কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর পাওয়া গেছে তবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে দাবি নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে বিক্ষিপ্ত হিংসার মধ্যে ভোট হল শুক্রবার। সেই সঙ্গে এদিন দেশের ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি লোকসভা আসনে ভোট হয়। শুধু হিংসার ঘটনা ঘটছে শুধুমাত্র কোচবিহারে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৭৭.৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রথম দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে ১০২আসনে ভোটদানের হার ৫৯.৭ শতাংশ।
বড় কোন ঘটনা না ঘটলেও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার সম্মুখীন হলেন আলিপুরদুয়ার জেলার ভোটাররা। শুক্রবার সকাল থেকে আলিপুরদুয়ার, ভাটিবাড়ি, ফালাকাটা বিভিন্ন জায়গায় ইভিএম খারাপের জন্য বুথ গুলিতে ভোটারদের ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। সকাল ৭টায় ভোট শুরু হবার কথা থাকলেও কোথাও ৮টা আবার কোথাও ৯ টায় ভোট শুরু হয়। তাতে কোনো কোনো জায়গায় ভোটারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। শহর এবং শহর সংলগ্ন বুথ গুলিতে ভোটারদের ভিড় থাকলেও চা বাগান গুলিতে ভোটারদের সংখ্যা ছিলো একদম কম।
এক চা শ্রমিক জানায় বাগান বন্ধ হবার জন্য বেশীরভাগ শ্রমিকরা বাইরে কাজ করতে গেছেন। তাদের ভোট দেবার জন্য আসার মতো অবস্থা ছিলো না। প্রশাসন সুত্রে জানা যায় বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ভোট আলিপুরদুয়ার ভোট পড়েছে ৭৫.৫৪ শতাংশ।
গত বারের ২.৫ লাখ ভোটে জেতা বিজেপি এবার অনেক বুথে এজেন্ট বসাতে পারেনি। মনোজ টিজ্ঞার বাড়ি সংলগ্ন তুলসিপাড়া চা বাগানে বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। এছাড়াও চা বাগান নিয়ে জেলার অনেক জায়গায় এজেন্ট দিতে পারেনি। মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রথম দফার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল তার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। এদিন দেখা যায়নি গতবারের লোকসভার বিজয়ী প্রার্থী জন বার্লাকে।
ভোটের দিন অশান্ত হল কোচবিহারে। কোথাও ভোট দিতে গিয়ে মহিলার গাল চাকু দিয়ে চিরে দেওয়া হল, কোথাও দূর থেকে ছোঁড়া পাথরে থেঁতলে গেল ভোটারের চোখ, আবার মন্ত্রী উদয়ন গুহ নিজের গড়েই মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে ঘেরাও হলেন। পুলিশের সাহায্য নিয়ে এলাকা ছাড়তে হয় মন্ত্রীকে।
কোচবিহার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে ১১২ কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সব বুথেই ওয়েবকাস্টিং এর ব্যবস্থা করেছিল। শ্যাডো জোন (যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যহত হতে পারে)ছিল অন্তত ১০% বুথে। এই কেন্দ্রে ৩২৮ জন মাইক্রোঅবজার্ভার ও ৪৭ টি কুইক রেসপন্স রেখেও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে সফল হতে পারলো না! দিনভর অশান্তির কেন্দ্রবিন্দুতে রইল কোচবিহার কেন্দ্র!
তৃণমূলের সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পেল না সাধারণ ভোটারও! শিতলকুচির ছোটশালবাড়িতে ভোট দিতে গিয়ে চোখে এসে লাগলো পাথর! থেঁতলে গেল চোখ! অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
অন্য দিকে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু তৃণমুল কর্মী বুথে যেতে বাধা পেয়ে পথ অবরোধ করেন। অভিযোগের তির ছিল বিজেপির দিকে।
ভোটের আগের দিন রাত থেকেই কোচবিহার কেন্দ্রর দিনহাটা ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের তুফানগঞ্জে বিজেপি ও তৃণমূল হিংসায় জড়িয়ে পড়ে। বুথ অফিস পুড়িয়ে দেওয়া থেকে হিংসা ও হানাহানির খবর আসছিল প্রতি ঘন্টায়! দিনহাটার অনেক জায়গাতেই রাতে বোমাবাজি হয়। কোথাও অভিযুক্ত বিজেপি আবার কোথাও অভিযুক্ত তৃণমূল। কোচবিহারের স্পর্শকাতর বুথগুলিতে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিল শর্মাকে ঘটনার পর কোথাওই দেখা যায় নি।
বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হামলা ও পালটা হামলার ঘটনা ঘটে। ভেটাগুড়ির খারিজা বালাডাঙা এলাকায় রাতভর বোমাবাজি চলে। ভোটের দিন সকালে পুলিশ একটি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮/২৬৯ বুথে নাসরিনা বিবি, গীতা বর্মন সহ প্রায় জনা তিরিশেক ভোটার ভোটার কার্ড নিয়ে এসেও ভোট দিতে পারেন নি। গত পঞ্চায়েত ভোটেও এরা সবাই ভোট দিয়েছিলেন। অভিযোগ এরা এলাকায় নেই বলে শাসকদলের লোকেরা নাম কাটিয়ে দিয়েছে!
এদিন মাথাভাঙা-১ ব্লক অফিসে প্রায় ১০০ অতিরিক্ত(রিজার্ভ) ভোট কর্মীদের তালাবন্ধ করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠলো বিডিও-র কর্মীদের বিরুদ্ধে! সাংবাদিকরা খবর পেয়ে বিডিও অফিসে গেলে প্রায় তিন ঘন্টা পর তালা খুলে ভোটকর্মীদের বাইরে নিয়ে আসা হয়। আটক থাকা ভোট কর্মী কৌশিক সরকার,অভিজিৎ সরকার বলেন,আমাদের সঙ্গে পশুর মত ব্যবহার করা হয়েছে।
মাথাভাঙা বিধানসভা কেন্দ্রের পাটাকামারি জুনিয়ার হাইস্কুলের ১৩৯ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয় হয়ে প্রার্থীদের এজেন্টদের বুথ কেন্দ্রের ভেতরে বসতেই দেয় নি। সব দলের এজেন্টরা বুথের বারান্দায় বেঞ্চ পেতে বসতে বাধ্য হয়েছেন!
ছিটমহলের বাসিন্দারা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে মশালডাঙা, নলগ্রাম,জোংরার মত সাবেক ছিটমহলের যেসব যুবকেরা ভিন রাজ্যে কাজের জন্য গিয়েছিল তাদের সিংহভাগ বাড়ি আসে নি ভোট দিতে।
West Bengal Election 2024 Phase 1
পাথরে ফাটল চোখ, কমিশনের দাবি ভোট শান্তিপূর্ণ
×
Comments :0