Pen down

হুমকি উড়িয়েই কর্মবিরতিতে সরকারি কর্মীরা

রাজ্য

সরকার উপস্থিতির তালিকা নিয়েছে। কর্মচারীরা সরকারের কাছে উজাড় করে উপস্থিতি জানান দিয়েছে। কিন্তু দপ্তরে এসে নড়েনি একজন কর্মচারীর কলম। কম্পিউটারের ‘কী বোর্ড’কে এদিন কার্যত স্তব্ধ করে রাজ্যজুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক কর্মচারীরা। মঙ্গলবারের কর্মবিরতি আরও ব্যাপক আকার নিতে চলেছে।
ধর্মঘট ভাঙতে এতদিন যে বিজ্ঞপ্তি জারি করত নবান্ন। গত রবিবার কর্মবিরতি ঠেকাতে সেই ভয় ধরানো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্যের অর্থ দপ্তরের প্রধান সচিব। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তির হুমকি উড়িয়ে দিয়ে কর্মবিরতিতে শামিল কর্মচারীরা স্লোগান দিয়েছেন, ‘‘সব রাজ্য ডিএ দেয়/ পশ্চিমবঙ্গ হায়, হায়।’’
বকেয়া ডিএ’র দাবিতে ক্রমশ গোটা রাজ্যে প্রসারিত হচ্ছে কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আদালত কর্মচারী থেকে শুরু করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত কর্মচারী জোট বাঁধছে বকেয়া ডিএ আদায়ের লড়াইয়ে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় ছুঁড়ে দেওয়া ডিএ প্রদানে আর যে কর্মচারীদের মন ভেজানো যাবে না তা এখন বোঝা যাচ্ছে। ডিএ’র দাবিতে শহীদ মিনারের আন্দোলন এদিন ২৫ দিনে পড়েছে। একইসঙ্গে অনশন পড়েছে ১১ দিনে। এদিন যে স্বতঃস্ফূর্ত মেজাজে রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি হয়েছে, মঙ্গলবার তা আরও জমাট বাঁধতে চলেছে। খাদ্য ভবনে এদিন কর্মচারীরা স্লোগান তোলে, ‘‘নবান্নের ১৪ তলা/ ডিএ মারার পাঠশালা/ জেনে রাখা দরকার।’’ সমবেত জবাব আসে, ‘‘চুরি করেছে, চুরি করেছে/ আমার ডিএ সরকার।’’
নবান্ন’র সান্ত্বনা কর্মচারীদের উপস্থিতির হিসাবে। আর কর্মচারীদের লড়াইয়ে উপস্থিত হয়ে খাতায় স্বাক্ষর করে ডিএ নিয়ে সরকারের দশকব্যাপী বঞ্চনার জবাবে কাজ না করা। এদিন যেভাবে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার পঞ্চায়েত দপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতে কর্মচারীদের একরোখা মেজাজ পাওয়া গেছে তাতে আগামীদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বহুদিন পরে এরাজ্যের মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের আন্দোলনের কাছে নতুন আশা সঞ্চার হতে চলেছে। কোনও সংগঠন নয়, কর্মচারী ঐক্য জিন্দাবাদের স্লোগানে টানা দু’দিন কর্মবিরতি এরাজ্যে নজির তৈরি করতে চলেছে।   
রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে কলকাতার খাদ্য ভবন, ক্যামাক স্ট্রিটের শিল্প সদনে এদিন পৌঁছেছে কর্মবিরতির ডাক। কর্মবিরতি কতটা সফল, তার প্রমাণ এদিনই পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্ডাল ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কর্মবিরতিতে শামিল হওয়া কর্মচারীদের জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘অফিসে উপস্থিত হয়ে নিজের কাজ করতে কর্মচারী অস্বীকার করছেন। ফলে জাতিগত শংসাপত্র, রূপশ্রী প্রকল্প সহ সরকারি কাজে মানুষ এসে সুবিধা পাচ্ছে না।’’ সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হয় তারজন্য পঞ্চায়েত মন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে এদিনই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে এদিনই লেখা টাটকা এই চিঠি কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছে গোটা রাজ্যজুড়ে মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণার সিদ্ধান্তে কর্মচারীদের কর্মবিরতির ডাক কতটা সফল। এদিন রাজ্যে কর্মবিরতির আন্দোলনে আধিকারিকদেরও তরফ থেকে সমর্থনের খবর এসেছে। কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়া কর্মচারীদের কোনও দপ্তরেই কাজ করানোর জন্য আধিকারিকদের তরফ থেকে চাপ দেওয়া হয়নি। খাদ্য ভবন সূত্রের খবর, কর্মবিরতির ফলে প্রায় ৯০শতাংশ কর্মচারী এদিন কোনও কাজ করেনি। কাজ বয়কট করে এদিন খাদ্য ভবনে ব্যাপক বিক্ষোভ সভায় শামিল হয়েছিলেন কর্মচারীরা। ক্যামাক স্ট্রিটের শিল্প সদন, নব মহাকরণ সহ কলকাতার ওপর রাজ্যের সব দপ্তরেই এদিন কর্মবিরতির পাশাপাশি বকেয়া ডিএ’র দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কর্মচারীরা।
খাদ্য ভবনে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মচারী সংগঠনের তরফ থেকে কর্মবিরতির বিরোধিতা করে কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ব্যাপক সংখ্যায় কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণের ফলে তৃণমূল কর্মচারী সংগঠনের কোনও প্রভাবই পড়েনি। বকেয়া ডিএ’র দাবিতে কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া কর্মচারীদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক না কেন, বকেয়া ডিএ’র আন্দোলনে রাজ্যের কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ভিড় বাড়ছে।’’
এদিন সরকারি দপ্তরের পাশপাশি রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়গুলিতেও কর্মবিরতির প্রভাব পড়ে। দু-একটি জায়গায় প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি যোগ দেওয়া শিক্ষকদের ওপর চাপ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে নদীয়ার নবদ্বীপ কলেজে কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়া অধ্যাপকদের কলেজ ক্যাম্পাসে রাত পর্যন্ত আটকে রাখে বহিরাগত তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। 

ক্যাপশন: খাদ্যভবনে কর্মবিরতি

Comments :0

Login to leave a comment