অনন্ত সাঁতরা: ডানকুনি
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির বিপদের আঁচ ভারতবাসীর জীবনের ওপরেও এসে পড়বে। শনিবার ডানকুনিতে সিপিআই(এম)’র একটি সভায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আমরা বামপন্থীরা দুনিয়ার সর্বত্র যুদ্ধের বিরোধিতা করি বলে কেউ কেউ বিদ্রুপ করে। কিন্তু উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বিশ্বের অর্থনীতিতে, তেলের দামে কীরকম প্রভাব পড়েছিল, জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তা সবার জানা আছে। পশ্চিম এশিয়ায় এখন যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তাতেও ভারতবাসীর জীবনে বিপদ আসতে পারে। মোদী সরকার চুপ করে থাকতে পারে, কিন্তু আমরা কমিউনিস্টরা সব জেনেও চুপ করে বসে থাকতে পারি না, আমরা যুদ্ধের বিরোধিতা করি।
শনিবার হুগলীর ডানকুনিতে বিনোদিনী নাট্যমন্দিরে সিপিআই(এম) হুগলী জেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি সভা অনুষ্ঠিত করে এই ডানকুনি শহরেই পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৭তম সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করা স্বেচ্ছাসেবকদের সংবর্ধনা দিয়েছে। সভায় মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। সভা পরিচালনা করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হুগলী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য মনোদীপ ঘোষ, পার্টি নেত্রী মিতালি কুমার সহ জেলার পার্টি নেতৃবৃন্দ। সভার শুরুতে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের ডানকুনি লালনিয়া শাখার শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উগ্র দক্ষিণপন্থা, সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধোন্মাদনার বিপদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও দক্ষিণপন্থীদের বিপদের উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, মোদী ও মমতা ব্যানার্জি গরিব মানুষের অধিকারের লড়াইকে দুর্বল করতে চাইছেন। চাঞ্চল্যকর ও জনমোহিনী কিছু বিষয়ের দিকে নজর ঘুরিয়ে, ধর্ম ভাষা জাতির নামে মানুষকে ভাগাভাগি করে তারা জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে চাপা দিতে চাইছে। এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়েও মানুষের সেই প্রয়োজনীয় কথাগুলিই আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলবো, শাসকের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়বো। মানুষের কাছে আমাদের কথা বলতেই হবে। সম্মিলিতভাবে একমুখী সমভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে কাজ করলে অসাধ্য মনে হওয়া কাজও করা যায় তা অতীতেও বহুবার দেখা গিয়েছে।
তিনি বলেন, দক্ষিপন্থীদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলায় কমিউনিস্টদের নিকেশ করা, সেটা কিষেনজিকে দিয়ে হোক, তৃণমূলকে দিয়ে হোক, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দিয়ে হোক। তবুও বামপন্থীদের ওরা শেষ করতে পারেনি। আমরা ব্রিগেডে সমাবেশ করেছি, আমাদের ভাষ্য প্রচার করেছি। বামপন্থীদের এত আক্রমণ করার পরেও বিজেপি, তৃণমূল এবং তাদের তাঁবেদার মিডিয়া কেউই বামপন্থীদের অস্বীকার করতে পারছে না। প্রতিটি মহল্লায় বামপন্থীদের জনভিত্তিকে মজবুত করার জন্য নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে।
সেলিম বলেন, আমাদের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলো কেন, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়েছে কেন, মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা ও প্রাণহানি হলো কেন, কারা গুজব এবং উসকানি রটালো এবং কেন তাদের শাস্তি হলো না, এই সব প্রশ্ন তো আমাদের করতেই হবে। বিজেপি এবং তৃণমূল মানুষকে সত্যের থেকে দূরে রাখতে চায়, মিথ্যার কারবারে বাজার গরম রেখে রাজনীতি করতে চায় তারা এতে এগুলো অপছন্দ করছে। মোদী দেশের বিকাশের প্রচার করছেন, কিন্তু দেশের শিল্পের বিকাশ হয়নি। মমতা ব্যানার্জি প্রতি বছর শিল্প সম্মেলন ঘিরে প্রচার করেছেন, কিন্তু শিল্পায়ন হয়নি, কর্মসংস্থান হয়নি। এই বিষয়গুলির থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে দেবো না।
শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ডানকুনিতে চার দিন ধরে রাজ্য সম্মেলন হয়েছে। এই সম্মেলনে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠনের পর্যালোচনা করেছি, আত্মসমালোচনাও করেছি এবং আগামীর কাজ নির্ধারণ করেছি। দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং এরাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত গণতন্ত্র ধংসকারী শক্তির বিরুদ্ধে সেই লড়াইয়ের কাজ আমাদের করতে হবে। রাজ্যে বিজেপি-তৃণমূল মেরুকরণকে সফল হতে দেওয়া যাবে না। এই মেরুকরণের রাজনীতিকে হারাতে না পারলে বাংলার দুর্দশা আরও বাড়বে। তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং তার জন্য সিপিআই(এম)’র নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
সভায় অভ্যর্থনা সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি মিতালি কুমার ২ লক্ষ টাকার চেক পার্টির রাজ্য কমিটির তহবিলের জন্য মহম্মদ সেলিমের হাতে তুলে দেন। সভায় স্বেচ্ছাসেবক ইনচার্জদের হাতে স্মারক তুলে দেন মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, মিতালি কুমার সহ নেতৃবৃন্দ। সভাপতির ভাষণে দেবব্রত ঘোষ বলেন, পার্টির রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে আমাদের জেলার সর্বস্তরের মানুষ সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এই সম্মেলনকে সফল করতে স্বেচ্ছাসেবকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আগামী দিনে লড়াই সংগ্রামে তাঁদের আরও বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
Comments :0