Palestine Israel war

গাজার ১১ লক্ষ অধিবাসীকে সরে যেতে বলল ইজরায়েল

আন্তর্জাতিক

প্রায় সাত দিন গাজায় একটানা বিমানহানার পরে এবার গাজার মাটিতে ঢুকতে চলেছে ইজরায়েলের বাহিনী। ইজরায়েলের পক্ষ থেকে ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছে উত্তর গাজার সমস্ত অধিবাসীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই সংখ্যা ১১ লক্ষ বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘকেও এই ‘চরমপত্র’ দিয়ে ইজরায়েল জানিয়েছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে চলে যাক অধিবাসীরা। রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বার্তাকে অমানবিক ও অসম্ভব বলা হয়েছে। লক্ষণীয়ভাবে, ইজরায়েল এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিণ্কেন তেল আভিভে এসে আলোচনার পরে। মার্কিন সবুজ সঙ্কেত পেয়েই ইজরায়েল গাজায় স্থল আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমেরিকা এও জানিয়েছে, যুদ্ধের গতিতে আমেরিকা থেকে ইজরায়েলে অস্ত্র সাহায্য আসবে। ভূমধ্যসাগরে গাজার কাছে ইতিমধ্যেই মার্কিন নৌবহর দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি নৌবহর ভার্জিনিয়া থেকে রওনা হয়েছে। 
বৃহস্পতিবারই ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়েছিল ছ’দিনে ৬ হাজার বোমা ফেলেছে তারা। তার পরের ২৪ ঘণ্টাতেও একটানা বিমান হানা চলে। ৩৬১ বর্গ কিলোমিটারের গাজায় এই হিসাবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে অন্তত ২০টি বোমা বর্ষণ করা হয়েছে বিমান থেকে। আক্রমণের ভয়াবহতা এ থেকে আন্দাজ করা যায়। ইতিমধ্যেই ১৮০০-র বেশি গাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ জখম হয়েছেন। উত্তর গাজা থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে বলার কোনও অর্থই নেই কেননা সমগ্র গাজাতেই ইজরায়েল বোমা ফেলেছে। গাজা চারদিক থেকে ঘেরা। কোনও মানুষই গাজা থেকে পালাতে বা সরে যেতে পারেন না। উত্তর গাজার ইজরায়েল সীমান্ত এলাকায় আনুমানিক ৪,৪০,০০০ মানুষ থাকেন। গাজা সিটিতে থাকেন সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ। ইজরায়েলের বার্তা থেকে আন্দাজ করা হচ্ছে ‘ওয়াদি গাজা’ বলে পরিচিত অঞ্চল পর্যন্ত তাদের বাহিনী ঢুকবে। কিন্তু মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহ, দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস, আরো দক্ষিণে রাফায় ইজরায়েলের একটানা বোমাবর্ষণ চলছে। এইসব অঞ্চলেও কয়েক হাজার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে, ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর তরফে অধিবাসীসের সরে যেতে বলার নির্দেশ তারাও পেয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মুখপাত্র স্তেফানে দুজারিক বলেছেন, বিধ্বংসী পরিণাম ছাড়া এভাবে ১১ লক্ষ লোককে সরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। ইতিমধ্যেই যে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মহা-বিপর্যয়ে পরিণত হবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘেরই হিসাব, অন্তত ৪ লক্ষ ২৩ হাজার অধিবাসী ইতিমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। 
গাজায় এখন কোনও নিরাপদ এলাকা নেই। গাজা শহরে প্যালেস্তাইন রেড ক্রেসেন্টের মুখপাত্র নেহাল ফারশাখ সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘খাবার, বিদ্যুতের কথা ভুলে যান, জ্বালানির কথা ভুলে যান, এখন একমাত্র প্রশ্ন হলো বেঁচে থাকবেন কি না’। স্বাস্থ্যকর্মীদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইজরায়েলের বার্তা মান্য করার অর্থ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃত বলে ঘোষণা করা। কোনও জখমের আর কোনও চিকিৎসা হবে না। গাজার উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আল শিফা হাসপাতালকে কোথায় নিয়ে যাব? প্যালেস্তাইন রেড ক্রেসেন্ট অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথাও যাবেন না। অনেক চিকিৎসকই বরং পরিবারকে ‘বিদায়’ জানিয়ে দিয়ে রোগীদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘও জানিয়েছে, তাদের পরিচালিত স্কুলে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সরে যাবে না। তবে, সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইজরায়েলি হুমকির পরে হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় উত্তর গাজা থেকে পালাচ্ছেন। তাঁরা শেষ সম্বল বস্তায় ভরে, শিশুদের হাত ধরে হেঁটেই চলেছেন দক্ষিণের দিকে। যদিও গাজার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই সরে যাননি। হামাস তাদের ঘোষণায় বলেছে, এইভাবে জায়গা ফাঁকা করার নির্দেশ ইজরায়েলের কৌশল। গাজার অধিবাসীদের তারা জায়গা না ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে। 
অন্যদিকে, গাজায় সংঘাত চললেও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে নির্বিচারে ইজরায়েলী সেনারা গুলি করে প্যালেস্তিনীয়দের মারছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 
শুধু আশু আক্রমণের ভয়ই নয়, গাজার মানুষের মধ্যে এই অভিবাসনের নির্দেশ ইতিহাসের ছায়া বহন করে আনছে। প্যালেস্তাইন ভেঙে ১৯৪৮ সালে যেদিন ইজরায়েল তৈরি হয় তখন লক্ষ লক্ষ আরব শরণার্থী হয়ে যান। গাজার আজকের অধিবাসীদের অর্ধেকের বেশি সেই শরণার্থীদের পরবর্তী প্রজন্ম। এমনকি পরেও প্যালেস্তিনীয়দের ওপরে প্রত্যেক আক্রমণের সময়ে শরণার্থীরা এসেছেন গাজায়। গাজার মানুষের সমষ্টিগত স্মৃতিতে এই ক্ষত রয়ে গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment