সিরিয়ার সরকার এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং এর মিত্র দলগুলির মধ্যে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তীব্র লড়াইয়ের পরে, যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। ইতিমধ্যেই সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদ সিরিয়া থেকে পালিয়ে গেছেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণক এ খবরের কথা জানিয়েছে যে, আসাদ তার পদত্যাগের মাধ্যমে তার প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী বাহিনীর কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি তদারকি করার জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যার ১৪ মাস পর এবং হেজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক সপ্তাহ পর এ ঘটনা ঘটল। ২০১১ সালে শুরু হওয় যুদ্ধ এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় সিরিয়া রাষ্ট্র বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। সিরিয়ান আরব আর্মি (সরকারী রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী) বড় লড়াইয়ের পরে কখনই পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এবং হামা, হোমস এবং আলেপ্পোর প্রধান শহরগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় ইজরায়েলি বোমাবর্ষণ সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে।
লেবাননে ইজরায়েলি আগ্রাসন এবং হেজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেও হেজবোল্লাহর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে, যা ইজরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ‘যুদ্ধবিরতি’ চুক্তিকে বাধ্য করেছে। এটা প্রমাণ করছে যে হেজবোল্লাহ হামা থেকে দামেস্ক সড়কে যে কোনও সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে সিরিয়ার সরকারকে রক্ষা করার জন্য আবার সিরিয়ায় প্রবেশের মতো অবস্থানে ছিল না। সিরিয়ায় ইরানের সাহায্য, গুদাম ও সামরিক স্থাপনায় হামলা এবং ইরানের ওপর ইজরায়েলের হামলা সিরিয়ার সরকারকে রক্ষার জন্য ইরানি বাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে। হেজবোল্লাহর দুর্বলতা এ অঞ্চলে ইরানের ভূমিকাকেও দুর্বল করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে প্রায় তিন বছরের সংঘাত নিশ্চিতভাবেই সিরিয়াকে দামেস্কের সুরক্ষার জন্য বা লাতাকিয়ায় রাশিয়ার নৌঘাঁটির সুরক্ষার জন্য আরও রাশিয়ান সাহায্যের আহ্বানের পথকেও রুদ্ধ করেছে। ফলে সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে সিরিয়া সরকারের আর ইরান ও রাশিয়ার সামরিক মিত্র ছিল না। ২০১৭ সালে আল-কায়েদা থেকে গঠিত হায়াত তাহরির আল-শাম তুরস্ক থেকে উইঘুরদের কাছে অন্যান্য সংখ্যক আল-কায়েদা প্রভাবিত সন্ত্রাসীদের সাথে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করেছিল - এবং গত দশকে ইদলিবে তাদের বাহিনীও গড়ে তুলেছে। এরা তুরস্ক থেকে সাহায্য ও সমর্থন পেয়েছে, তবে গোপনে ইজরায়েল থেকেও পেয়েছে। এই তথ্যটি তুরস্কের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
এইচটিএস নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার সিরিয়ার সামাজিক সংখ্যালঘুদের বিষয়ে কী করবে? এইচটিএস নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গোলান মালভূমি ও ইজরায়েল নিয়ে কী করবে? নতুন এইচটিএস-সরকার কুনেইত্রায় ইজরায়েলি সামরিক আগ্রাসনকে কীভাবে দেখবে? এখানেই গল্পের শেষ নয়। আইসিস-এর পাশাপাশি উত্তরের কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে দেশটিতে আরও অনেক অস্থিরতা দেখা দেবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। ইতিমধ্যে তুর্কি সমর্থিত গোষ্ঠীগুলি মানবিজে কুর্দি ওয়াইপিজি (পিপলস ডিফেন্স ইউনিটস) এবং পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মার্কিন বাহিনী ইতিমধ্যে পূর্ব সিরিয়ায় উপস্থিত, যেখানে তারা বলেছে যে তারা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে বাফার হিসাবে থাকবে (এবং তাই তেলের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে)। এদিকে ইজরায়েলও গোলান বাফার জোন দখলের ঘোষণা করেছে। এইচটিএস নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তা নিয়ে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে উত্তেজনাও শুরু হওয়ার মুখে।
তবে বর্তমানে আসল ভয় হল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সাথে কী ধরণের আচরণ করা শুরু করবে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, তা নিয়ে। ইরাকের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ায় ঢুকবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এর বেশিরভাগই নির্ভর করে দামেস্কের সাইয়িদা জয়নব মাজারের মতো জায়গাগুলির কী ঘটে তার উপর।
fall of Bashar al-Assad’s Syria
সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং পশ্চিম এশিয়ায় তার প্রভাব
×
Comments :0