যারা শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য সোচ্চার, তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। অথচ যারা মিথ্যা প্রচারে যুদ্ধোন্মাদনা ছড়াচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার নিশ্চুপ কেন? মঙ্গলবার যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে মিছিল করে বামপন্থী দলসমূহের নেতৃবৃন্দ এই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্র ও এরাজ্যের সরকারের উদ্দেশ্যে। তাঁরা বলেছেন, বৈদেশিক শত্রু ও সন্ত্রাসবাদীদের দোসরের ভূমিকা নিয়েছে দেশের অভ্যন্তরের সাম্প্রদায়িক ঘৃণাপ্রচারকারীরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ, পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সিপিআই(এম), সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(সি), আরসিপিআই, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক, ওয়ার্কার্স পার্টি, বলশেভিক পার্টি, এই দশটি বামপন্থী দল এদিন কলকাতায় যৌথভাবে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে বিরাট মিছিল বের করে। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ধর্মতলায় লেনিনের মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। পোস্টার ব্যানারে, স্লোগানে তুলে ধরা হয় মানবতার কথা। ফুটে ওঠে কলকাতার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহ্য। লেনিন সরণি দিয়ে মিছিল এগিয়ে শেষ হয় শিয়ালদহ স্টেশনের পাশে। সাড়া ফেলে দেয় রাস্তার দু’পাশের মানুষজনের মধ্যেও। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পার্টি নেতা সূর্য মিশ্র, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতা কার্তিক পাল, জয়তু দেশমুখ, এসইউসিআই(সি) নেতা চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা রতন ভট্টাচার্য, আরএসপি নেতা দেবাশিস মুখার্জি সহ সব বামপন্থী দলগুলির নেতৃবৃন্দ।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেই আমরা এর বিরুদ্ধে কলকাতায় মিছিল করেছিলাম। আমরা গোড়া থেকেই বলেছি দেশ যখন আক্রান্ত তখন সবার আগে প্রয়োজন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা, একতাই আমাদের শক্তি। নইলে সীমান্ত পারের শত্রুরা সুযোগ নেবে। বিদেশ সচিবও পরে বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টি করা। কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে দেশবাসীকে অন্য পাঠ দেওয়া শুরু করেছে আরএসএস। তারা ঐক্য ও শান্তির কথাকে ঘৃণিত বলে প্রচার করেছে, সোসাল মিডিয়াতে নিহত নৌ অফিসারের স্ত্রী এবং বিদেশ সচিবের কন্যাদেরও ট্রোল করেছে। এরা দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদীদের দোসর হিসাবে ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী এদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলতে পারলেন না, ফেক নিউজ ছড়ানো মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না, সত্য প্রকাশ করা সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’কে হেনস্তা করলেন। বাংলা ও কলকাতার ঐতিহ্যের বিপরীতে গিয়ে এখানেও যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির কথা বলায় হেনস্তা করা হয়েছে। এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ এরাজ্যের সরকার চুপ করে থেকেছে।
মোদী সরকারের কাছে জবাবদিহি চেয়ে সেলিম বলেছেন, সন্ত্রাসবাদকে রোখার কথা বলেই মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কেন বিঘ্নিত হলো তার জবাব মোদীকেই দিতে হবে। ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক বিষয়, পাকিস্তান বরাবর কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকীকরণ করেও সফল হতে পারেনি। তাহলে এখন ট্রাম্পকে মুরুব্বি হিসাবে ঢুকতে দেওয়া হলো কেন তার জবাবও মোদীকে দিতে হবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পশ্চিম এশিয়ার মতো দক্ষিণ এশিয়াকেও যুদ্ধভূমিতে পরিণত করতে চায়। তার বিরুদ্ধেই শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বিহার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মোদীকে যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে শ্রমিক কৃষকদের জীবনের সমস্যাগুলিকে আড়াল করতে দেওয়া যাবে না।
সভাপতিত্ব করে বিমান বসুও বলেছেন, আমরা বলি দুনিয়ার মজদুর এক হও। ওরা মজুর কৃষকদের ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করতে চায়, এর থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বপন ব্যানার্জি বলেছেন, জনগণের মধ্যে যারা যুদ্ধোন্মাদনা জাগাচ্ছে তারাই আসলে দেশদ্রোহী। যুদ্ধ হলে তার খরচ তুলতে জনগণের ওপরে করের বোঝা চাপাবে, মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে, আবার যুদ্ধ দেখিয়ে জনগণের সব সমস্যাকে আড়াল করবে, এটাই এদের উদ্দেশ্য। চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেছেন, যুদ্ধ সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটায় না। সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধ চায়, দেশবাসী নয়। আমরা বামপন্থীরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে। যেভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে একটা ধর্মকে জুড়ে দিয়ে সেই ধর্মের মানুষকে আক্রমণ করা হচ্ছে সেটারও বিরুদ্ধে। জয়তু দেশমুখ বলেছেন, টিভিতে আইপিএল খেলার মতো যুদ্ধ প্রচার করা হচ্ছিল। আর যারা তার বিরুদ্ধে স্বর তুলেছেন তাঁদেরই হেনস্তা করা হচ্ছিল। আমরা বামপন্থীরা আজ রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। দেবাশিস মুখার্জি বলেছেন, পহেলগামের ঘটনার পরেই সর্বদলীয় বৈঠকে সব দল সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে সরকারকে সমর্থন করেছিলাম, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ মোদী নিজেই সেই বৈঠকে থাকেননি। তারপরে যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে ফের মানুষকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে এই সরকার।
LEFT RALLY
শান্তি, সম্প্রীতির আহ্বানে দীপ্ত মিছিল বামপন্থীদের

×
Comments :0