Mohan Bhagwat

মার্কসবাদীরাই আদর্শগত শত্রু, আবারও স্পষ্ট করলেন ভাগবত

জাতীয়

 ফের মার্কসবাদী, বামপন্থীদের নিশানা করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। শনিবার নাগপুরে আরএসএস’র সদর দপ্তরে বিজয়া দশমীর ভাষণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন সঙ্ঘ প্রধান। সেখানেই মার্কসবাদীদের বিরুদ্ধে আদর্শগত সঙ্ঘাতের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভাগবত। তিনি বলেন, ‘ডিপ স্টেট, ওকিজম এবং কালচারাল মার্কসিস্ট শব্দ এখন শোনা যাচ্ছে, যা সমস্ত সাংস্কৃতিক পরম্পরার ঘোষিত শত্রু’। প্রতি বছরই বিজয়া দশমীর দিন ভাষণ দেন সঙ্ঘ প্রধান। সেখান থেকে হিন্দুত্ববাদীদের কার্যপন্থার দিক নির্দেশ থাকে। ওয়াকিবহলরা জানেন, সঙ্ঘপ্রধান সরাসরি কোনও বিষয় বলার তুলনায় ইঙ্গিতপূর্ণভাবে মন্তব্য করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তা আপাত নিরীহ হলেও তাদের অনুগামীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা যায়। শনিবারও মার্কসবাদীদের আক্রমণের ক্ষেত্রেও সেই কাজটি করেছেন ভাগবত। উল্লেখ্য, গত বছরও বিজয়া দশমীর ভাষণ থেকেও আদর্শগত দিক থেকে মার্কসবাদীদেরই শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন সঙ্ঘপ্রধান। 
মার্কসবাদীদের নিয়ে বিপদ কেন তা স্পষ্ট করে ভাগবত বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক মূল্য, পরম্পরা, এবং যেখানে যেখানে যা কিছু ভদ্র, মঙ্গল মনে করা হয়, তার সমূল উচ্ছেদই এদের কার্যপ্রণালীর অঙ্গ। এরা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিতে, বৌদ্ধিক জগতে হানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এরা দেশজুড়ে বৈপরীত্যকে সঙ্ঘাতে পরিণত করছে।’ দেশে অসন্তোষ, প্রতিবাদ এবং উগ্রবাদ ছড়ানোর জন্যেও তিনি ‘সাংস্কৃতিক মার্কসবাদী’ দের দায়ী করছেন। সঙ্ঘ প্রধানের স্পষ্ট বার্তা, এখন যুদ্ধ করে দেশ দখল করা হয় না,  ‘মন্ত্র বিপ্লব’ (মতাদর্শগত লড়াই)—এর মাধ্যমে করা হয়। গত বছরও ‘সাংস্কৃতিক মার্কসবাদ’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভাগবত বলেছিলেন, ‘এই ধরনের শক্তির কাজ সমাজে নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়া। সংবাদ মাধ্যম, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এঁদের প্রভাবের ফলে এঁরা সামাজিক শৃঙ্খল, নৈতিকতা, সংস্কৃতি, মর্যাদা ও সংযমকে ধ্বংস করে। এঁদের লক্ষ্য, বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করা।’ 
সাংস্কৃতিক মার্কসবাদ এবং সাংস্কৃতিক মার্কসবাদী বলতে আরএসএস প্রধান কী বলতে চাইছেন, কেন তিনি বার বার এই কথা বলছেন? মহিলা এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক মালিনী ভট্টাচার্যের মতে, আরএসএস শুধু মাত্র রাজনৈতিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করতে চায় তাই নয়, তারা দেশে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বাতাবরণ চায়, যা সেই হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণাকে পরিপুষ্ট করবে। ভারতের বহুত্ববাদী ধারণার বিপরীতে একমাত্রিক হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত করার এই কাজে মার্কসবাদীরা প্রধান বাধা। সঙ্ঘকর্মী ও অনুসারীদের মতাদর্শগতভাবেই তাই মার্কসবাদী-বামপন্থীদের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করার বার্তা দিচ্ছেন তিনি। 
