JALPAIGURI SCHOOL

বন্ধ হওয়ার মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়ালো
স্কুল, সম্মান শিক্ষকদের

জেলা

JALPAIGURI SCHOOL ছবি: অনামী স্কুলের নজরকাড়া সাফল্যে শিক্ষকদের সংবর্ধনা এবিটিএ" র।

দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি

পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্যই সংবর্ধনা, তবে শিক্ষকদের। 

মেহেরুন্নেসা হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এবারের মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে। প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সম্মান জানালো শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। 

 জলপাইগুড়ি শহরের এই স্কুল প্রচারের আড়ালেই ছিল। গত কয়েক বছর ধরে ধুঁকছিল স্কুলটি। কোভিড কালের পর ছিল হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্র ছিল। ছাত্রের অভাবে প্রায় বন্ধ হতে যাওয়া সেই স্কুল সাফল্যের বিচারে পিছনে ফেলে দিয়েছে প্রচারে থাকা বহু প্রতিষ্ঠানকে। 

এই স্কুলে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। ৩৫ জনই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে ৯০ শতাংশের ওপরে নম্বর পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৪, ৮০ শতাংশর ওপরে পেয়েছে ১১ জন ও ৬০ শতাংশর ওপরে রয়েছে ২০ জন ছাত্র। 

বিভিন্ন কারণে ছাত্র ভর্তি না হওয়ায় ২০১১ সালে এই স্কুলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়ে ছিল মাত্র ২৪। শহরের অধিকাংশই ধরে নিয়েছিলেন স্কুলটি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। ২০২২ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব স্কুলেরই সহশিক্ষক আনোয়ার হোসেনের কাঁধে আসে। একেবারে শূন্য থেকে প্রচেষ্টা শুরু করতে হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। দীর্ঘ বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে স্কুলকে টিকিয়ে রাখার জন্য সহকর্মীদের নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ছাত্রদের টানতে অভিভাবকদের বাড়ি, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয় তাদের। 

আনোয়ার হোসেন জানালেন, ‘‘লড়াইটা একেবারেই সহজ ছিল না। স্কুলটা ধীরে ধীরে বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল। ছাত্র পাচ্ছিলাম না। শহরের বিভিন্ন নামী স্কুলের সঙ্গে লড়াই করাটা সম্ভবপর ছিল না। অধিকাংশ অভিভাবকরাই আর এই স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করতে চাইছিলেন না। কিন্তু হাল ছাড়িনি। স্কুলের সহকর্মীদের নিয়ে জলপাইগুড়ির কোরক হোম, গ্রামীণ এলাকা, শহর ও সংলগ্ন একাধিক জায়গার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে পড়ুয়াদের ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছি।’’

হোসেন জানাচ্ছেন, ‘‘২০২২ সালে কিছুটা সাফল্য আসে। একেবারে ছাত্রশূন্য অবস্থায় থাকা  স্কুলে ছাত্র সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২২৭-এ। গত বছর পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হলেও এবার অনেকটাই সাফল্য এসেছে। আরো কিছু ছাত্র পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো বলে আশা করি।’’

স্কুলে মোট ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে স্কুলকে পুনর্জীবিত করার প্রয়াস করছেন সকল শিক্ষক শিক্ষকরাই। ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলই সকলকে বাড়তি অক্সিজেন যুগিয়েছে। তাঁরা আর পেছনে ফিরে তাকাতে চান না। 

মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে মেহেদী হাসান। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৫৩। ৯৩.৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে হয়েছে সে। বিভিন্ন বিষয়ে তার নম্বর হল, বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৮৫, অংকে ৯৪, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ইতিহাসে ৯১ ও ভূগোলে ১০০। 

বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় মেহেদি। সে জানাল, ‘‘সবাই ভালো স্কুলে পড়তে চায়। কিন্তু আমাদের স্কুল থেকেও এ বছর খুব ভালো ফল হয়েছে। আমার বন্ধুরাও সবাই প্রথম বিভাগে পাস করেছে। আমাদের স্কুলে ছাত্র সংখ্যা অনেকটাই কম। আরো বেশি ছাত্র ভর্তি হলে আরো ভালো ফল হতে পারে। আমার বাবা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। খুব কষ্ট করেই তিনি আমাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। আমি ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের কথায়, ‘‘সাফল্য যে কোনও স্কুল থেকেই আসতে পারে। স্কুলকে আরও ভালো করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্কুলকে ইংরেজি মাধ্যমে উন্নীত করার জন্য ডিআই অফিসের মাধ্যমে বিকাশ ভবনে আবেদন পাঠিয়েছি।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment