Pahalgam Tarigami

সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতির উপরে আঘাত সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্যপূরণ করবে

জাতীয়

হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের রাজনীতি নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে। এই সময়ে যদি আমরা সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি রক্ষা করতে না পারি তাহলে সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে যাবে। সেটা হতে দেবেন না। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরেই দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে যেভাবে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা শুরু হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই আবেদন করেছেন সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কুলগামের বিধায়ক মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি। 
অনন্তনাগের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই জখম পর্যটকের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এসেছিলেন তারিগামি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্টিনেতা গুলাম নবি মালিক। গুজরাট এবং তামিলনাডুর দুই পর্যটক এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা অতিথিদের উপরে হামলা। নিরস্ত্র মানুষদের উপরে হামলা। তিনি বলেন, গোটা দেশের মানুষের কাছে আমরা কাশ্মীরিরা এই কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা এই হত্যাকাণ্ড করেছে তারা কখনও আমাদের হতে পারে না। যাঁরা এখানে প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের লাশ এখান থেকে গেছে, তারাই আমাদের। যে যা খুশি বলুক, তাঁরাই আমাদের থাকবেন। 
উগ্রপন্থীরা শুধুমাত্র পর্যটকদের উপরে নয়, এখানের মানুষের রুজিরুটির উপরে হামলা করেছে। এটা এখানের মানুষ বোঝে না এমন নয়। এখানের সাধারণ মানুষ কী করতে পারে? আমরা অসহায়। অনেক বছর ধরেই কাশ্মীরের মানুষ অসহায়। আমার অনেক কবরস্থান দেখেছি। আর চাই না। এখন অনেকেই বলছেন, হিন্দু মরেছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তারা কে হিন্দু, কে মুসলমান কোনোটার শিক্ষাই নেয়নি। ওই সন্ত্রাসবাদীদের হিন্দুদের প্রতিও প্রেম নেই, মুসলিমদের প্রতিও প্রেম নেই। তাদের শুধু নৃশংসতার প্রতি ভালোবাসা। 
অনন্তনাগ দীর্ঘ সময় ধরেই সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার থেকেছে। এদিন সেই ইতিহাস তুলে ধরেছেন তারিগামি। তিনি বলেন, এই জেলার সবথেকে বড় মীরওয়াইজ (ধর্মগুরু) ছিলেন কাজী নিসার সাহেব। তিনি তো মুসলমানই ছিলেন। উগ্রপন্থীরা তো তাঁকে হত্যা করেছিল। নব্বইয়ে পুরো কাশ্মীরের মীরওয়াইজ ফারুক সাহেবকে হত্যা করা হয়েছিল। মৌলবী সঈদ যিনি কাশ্মীর থেকে প্রথম সাংসদ ছিলেন। তাঁকেও হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাঁকেও হত্যা করা হয়েছিল। আব্দুল গণি লোনকেও ছাড় দেয়নি উগ্রপন্থীরা। কত কত উদাহরণ দেব, যে সব নিরীহ মানুষদের উগ্রপন্থীরা হত্যা করেছে। এই এলাকাতেই আমাদের কমরেড গুলাম নবি গনাইকে দিনদুপুরে হত্যা করা হয়েছিল। এরা সবাই তো মুসলমান ছিলেন। এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কে হিন্দু কে মুসলমান! অপরাধী হিন্দু হোক বা মুসলমান- তার একটাই পরিচয় সে অপরাধী। হত্যাকারীর কোনও ধর্ম, জাতির পরিচয় হয় না। সে হত্যাকারী এটাই তার পরিচয়। খুনি খুনিই- যে বেশই ধারণ করুক না কেন। 
তারিগামি এরপরে কাশ্মীরে সৌভ্রাতৃত্বের দীর্ঘ অতীতের উদাহরণও তুলে ধরে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সেই কাশ্মীরে এখানে ঘৃণার বীজ বপন করা হবে, সেটা আমরা কোনোভাবে মেনে নেব না। তিনি বলেন, এখানের সাধারণ মানুষ পর্যটকদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। জখমদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করেছেন। স্থানীয় যুবকরা আহতদের জন্য রক্ত দিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে অন্য সকলে প্রাণপাত চেষ্টা করেছেন আহতদের সুস্থ করার জন্য। কোনও দয়া করেছেন আমি বলছি না। মানবিকতার জন্যেই করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন। এটাই কাশ্মীরিদের প্রকৃত চেহারা। তিনি বলেছেন, এই জন্যেই আমি জম্মুর মানুষের কাছে, গোটা দেশের মানুষের কাছে আবেদন করছি এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এটা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। গোটা দেশের মানুষকে এক হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতির উপরে যদি আঘাত আসে তাহলে যারা এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে তাদের লক্ষ্যপূরণ হবে। সেটা হতে দেবেন না।
 

Comments :0

Login to leave a comment