বিশিষ্ট মারাঠি সাংবাদিক রাজেন্দ্র সাঠে এই বিষয়ে একটি হিন্দি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বংয়সেবক সঙ্ঘ সবসময়েই মার্কসবাদীদের সমালোচনা ‘সাংস্কৃতিক মার্কসবাদ’-এর ভিত্তিতেই করে। কারণ, আরএসএস মনে করে ভারতের সংস্কৃতি ‘হিন্দু সংস্কৃতি’। এই কারণে সঙ্ঘ হামেশাই অভিযোগ করে, ভারতের সংস্কৃতি ‘হিন্দু সংস্কৃতি’, যা ‘সাংস্কৃতিক মার্কসবাদ’ এর মাধ্যমে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজেন্দ্র সাঠের মতে, ভাগবতের এমন বয়ানকে ‘ডগ হুইসল’ বলা যায়। যা সঙ্ঘের অনুগামীদের জন্য হামলার ইঙ্গিত। 
এইরকমই মনে করেন সাংবাদিক লেখক ধীরেন্দ্র ঝা। দীর্ঘদিন ধরে আরএসএস নিয়ে কাজ করা ঝা সোমবার গণশক্তিকে বলেছেন, আসলে সঙ্ঘপ্রধান বিজেপি সরকার এবং সংগঠনকে কিছু কাজ দেন। বিজয়া দশমীর ভাষণ সেই হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে ‘সাংস্কৃতিক মার্কসবাদী’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন। এটা একধরনের দেগে দেওয়ার চেষ্টা। যেমন ‘আরবান নকশাল’ শব্দ আমদানি করা হয়েছিল। ‘কালচারাল মার্কসিস্ট’- কেও তেমনই ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারকে কার্যত নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে মার্কসবাদী-বামপন্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য। ধীরেন ঝা মনে করছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এবং বৌদ্ধিক জগতে বামপন্থীদের যে প্রভাব আছে, এর মাধ্যমে সেই জায়গাটাকেই চিহ্নিত করছেন ভাগবত। 
সঙ্ঘপ্রধান নানা বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন বিজয়া দশমীর ভাষণে। তার মধ্যে হিন্দুদের নিজেদেরই ‘আত্মরক্ষা’র ব্যবস্থা করে নেওয়ার নিদান যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনই সব হিন্দু এক হও ধরনের কথা বলেছেন। জাতভিত্তিক গণনা এবং দলিত-ওবিসিদের জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষণের সুযোগ পাওয়ার দাবি ক্রমশ জোরদার হয়ে ওঠার পরে থেকেই ভাগবত এই বিষয়ে লাগাতার বলছেন। নিপীড়িত অংশের জন্য ন্যায়সঙ্গত দাবিকে ভাগবত হিন্দু সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেশে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র বলেছেন। বাংলাদেশের অস্থিরতা ও অশান্তির উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ভারতেও নানা অংশে এই ধরনের ঘটনা সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে। কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল নিয়ে তাঁর ভাষণে মন্তব্য করেছেন ভাগবত। কিছুদিন আগে কলকাতায় এসে কার্যত মমতা ব্যানার্জির সরকারের হয়েই সওয়াল করেছিলেন তিনি। বিজয়া দশমীর ভাষণ থেকেও তৃণমূল সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কথা না বলে তিনি বলেন, এত গুরুতর অপরাধে কিছু লোক অপরাধীদের বাঁচানোর ঘৃণিত চেষ্টা করেছে। যদিও মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অন্য কোনো ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি সঙ্ঘপ্রধান। বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির জঘন্য ঘটনা নিয়ে চুপ থেকেছেন। ব্রিজভূষণ সিং বা বীনেশ ফোগটের নাম আসেনি ভাগবতের ভাষণে।  
 

Comments :0

Login to leave a comment