থেকেই তার ছবি তুলে দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘নতুন টাকা ছাপার সিন্ধান্ত অনেকদূর এগিয়েছে। হয়তো আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে নতুন টাকা।’’ টাঁকশালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন শুধু টেন্ডার বাকি। সেই কাজ শেষ হলেই নতুন টাকা বাজারে চলে আসতে সময় লাগবে না। এই মুহূর্তে টাকা ছাপা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে হলে আবার ছাপা শুরু করা হবে।’’ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘‘শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে চারটি নোট আবার নকশা করা হবে। পরে অন্য নোটগুলোতেও পরিবর্তন আনা হবে।’’
.বাংলাদেশ থেকে যারা এদেশে আসেন তাঁরা বাংলাদেশের টাকার বিনিময়ে ভারতীয় টাকা নেন। আবার ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় ভারতীয় টাকার বদলে বাংলাদেশের টাকা নেন। কিন্তু বাংলাদেশের টাকার ওপর মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে নেওয়া হতে পারে সেই আতঙ্কে মুদ্রা বিনিময় করছেন ভারতীয় মুদ্রা বিনিময়কারী সংস্থাগুলি।
সোমবার এই ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট হয়ে বাংলাদেশ থেকে বিজনেস ভিসা নিয়ে ভারতে আসেন ঢাকার বাসিন্দা আকবর হাসান সোহান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবতই ব্যবসার কারণে ভারতে আসতে হয় তাঁকে। এই বাংলাদেশি নাগরিক মনেপ্রাণে চান ভারতের সাথে চিরদিন বন্ধুত্ব অটুট থাকুক বাংলাদেশের তিনি বলেন রাজনীতি থাকুক আলাদা জায়গায় এবং বন্ধুত্ব স্থান হোক আলাদা।
শিলিগুড়ি থেকে চিকিৎসা করিয়ে এদিনই এই ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট হয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হোন বাংলাদেশের রংপুরের বাসিন্দা পুতুল মহন্ত। বাড়িতে সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারের অন্যান্যরা রয়েছেন বলে কিছুটা হলেও উদ্বেগ কাজ করছে তার মধ্যে। কিন্তু তিনি জানান, খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, কোন রকম অশান্তির বাতাবরণ নেই রংপুর এলাকায়। চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার আগ মুহূর্তে এক উচ্ছ্বাস দেখা গেল তার চোখে মুখে।
এই মুহূর্তে সকলেই চাইছেন শান্তি ফিরে আসুক বাংলাদেশে। স্বাভাবিক হোক দু দেশের যাতায়াত। দুদেশের মধ্যে মৈত্রী সুদৃঢ় হোক, সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।
Bangladesh
বাংলাদেশে অশান্তির প্রভাব কোচবিহারের মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলিতে
×
Comments :0