STATE FCI RATION

চাল নেই, রেশন চালাতে এফসিআই’র কাছে কাতর আরজি রাজ্যের

রাজ্য

  কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে রেশন চালাতে এফসিআই’র কাছে চালের জন্য হাত পাতছে রাজ্য সরকার!
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার প্রায় ৬ কোটির ওপর রেশন গ্রাহকদের চালের জন্য এফসিআই’কে চিঠি দিয়েছে খাদ্য দপ্তর। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য ১লক্ষ ৯৮ হাজার টন চাল দ্রুত যাতে এএফসিআই দেয় তারজন্য চিঠিতে অনুরোধ করেছে রাজ্য সরকার। খাদ্য দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়,‘‘ গত ১০ বছরে রাজ্যের রেশনের চালের জন্য খাদ্য দপ্তর এফসিআই’র কাছে হাত পাতছে, এমন নজির নেই। বিশেষ করে রাজ্য ধান সংগ্রহের মরশুমে চাল চাওয়া কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা।’’ 
গত বৃহস্পতিবারই তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সভায় বক্তৃতা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মনে আছে, আগে ফুড কর্পোরেশন(এফসিআই) রেশনে ভাঙা, ভাঙা চাল দিত। অর্ধেক পাথর মিশিয়ে দিত। আর আমরা এখন ৫৪ লক্ষ টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের বিপরীত পথে হেঁটে এখন চালের জন্য সেই এফসিআই-কে চিঠি দিচ্ছে তাঁর সরকারই। 
রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব দু’দিন আগে এফসিআই’র জেনারেল ম্যানেজারকে চাল চেয়ে চিঠি দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরে দেরিতে বর্ষা আসায় ধান কাটার কাজে দেরি হচ্ছে। তারফলে গত বছর যে গতিতে সরকার ধান কিনতে পেরেছিল, এবার তা হচ্ছে না। যার পরিণতিতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশনে চালের মজুত ভাণ্ডার অপর্যাপ্ত  থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 
ধান কেনার বিপুল ঘাটতির প্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার এফসিআই’কে চিঠি দিয়ে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার রেশন গ্রাহকদের জন্য ১ লক্ষ ৯৮হাজার টন চাল চেয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই চাহিদামতো চাল যাতে ‘সেন্ট্রাল পুল’এ পৌঁছে যায় তারজন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ, হিসাবে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে চাল আসার পর রেশনের ডিস্ট্রিবিউটার, ডিলার হয়ে রেশন দোকানে পৌঁছাতে এক মাস সময় লাগবে। তাতে জানুয়ারি মাসে চলে আসবে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের রেশন চালু রাখতে ডিসেম্বর মাসেই যাতে চাহিদামতো চাল চলে তারজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে বিবেচনার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য এখন থেকে চালের জন্য এফসিআই’র দ্বারস্থ হওয়ার আগেই অবশ্য চলতি সময়েও রাজ্যের খাদ্য দপ্তর রেশনে যে চাল দিচ্ছে তা এফসিআই থেকেই। খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এফসিআই থেকে ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার টন চাল এফসিআই রাজ্যের খাদ্য দপ্তরকে পাঠিয়েছে। সেই চাল পাঠানোর কারণ অবশ্য ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পে একসময় রাজ্য সরকারই নিজের ভাণ্ডার থেকে চাল কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দিয়েছিল। সেই চাল পাঠিয়ে দিয়ে হিসাব মিটিয়েছে এফসিআই। এখন রেশনে যে চাল দেওয়া হচ্ছে তা আসলে এফসিআই’র পাঠানো। এফসিআই যে চাল দিয়েছে তাতে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে যাবে বলে মনে করেছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা।  কিন্তু তার পরের মাস, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে রেশন চালাতে নতুন করে চাল চাওয়ার ঘটনা এবার প্রথম বলে মানছেন খাদ্য দপ্তর। 
এবারে দেরিতে বর্ষা নামার কারণে ধান উৎপাদনে যে দেরির কথা বলা হয়েছে তাকে অস্বীকার করছে না রাজ্যের কৃষি দপ্তর। সাধারণভাবে এরাজ্যে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু হয়ে যায়। এবার তার কিছুটা দেরি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ‘‘ দেরি হলেও এখনই রাজ্যের ধান উৎপাদনের জেলাগুলিতে ৪০ শতাংশের ওপর ধান কাটা কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা আরও বাড়বে।’’ কিন্তু তারপরেও এরাজ্যে ধান সংগ্রহে সেভাবে গতি আসেনি। 
চলতি ধান সংগ্রহের মরশুম গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে। চলতি বছরে রাজ্যের ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৭০ লক্ষ টন। কিন্তু গত ২৩ দিনে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার টন ধান কিনতে পেরেছে। খাদ্য দপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, গত বছর এই নভেম্বর মাসের এই সময়ের মধ্যেই রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টনের বেশি ধান কিনে নিয়েছিল। এবার ধান কেনার পরিমাণ এতই কম দেখে আতঙ্কিত খাদ্য দপ্তর আগাম এফসিআইকে চাল চেয়ে চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছে।  
এমন নয় যে খোলা বাজারে ধানের দাম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও খুব চড়া থাকার কারণে কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং উলটোটাই নভেম্বর মাসে ধান উঠতে শুরু করার এই সময়ও খোলা বাজারে ফড়েদের কাছে কৃষক এক বস্তা (৬০ কেজি) ধান ১১০০ টাকায় বিক্রি করছে। যার অর্থ চলতি বছরের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে কুইন্টালে প্রায় ৩৫০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে কৃষকের ধান। 
ফলে ধান ওঠার পর কৃষক অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ সরকারি ধান কেনার শিবিরে নেই কৃষক। আসলে এতদিন সরকারি ধান কেনার শিবির নিয়ন্ত্রণ করতো ফড়েরা। রেশন দুর্নীতির আবহে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তারের পর চলতি মরশুমে ধান বিক্রি নিয়ে ফড়েদের দাপট নেই। যে কারণেই ধান সংগ্রহে ঘাটতির আশঙ্কা।

Comments :0

Login to leave a comment