Dengue Death Deganga

ফের ডেঙ্গুতে মৃত্যু রাজ্যে, ‘কাটমানিতে ব্যস্ত ডেঙ্গুতে উদাসীন’

রাজ্য জেলা

Dengue Death Deganga


ভয়াবহ ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের ব্যর্থতাই দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। ফের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু। রাজ্যে পরপর ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুতে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ। ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা সহ জেলাগুলিতে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি রাজ্য স্বাস্থ দপ্তর। তবে বেসরকারি মতে ডেঙ্গুতে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫১ জনের। এপর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর আসছে।

 ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমরুলী গ্রামে। মৃত যুবকের নাম সরিফুল ইসলাম (২৪)। রবিবার সন্ধ্যায় বারাসাত জেলা হাসপাতালে সরিফুলের মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরিফুলের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হাসপাতাল তথ্য গোপন করে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সেফটিসেমিয়া দেখাচ্ছে। সরিফুলের পরিবার সূত্রে জানা যায় গত শনিবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর সেখান থেকে তাঁকে বারাসাত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে চিকিৎসক। সরিফুল ইসলামের প্লেটলেট ৪৭ হাজারে নেমে এসেছিল। চিকিৎসা চলার পরে রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু কিন্তু হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গু উল্লেখ করা হয়নি। সরিফুলের সেফটিসেমিয়াতে মৃত্যু হয়েছে মৃত্যুর শংসাপত্রে এমনটি লেখা রয়েছে। তার পরিবারের দাবি ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গি জ্বরে আরও পাঁচ থেকে ছয় জন আক্রান্ত। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের পরিষেবা মিললেও ব্লক প্রশাসনের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন মৃতের পরিবারের দাবি। 


রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘কাটমানিতে ব্যস্ত ডেঙ্গুতে উদাসীন’। ‘‘দিল্লি বা কলকাতা যেখান থেকেই শাসন করুক। উত্তরবঙ্গ থেকে উত্তরকন্যা, পৌরসভা থেকে পঞ্চায়েত সর্বত্রই নাগরিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। রোগভোগ, মহামারী থেকে লড়াই করার কেউ নেই। পৌরসভা কাটমানি, টেন্ডারের জন্য ব্যস্ত। কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্ব ছিলো। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, পৌরসভা কেউই তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। সাধারণ মানুষ মহামারীর শিকার হচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থাই চোখে পড়ছে না। অনুষ্ঠান করে কিছু মশারি বিলি করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য সঠিক সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। একদিকে লক্ষ্মীর ভান্ডারে ৫০০টাকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ঘটি বাটি বিক্রি করে দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা সহ চিকিৎসা করাতে বেসরকারি হাসপাতালের যেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোগ প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজ্য সরকার’’।


জেলায় জেলায় ডেঙ্গু প্রবল আকার নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, শাসক দলের নেতা-কর্মীরাও এখন দুষছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনকে।চিকিৎসকদের এক বড় অংশের মতে, যখন প্রতিরোধের ব্যবস্থা জোরদারভাবে নেওয়া দরকার ছিল, তখন ধারাবাহিকভাবে উদাসীনতা দেখিয়ে গিয়েছে প্রশাসনের। ডেঙ্গুর প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যান কিছুতেই সামনে আনা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসাধীনের সংখ্যা এই মুহূর্তে কত, তার পূর্ণ হিসাবও নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে যে ডেঙ্গুর তথ্য জানানোর কথা, তাও রাজ্য সরকার জানায়নি বলে অভিযোগ। কিন্তু তথ্য আর চাপা দেওয়া যাচ্ছে না। একের পর এক মৃত্যু মিছিলের খবর এখন সামনে আসছে।

Comments :0

Login to leave a comment